টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী শহর থেকে গ্রাম, সব জায়গাতেই কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে। প্রায়ই সংঘর্ষে জড়াচ্ছে তারা। আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা দিন দিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইন যেমন আছে, তেমনই তার কার্যকর প্রয়োগও জরুরী। তা না হলে এই কিশোর গ্যাংকে দ্রুত দমন করা সম্ভব নয়।
এদিকে পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, এ ধরনের অপরাধ দমনে পুলিশের একার পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়; সামাজিক আন্দোলন ইহতে পারে সবচেয়ে বড় কার্যকর শক্তি। সম্প্রতি কিশোর গ্যাংয়ের হামলার শিকার হন ধনবাড়ী পৌর শহরের পূর্ব চালাষ এলাকার বাসিন্ধা সাজ্জাদুর রহমান বাদশা’র ছেলে ধনবাড়ী আলিম মাদ্রাসার দশম শ্রেণি পড়ুয়া কিশোর ছাত্র আলভি শাহরিয়ার ও চালাষ গ্রামের মঞ্জু মিয়ার ছেলে দশম শ্রেণির ছাত্র আলিফ এবং তামজীদ। ঘটনার পর তাকে ভর্তি করা হয় ধনবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে।
জানা গেছে, ঘটনার দিন, ধনবাড়ী পৌর শহরের উপজেলা পরিষদের পাশের মডেল মসজিদের সামনে হঠাৎ ঘিরে ফেলে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। কিল,ঘুষি ও স্টিলের পাইপ দিয়ে এলোপাথারী মারপিট করে জখম করে তারা।
আহত শিশু শিক্ষার্থী আলভি শাহরিয়ার বলেন, মাদ্রাসা ছুটির পরে বাসায় ফেরার সময় উপজেলা মড়েল মসজিদের কাছে পৌঁছলে আগে থেকে উৎপেতে থাকা কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা স্টিলের পাইপ নিয়ে আমার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। শরীরের একাধিক স্থানে জখম করে। আমি হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছি। হামলাকারীদের বয়স ১৩ থেকে ১৬ বছরের মধ্যে। এই ঘটনায় আহত আলভি শাহরিয়ার সহ সকলেই অপরাধীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী জানান।
এঘটনায় আহত মাদ্রাসা ছাত্র আলভি শাহরিয়ারের মা মোকছেদা পারভীন লিপি গত ১৩ ডিসেম্বর শনিবার ধনবাড়ী থানায় পৌর শহরের খাসপাড়া এলাকার কিশোর গ্যাংয়ের ৩ সদস্যের নাম উল্লেখ করে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগকারী লিপি জানান, অভিযোগ পাওয়ার পরেও পুলিশ কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা বলে অভিযোগ করেন।
শুধু এই হামলার ঘটনায় নয় মাঝে মধ্যেই ঘটছে চুরি ছিনতাই ও শিশু ছাত্রদের কে বলাৎকারের মতো ঘটনা। এমন ঘটনায় প্রকাশ পাচ্ছে কিশোর গ্যাংয়ের বেপরোয়া দৌরাত্ম্য। উপজেলা শহর ছাড়িয়ে এখন গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে তাদের আধিপত্য। রাজনৈতিক সুবিধা নেয়া এবং স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারের আড়ালে ১৩-১৭ বছর বয়সী কিশোররা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে এবং হামলা চালাচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ধনবাড়ী পৌর শহরের ঈদ গাঁ মাঠ, মহিলা কলেজ রোড়, হর্টি কালচার সেন্টারের সামনের রাস্তা, খাসপাড়া, মেলার মাঠ, ধনবাড়ী পলাশতলী এলাকা এছাড়াও সরকারী ধনবাড়ী কলেজ মাঠ, এবং উপজেলার বীরতারার চরপাড়া মোহাম্মদ আলী বালিকা বিদ্যালয়ের সমানের রাস্তাসহ অন্তত উপজেলার এক ডজন জায়গায় প্রায়ই কিশোর গ্যাংয়ের সংঘর্ষেও ঘটনা ঘটে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবী করে হামলার ভয় দেখায় তারা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত সর্বসাধারণ। বারবার হামলার ঘটনা ঘটলেও মামলা করা হয়না, ফলে মূল অভিযুক্তরা সহজেই থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।
স্থানীয়রা বলছে, গত এক বছওে উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় কিশোর গ্যাংয়ের অন্তত ৬ থেকে ৭ টি মারামারির ঘটনা ঘটেছে। বেশ কয়েক বার পুলিশ অভিযান চালিয়ে কিছু কিশোর কে আটক করলেও মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেয়ার কারণে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে তারা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুর্বল অবস্থানের সুযোগে এখন পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আতঙ্ক বাড়ছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইন প্রয়োগে গাফিলতি ও তদন্তের দুর্বলতার সুযোগেই কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। সেই সাথে তারা মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। তাদের মতে, আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা গেলে খুব দ্রুতই কিশোর গ্যাং নির্মূল করা সম্ভব।
টাঙ্গাইল জেলা বার সমিতির সিনিয়র আইন আইনজীবী বিশিষ্ট সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী আতাউর রহমান খান আজাদ তিনি বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন স্থানেই কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরা বেড়েছে। এসব তৎপরতা রোধে অইন শৃংখলা বাহিনীকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং কোন ঘটনা ঘটলে দ্রুত আইন আমলে এনে বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া সামাজিক ভাবে প্রতিটি এলাকায় বিভিন্ন শ্রণি পেশার মানুষ এবং অভিভাবকদের কিশোর গ্যাংয়ের বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
ধনবাড়ী থানার ওসি তিনি জানান, থানা এলাকায় কোন কিশোর গ্যাংয়ের অপতৎপরা দেখা গেলে ও অভিযোগ পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এব্যাপারে অভিভাবক সহ সকল কে সন্তানের চলাফেরার বিষয়ে নজরদারী রাখতে হবে।
সহকারী পুলিশ সুপার (মধুপুর সার্কেল) আরিফুল ইসলাম বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধ থামাতে সামাজিক আন্দোলন ছাড়া বিকল্প নেই। তবে, মধুপুর-ধনবাড়ীর কোথাও কোন ধরণের কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরা দেখা গেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সেই সাথে থানা এলাকায় বিট পুলিশের মাধ্যমে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি কিশোরদেরকে বিপথ থেকে সুপথে আনাতে পরিবার, জনপ্রতিনিধি ও রাজনীতিবিদসহ সমাজের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। এবং কী কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে পুলিশ স্বোচ্চার রয়েছে, অভিযোগ পাওয়া মাত্রই প্রয়োজনীয় আইনগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অর্থ-বাণিজ্য: অধিকাংশ শেয়ারে দাম বাড়লেও পতন থামেনি শেয়ারবাজারে
সারাদেশ: শিমের বেগুনি ফুলেই কৃষাণীর স্বপ্ন
সারাদেশ: মহানন্দা নেশাজাতীয় সিরাপ জব্দ
সারাদেশ: হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ সংস্কৃতি