image
ভালুকা (ময়মনসিংহ) : পোল্ট্রি খামার পরিচর্চায় ব্যস্ত শ্রমিক -সংবাদ

ভালুকায় লোকসানের মুখে পোল্ট্রি খামারি

সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতিনিধি, ভালুকা (ময়মনসিংহ)

বেশি দামে মুরগির খাদ্য কিনে কম দামে ডিম বিক্রি করায় চরম লোকসানে পরেছেন ভালুকা উপজেলার কয়েকশ পোল্ট্রি খামারি। কিছুদিন দিন যাবৎ প্রতি ডিমে পাইকারি বাজারে উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে ৭.৪০ টাকা করে খামারিরা ডিম বিক্রি করছেন বলে জানা গেছে।

ডিমের দাম আরও কমতে পারে এ আশংকায় ভালুকার কয়েকশ পোল্ট্রি খামারি এখন দিশেহারা হয়ে পরেছেন। অথচ পূর্বের চেয়ে তারা দ্বিগুন দামে মুরগির খাদ্য ও ঔষধ কিনে পোল্ট্রি খামার টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। উপজেলার ১১ টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি বড় আকারের পোল্ট্রি থাকলেও ছোট ও মাঝারি আকারের পোল্ট্রি রয়েছে কয়েক শত। এর মধ্যে মল্লিকবাড়ী, উথুরা, হবিরবাড়ী ও ডাকাতিয়া ইউনিয়নে প্রায় ৫ শতাধিক প্রান্তিক খামারি রয়েছে। এসব পোল্ট্রি হতে প্রতিদিন কয়েক লক্ষ ডিম ঢাকার তেজগাঁও কারওয়ান বাজারের আড়ৎগুলোতে সরবরাহ করা হয়।

উপজেলার ডাকাতিয়া ইউনিয়নের আঙ্গারগাড়া আখালিয়াপাড়া গেলে পোল্ট্রি খামারি মীনা আক্তার জানান, বর্তমানে প্রতিটি ডিম ৭ টাকা ৪০ পয়সা হিসেবে তারা পাইকারি দামে খামার হতে বিক্রি করছেন। তিনি জানান কিছুক্ষণ পূর্বে ঢাকার পাইকার এসে তার খামার হতে ট্রাক ভরে ডিম নিয়ে গেছেন। পোল্ট্রি খাদ্য ও ঔষধ পত্রের বর্তমান চড়া দামের কারনে প্রতিটি ডিম উৎপাদনে তাদের খরচ বেশি ও কম দামে ডিম বিক্রি হওয়ায় কোন রকমে টিকে রয়েছেন। এতদিন তারা প্রতিটি ডিম খামার থেকে সারে ৮ টাকা থেকে ৯ টাকা করে পাইকারি বিক্রি করায় মোটামোটি মুনাফা পেতেন। অথচ বর্তমান বাজারে খুচরা ব্যবসায়ীরা ভোক্তাদের কাছে প্রতিটি ডিম সারে ১১ টাকা অর্থাৎ ৪৫/৫০ টাকা করে এক হালি বিক্রি করে থাকেন। মীনা আক্তার জানান তাদের তিনটি শেড রয়েছে। একটি শেড খালি আর দুটি শেডে দুই হাজার ৬ শত মুরগী রয়েছে। এর মধ্যে প্রতিদিন ১৮০০ থেকে ১৯০০শ মুরগি ডিম দিচ্ছে। তিনি জানান প্রতিটি শেড তৈরি ৩ লাখ ও খাচা ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়। কোয়ালিটি ফিডস এর ৫০ কেজির এক বস্তা মুরগীর খাবার যখন ১৫ থেকে ১৬শ টাকায় ক্রয় করতেন তখন প্রতিটি ডিম ৫ টাকা করে বিক্রি করলেও তাদের খরচ বাদে মুনাফা আসতো। বর্তমানে ৫০ কেজির এক বস্তা খাদ্যের দাম ২ হাজার ৫৫০ টাকায় ক্রয় করছেন তারা। মুরগীর খাদ্য ও ঔষধের দাম না কমলে কম দামে ডিম বিক্রি করে তাদের প্রচুর লোকসানের সম্মুখীন হতে হবে। এতে শত শত পোল্ট্রি খামারি ব্যবসা গুটিয়ে পথে বসবে বলে জানা যায়। তিনি জানান তার স্বামী আব্দুল মোতালেব নিজের কেনা একটি সিএনজি অটো চালিয়ে রোজগার করে থাকেন। সে নিজে পোল্ট্রির দেখাশোনা ও তদারকি করে থাকেন। তাদের এক মেয়ে রীপা আক্তার (১৭) ঢাকার বীর শ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজে আই এ প্রথম বর্ষে ও ছেলে রাজন আঙ্গারগাড়া ইউনাইটেড উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণীতে অধ্যয়ণ রত আছেন। পোল্ট্রির পাশাপাশি গৃহস্থালী ও স্বামীর গাড়ি চালনার উপার্জনে তাদের ছোট সংসারে মোটামোটি সুখ সাচ্ছন্দ বিরাজমান রয়েছে। এ ছাড়াও গবাদী পশু ও দেশী হাঁস মুরগী পালন নিজস্ব চাহিদা মিটিয়ে উপড়ি আয়ের উৎস্য হিসেবে সঞ্চয়ের ডোলা ভারি করে। সর্বোপরি পোল্ট্রি ব্যবসায় খাদ্যের দাম ঔষধের দাম বৃদ্ধির কারনে বার বার লোকসান হওয়ায় অনেকে মুরগী বিক্রি করে খামার ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন বলে তিনি জানান। শতশত পোল্ট্রি বাঁচাতে খাদ্য ও ঔষধের মূল্য কমিয়ে ডিমের বাজার ভোক্তাদের সহনীয় পর্যায়ে রাখার ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে স্থানীয় পোল্ট্রি খামারিদের দাবি।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

সম্প্রতি