image
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামীণ সংস্কৃতি

রোববার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
মো. মোহন মিয়া, দুর্গাপুর (নেত্রকোনা)

পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের তুমি যাবে ভাই, যাবে মোর সাথে, আমাদের ছোট গাঁয় ‘গাছের ছায়ায় লতাপাতায় উদাসীর বনের বায়’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাটু জল থাকে’ জনপ্রিয় শিল্পী কুদ্দুছ বয়াতীর ‘হায়রে নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’। সেই পুরোনো দিনের গানগুলো এখনও পুরনো মানুষের হৃদয়ে দাগ দিয়ে যায়। অজপাড়া গ্রামগুলোতে চলত কত না মেলা, কীর্তন, ঘাটু গান, পুথি পড়া, কবি গান, বাউলা গান, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও যাত্রাপালা। কার্তিক মাস এলেই চৈত্র সংক্রান্তি পর্যন্ত চলত বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে এসব অনুষ্ঠান। এখন সেগুলো প্রায় বিলুপ্তির পথে।

গ্রামে ছিল দিনের বেলা যাত্রার মহড়া ও রাতে ছিল যাত্রাপালা। এবং কতই না ছিল ভুড়িভোজনের লক্ষীপূজার লাড়–মুড়ি, খইচিড়া, দুধ, ধই, কত কি। ছিল না কোন দাঙ্গা, হাঙ্গামা, ছিনতাই, শিশু অপরহণ, নারী ধর্ষণের মতো কোন ঘটনা। ছেলেমেয়েরা একসাথে চলত। আবার গ্রামবাসীর বিনোদনের জন্য চাল, ডাল সংগ্রহ করে খাওয়া দাওয়ার ধুমধাম ব্যবস্থা করত। সীমান্তে আদিবাসীরা গারো, হাজং জনগোষ্ঠী করে তা তাদের প্রাণের ‘দেউলী উৎসব’ দুর্গা, কালী, অসুর ও মহিষাশুর বধ্’ ইত্যাদি। বর্তমানে আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিকগুলো আজ মৃত প্রায়। এসবগুলোর পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ের যুবকরা সমাজের আনন্দ দানে বাংলার ঐতিহ্যবাহী হা-ডু-ডু, কাবাডি, রশি খেলা, দাড়িয়াবান্দা, বৌছুট, গোল্লাছুট, ডাংবাড়ী খেলা, লাটি খেলা, লুডু খেলা, কানা মাছি বৌ বৌ এগুলো গ্রামগঞ্জে এখন আর দেখা যায় না। অথচ গ্রাম বাংলার হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে পূর্ব পুরুষের শেখর। ওই সময়ের রাখাল ছেলেরা মাঠে গরু ছড়াতে গিয়ে তাড়াও বাশি বাজানো, স্কুল পড়–য়া ছেলে মেয়েদের নিয়ে বিভিন্ন খেলায় মেতে থাকত। যেমন: মারবেল খেলা, ডাংবাজি, সাইকেলের রিং খেলা, গুলাইমাড়া, লাডুম খেলা ইত্যাদি। বর্তমান প্রজন্মে যুবকরা আধুনিক ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে মোবাইল, টেলিভিশন, ভিডিও গেমস, ফেসবুককে সর্বদায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অপরদিকে কৃষি কাজে হালচাষ, ধান কাটা, ধান মাড়াই সহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হতো এসব হস্ত নির্মিত উপকরণ। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় এখন সব কিছুই যন্ত্র নির্ভর হয়ে পড়েছে। কৃষি ক্ষেত্রেও এর ব্যত্যয় হয়নি। হালচাষ করতে এখন আর গরু, লাঙ্গল, জোয়ালের দরকার হয় না। এর বদলে চলে এসেছে ট্রাক্টর, কাঁচি দিয়ে দল বেঁধে ধান কাটতে হচ্ছে না। ধান কাটার মেশিন হারভেষ্টার দিয়ে একজনই কেটে ফেলছেন ধান। মাড়াই করতে লাগছে না গরু। মাড়াই যন্ত্রে ধান মাড়াই হচ্ছে। ধান ক্ষেতে পানি দেয়ার জন্য ব্যবহৃত হতো দোন। তাও. লাগছে না। মাঠে বসে গেছে স্যালোমেশিন। অথচ এমন এক সময় ছিল যখন কাকডাকা ভোর থেকে কৃষক লাঙ্গল জোয়াল ও গরু নিয়ে ক্ষেতে চাষ দিতেন। ধান কাটা হতো দল বেঁধে। হাওরে বোরো মৌসুমে বিস্তীর্ণ মাঠের ফসল কাটতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ধান কাটার কামলা, ভাগালু, বেপারীরা আসতো। হাওর থেকে ধান আনার কাজে ব্যবহৃত হতো গরুর ও ঘোড়ার গাড়ি। হাওরে অনেক গৃহস্থের গরুর গাড়ি ছিল। এ ব্যাবস্থা চলতে থকলে হয়ত অচিরেই গ্রামগঞ্জের খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো আমাদের সংস্কৃতি থেকে হাড়িয়ে যাবে। আর পরিণত হবে রুপকথার গল্প কাহিনী। আধুনিকতার ছলে পুরোনো গ্রাম্য সংস্কৃতি ভুলে গেলে চলবে না।

ভবিষ্যত প্রজন্মে বিনোদন ও ঐতিহ্য রক্ষার স্বার্থে সামাজিক সচেতনতা, বিত্তশালী ব্যক্তিবর্গ, সামাজিক সংগঠনগুলোর উচিত আবারও পুরনো সংস্কৃতিগুলো ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ব্যাপক সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

» আদমদীঘিতে ছয় দিনে নাশকতা মামলায় ৬ জন গ্রেপ্তার

সম্প্রতি