কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে গড়াই নদীর আকস্মিক ভাঙনে এলাকায় দেখা দিয়েছে আতঙ্ক। ফসলি জমিসহ অনেক বসতবাড়ি ইতোমধ্যে নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে। জানা গেছে, গড়াই নদীর কূল ঘেঁষে কুমারখালী পৌরসভা ও উপজেলা শহর অবস্থিত। ১৮৬৯ সালে গঠিত প্রথম শ্রেণীর এই পৌরসভায় প্রায় ৬০ হাজার মানুষের বসবাস। পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তেবাড়িয়ার শহীদ গোলাম কিবরিয়া সেতু থেকে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের আগ্রাকুন্ডা পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার এলাকায় নেই বাঁধ। এরই মধ্যে সেখানে ভাঙন শুরু হয়েছে।
গত এক সপ্তাহে প্রায় ৩০ বিঘা ফসলসহ কৃষি জমি ও নদীপাড় ভেঙে চলে গেছে নদীতে। এখন পর্যন্ত তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ। এতে হুমকিতে পড়েছে প্রায় ৫০ বিঘা কৃষিজমি ও অন্তত ৩০০টি পরিবারের মানুষ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতিবছর নদী শাষণ করে পাউবো। তবে গত চার-পাঁচ বছরে তেবাড়িয়া-আগ্রাকুন্ডা এলাকায় কোনো কাজ হয়নি। ফলে নদীর মাঝে চর জেগেছে। আর পানির ¯্রােত গড়ছে পাড়ের কিনারা দিয়ে। এতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। তারা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, তেবাড়িয়া শহীদ গোলাম কিবরিয়া সেতু থেকে আগ্রাকুন্ডা এলাকার কৃষক ছেইমান শেখের বাড়ি পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার গড়াই নদীর পাড়। নদী থেকে প্রায় ১০০ মিটার দূর দিয়ে চলে গেছে সিসিঢালাই সড়ক। সড়ক ঘেঁষে কয়েক শত কাঁচাপাকা বাড়ি। বাড়ি পিছনে অবস্থিত নদীপাড়ে সরিষা, ভূট্টা, তিল, পেঁয়াজসহ হরেক চাষাবাদ করা হয়েছে। শুকনো নদীর মাঝ দিয়ে জেগেছে চর। কিনারা দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। থেমে থেমে ভেঙে পড়ছে নদীরপাড়। এলাকাবাসী বলেন, অনেকবছর পর নদীতে ভাঙন লেগেছে। ফসলসহ অন্তত ৩০ বিঘা জমি গেল সাতদিনে নদীগর্ভে চলে গেছে। এখন বসতবাড়ী নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় পড়েছি। সরকারি লোকজন এসে ঘুরে গেছেন। তবে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
তারা বলেন, নদী শুকিয়ে এবার মাঝে চর পড়েছে। ফলে পাড়ের কুল দিয়ে পানির ¯্র্েরাত যাচ্ছে আর ভাঙছে। এতে কাঁচা-পাকা ঘরবাড়ী সড়ক, মসজিদ-মন্দির, ছোট-বড় নানা স্থাপনা ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। তার ভাষ্য, নদীর খেলা বুঝা বড় দায়। পানি কমলেও ভাঙে, বাড়লেও ভাঙে। দ্রুত পাকা বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
তেবাড়িয়া শেরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি মোশাররফ হোসেন বলেন, নদীপাড়ের ২২ শতাংশ জমিতে হাইব্রিড ঘাসের চাষ রয়েছে। নদী ভাঙতে ভাঙতে প্রায় ঘাসের কাছে চলে এসেছে। স্থায়ী সমাধানের জন্য দ্রুত বাঁধ নির্মাণ করা দরকার।
খবর পেয়ে নদী ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কুষ্টিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, এই মূহুর্তে বাঁধ নির্মাণ বা ভাঙন রোধের কোনো সরকারি বরাদ্দ নেই। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারজানা আখতার বলেন, ভাঙনের বিষয়টি জানতে পেরেছি। পাউবোর সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুতই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।