image
জয়পুরহাট : হিমাগারে আগুল স্তুপ -সংবাদ

মাইকিং করেও হিমাগার থেকে আলু নিচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা

রোববার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতিনিধি, জয়পুরহাট

বর্তমান বাজার দরে আলু বিক্রি করে ভাড়ার টাকাও পরিশোধ না হওয়ায় হিমাগারে আলু নিতে আসছেন না চাষি ও ব্যবসায়ীরা। বারবার নোটিশ করেও চাষি ও ব্যবসায়ীরা হিমাগারে আলু নিতে না আশায় আলু বের করতে সময় বেধে দিয়ে মাইকিং করেছেন কর্তৃপক্ষ। হিমাগারে আলু ঠান্ডা রাখার মেশিন বন্ধ করা হয়েছে মর্মে নির্ধারিত সময়ে আলু নিতে না আসলে পরবর্তীতে ওই আলুর দায় কর্তৃপক্ষ নেবে না। এছাড়া ভাড়ার টাকাও আদায় করা হবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, গত মৌসুমে জেলায় আলু চাষাবাদ হয়েছে ৪৩ হাজার ৫০০ হেক্টর। আলু উৎপাদন হয়েছে ৯ লাখ ৪৩ হাজার মে: টন। অতিরিক্ত জোগান এবং রফতানি কম হওয়ায় এবার নিম্ন দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। পাইকারি বাজারে গত ৫ বছরের তুলনায় এবার বিভিন্ন জাতের আলু বছর শেষে প্রতি বস্তা (৬৫ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ৩৭০-৩৮০ টাকা দরে। এই দাম এ মৌসুমের দামের চেয়ে সবচেয়ে কম।

ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী জেলার ১৯টি হিমাগারেই আলু সংরক্ষণ ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। চলতি মৌসুমে আলুর দাম কম থাকায় চাষি-ব্যবসায়ীরা হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করেন প্রায় আড়াই লাখ মে:টন। জেলায় খাবার আলুর প্রয়োজন ছিল ৪০ হাজার মে: টন। সিংহভাগ আলুই বিক্রি হয় বিভিন্ন জেলায়। বছর জুড়ে বাজারে দাম কম থাকায় হিমাগারে সংরক্ষণের ২০ শতাংশেরও বেশি আলু এখনও মজুদ আছে। অথচ বাজারে এখন নতুন আলুর আমদানি হয়েছে। আগের আলু থাকায় নতুন আলু কম দামে বিক্রি হচ্ছে। হিমাগার গেটে পুরাতন আলু ৫ থেকে ৬ টাকা কেজি আর নতুন আলু ২০-২১ টাকা দরে কেজি বিক্রি হচ্ছে। আবার আগের আলু থাকায় আগাম জাতের আলুতে চাষিরাও লোকসান গুনছেন।

আলু চাষিরা জানান, গত মৌসুমে ১ কেজি আলুর উৎপাদন খরচ পড়েছে প্রায় ১৭-১৮ টাকা। হিমাগারে সংরক্ষণ ভাড়া ৬.৭৫ টাকা এবং লেবার, সুতলি, পরিবহন ও লোড-আনলোড মিলে আরও ২ টাকা পড়েছে। সবমিলে প্রতি কেজিতে খরচ পড়েছে প্রায় ২৭ টাকা। বর্তমানে দাম মিলছে হিমাগার ভাড়াসহ কেজিতে ৫-৬ টাকা। আলু সংরক্ষণ করে লাভ তো নয়-ই, বরং মুলধনও হারাতে হয়েছে। এখনস আলু নিতে হলে হিমাগার ভাড়া দিতে হবে, আবার বস্তাপ্রতি পকেট থেকে আরও ২০ টাকা গুনতে হবে। সে কারণে আলু নিতে হিমাগারে আসছেন না চাষি ও ব্যবসায়ীরা।

জেলার কালাই উপজেলার বেগুনগ্রামের আলু চাষি রেজাউল বলেন, মৌসুমে দাম কম হওয়ায় ২৫০ বস্তা আলু হিমাগারে রেখেছি। মাঝে একটু দাম উঠেছিল, তখন বিক্রি করলেও কয়েক টাকা পেতাম, এখন আলু বিক্রি করলে বাড়ি থেকে আরও বস্তাপ্রতি ২০ টাকা করে দিয়ে হিমাগার ভাড়া পরিশোধ করতে হবে। সে কারণে আলু নিতে যাইনি।

জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার নিশ্চিন্তা এলাকার চাষি মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, কয়েকদিন ধরে আলু ওঠানোর জন্য হিমাগার পক্ষ থেকে মাইকিং করছে আলু না ওঠালে তারা আর আলুর দায় নিবে না। আবার দাম কম হলে ভাড়ার টাকাও নিবে। কি করব ভেবে পাচ্ছি না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, পুরাতন আলুই শেষ হয়নি, তার ওপর নতুন আলু হাজির। যেও দাম হতো, নতুন আলু আসাতেই পুরাতন আলু আর কেউ নিচ্ছে না। কথাই বলে না পুরাতন পাগলের ভাতই নেই, নতুন পাগলের ছড়াছড়ি।

জেলার কালাই উপজেলার পুনট বাজারের আলু ব্যবসায়ী মিঠু ফকির বলেন, এবার ১৭ হাজার বস্তা বিভিন্ন জাতের আলু কয়েকটি হিমাগারে রেখেছিলাম। কম দামেই প্রায় ১১ হাজার বস্তা আলু বিক্রি করেছি। আর ৬ হাজার বস্তা আলু হিমাগারেই আছে। হিমাগার থেকে বারবার বলছে ভাড়া পরিশোধ করে ৭ দিনের মধ্যে আলু ওঠাতে। তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে প্রায় ১ কোটি টাকা লোকসান গুনেছি। আবার যদি ৬ হাজার বস্তার ভাড়া দিতে হয়, তাহলে বর্তমান দামে আলু বিক্রি করে আরও ৪৪ লাখ টাকা লোকসান হবে। সে কারণেই হিমাগারে যাতায়াত ছেড়ে দিয়েছি।

কালাইয়ের পুনট কোল্ডস্টোরেজের সহকারী ব্যবস্থাপক এনামুল হক বলেন, হিমাগারগুলোতে গড়ে এখনও সংরক্ষণের ২০ শতাংশ আলু মজুদ আছে। নতুন আলু বাজারে আসায় পুরাতন আলুর দাম ও চাহিদা কমে গেছে। আবার হিমাগারও পরিষ্কার করতে হবে। সবমিলে মালিকদের নির্দেশে আলু নিয়ে যেতে এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। সাথে ভাড়া পরিশোধের তাগিদও দেওয়া হয়েছে। তারপরও চাষি ও ব্যবসায়ীরা হিমাগারে আসছেন না। যদি না আসে তাহলে মেশিন বন্ধ করে আলু বাহিরে বের করে রাখা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।

এ বিষয়ে জয়পুরহাট জেলা প্রশাসক আল মামুন মিয়া বলেন, বিষয়টি শুনেছি, সরকারের পক্ষ থেকে আগামী ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে। তারপরও আলু বের করতে বাধ্য করা হলে হিমাগারগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্প্রতি