অবৈধ পথে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার এক তরুণের নিহতের খবর পাওয়া গেছে। তবে স্বজনদের দাবি, তাকে হত্যা করে সাগরে ভাসিয়ে দেয়া হয়েছে। ছেলের লাশ ফিরে পেতে গ্রামের বাড়িতে আহাজারি করছেন স্বজনরা। আশপাশের লোকজন প্রতিনিয়ত ওই বাড়িতে ভিড় করছেন। সেইসঙ্গে জড়িতদের বিচার চাইছেন তারা।
এ ঘটনায় বাংলাদেশি এক দালালকে শনিবার,(২০ ডিসেম্বর ২০২৫) সন্ধ্যায় আটক করে স্বজনরা পুলিশে দিয়েছে বলে জানান উল্লাপাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রুপু কর। নিহত রাকিব হোসেন স্বাধীন (২৩) উপজেলার বড়হর ইউনিয়নের ইসলামপুর ভুতগাছা গ্রামের গোলাম কিবরিয়া ফিরোজের ছেলে। আটক আবুল কালাম আজাদ একই উপজেলার পূর্নিমাগাতি ইউনিয়নের ঘিয়ালা গ্রামের বাসিন্দা।
স্বাধীনের বাবা ফিরোজ বলেন, ‘দালাল কালামের বড় ছেলে সাদ্দাম আগে থেকেই ইতালি থাকেন। এর মধ্যে তার ছোট ছেলে জাকারিয়ার সঙ্গে আমার ছেলে স্বাধীনকেও ইতালি পাঠানোর প্রস্তাব দেন। রাজি হলে কালামের দুই মেয়ের জামাই (ঢাকায় অবস্থানরত) উল্লাপাড়ার বন্যাকান্দি গ্রামের ইউনুস আলী ও মধ্যবড়হর গ্রামের মোন্নাফ আলীর সঙ্গে কথা হয়। এরপর কালামকে ২৫ লাখ টাকা দেই। চলতি বছরের ২২ মে (গত) জাকারিয়া ও স্বাধীন ইতালি যাওয়ার জন্য ঢাকা বিমানবন্দর থেকে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন বলে জানান ফিরোজ’।
তিনি বলেন, ‘তাদের প্রথমে ভারতের চেন্নাই, এরপর পর্যায়ক্রমে দুবাই, শ্রীলঙ্কা, মিশর ও সর্বশেষ লিবিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্যে স্বাধীন আটক হয়েছে এবং কারাগারে আছে বলে দু’দফায় আরও ১০ লাখ নেয় কালাম।’ তবে শ্রীলঙ্কায় পৌঁছার পর কালাম তার ছেলে জাকারিয়াকে স্বাধীনের কাছ থেকে আলাদা করে দেন বলে দাবি ফিরোজের।
তিনি বলেন, ‘১২ নভেম্বর (গত) ১২২ জন যাত্রী নিয়ে একটি ট্রলার লিবিয়া থেকে সাগর পথে ইতালি পাঠানোর চেষ্টা করেন দালালরা। কিছুদূর যাওয়ার পর ট্রলারটি আংশিক ডুবে যায়। এ সময় অধিকাংশ যাত্রীকে মারধরের পর হত্যা করে সাগরে ভাসিয়ে দেয়া হয়। ‘বিষয়টি জানার পর খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, নিহতদের মধ্যে আমার ছেলে স্বাধীনও রয়েছে।’
তিনি বলেন, ট্রলারডুবির ঘটনায় বেঁচে যাওয়াদের মধ্যে মাদারীপুরের সাতজন ১৮ ডিসেম্বর (গত) দেশে ফিরেছেন। ওইদিন বিমানবন্দরে গিয়ে তাদের কাছ থেকে স্বাধীন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত হন তিনি। ফিরোজ বলেন, ‘এ ঘটনার পর কালামকে অনেক বলেছি, আমার ছেলের লাশটা অন্তত এনে দেও। কিন্তু তিনি কোনো কর্ণপাত করেনি। বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজখবর নিতে গিয়ে আরও দুই থেকে তিন লাখ টাকা খরচ করেছি।
‘কিন্তু ছেলের কোনো হদিস পাইনি। শনিবার,(২০ ডিসেম্বর ২০২৫ নিজ বাড়ি থেকে কালামকে আটক করেছি। তাদের স্বজনরা কেউ এ বিষয়ে দায়িত্ব না নেয়ায় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছি।’ ছেলের ছবি বুকে নিয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে স্বাধীনের মা নারগিস খাতুন বলেন, ‘স্বাধীন এইচএসসি পাশ করে বিএ ভর্তি হয়েছিল। কালাম নিজেও ১৫ বছর ইতালিতে ছিলেন। তার বড় ছেলে সাদ্দাম এখনও ইতালিতে আছেন।
‘স্বাধীন ও কালামের ছোট ছেলে জাকারিয়া দুজন বন্ধু। জাকারিয়াও ইতালি যাবে তাই ছেলেকে পাঠাতে রাজি হয়েছিলাম। ওরা আমার ছেলেকে হত্যা করে সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে। তার লাশও শেষবার দেখতে পারলাম না।’ এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছেন স্বাধীনের মা নারগিস। শনিবার সন্ধ্যায় পুলিশ পরিদর্শক রুপু কর বলেন, ‘স্বাধীনের স্বজনরা আবুল কালাম আজাদকে আটকের পর পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।’