রবি শস্য আবাদের পূর্ণ মৌসুম চলছে এখন। ঠিক এই সময় শরীয়তপুরে দেখা দিয়েছে তীব্র সারের সংকট। কয়েকগুণ বেড়েছে পেঁয়াজের বীজের মূল্য। দিশেহারা কৃষক।
এ বছর কৃষকদের চাহিদার বিপরীতে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কম সার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ডিলার ও খুচরা সার বিক্রেতারা সারের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে অতিরিক্ত দামে সার আর পেঁয়াজ বীজ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক। বাড়ছে উৎপাদন খরচ, উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার দুশ্চিন্তায় কৃষক।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, শরীয়তপুরের ছয়টি উপজেলায় ৮২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বছরে বিভিন্ন ফসল আবাদ হয়। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কৃষকেরা শীতকালীন শাকসবজি, পেঁয়াজ, রসুন, আলু, মসলাজাতীয় ফসল, রবিশস্য, তেল জাতীয় ফসল, ডাল এবং ধানের বীজতলা তৈরিসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদে ব্যস্ত সময় কাটান। ঠিক এই মৌসুমেই জেলায় বরাদ্দ পাওয়া সারের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে।
অন্যদিকে পেঁয়াজ আবাদের ধরা মৌসুমে বেড়েছে পেঁয়াজ বীজের মূল্য। মৌসুমের শুরুতে পেঁয়াজের মন ১ হাজার ৮শ টাকা থেকে ২ হাজার ২শ টাজা থাকলেও যা বেড়ে ৩হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্তে দরে বিক্রি হচ্ছে।
মৌসুমে প্রয়োজন ছিল ইউরিয়া ১৮ হাজার ৫৯৫ মেট্রিক টন, টিএসপি ৪ হাজার ৮১০ মেট্রিক টন, ডিএপি ১২ হাজার ৭৭৫ মেট্রিক টন এবং এমওপি ৮ হাজার ৯৯২ মেট্রিক টন। কিন্তু বরাদ্দ এসেছে যথাক্রমে ৭ হাজার ৯৪৬ মেট্রিক টন ইউরিয়া, ১ হাজার ৭২৭ মেট্রিক টন টিএসপি, ৭ হাজার ৭৫ মেট্রিক টন ডিএপি এবং মাত্র ২ হাজার ২১৯ মেট্রিক টন এমওপি সার। মোট চাহিদার তুলনায় ইউরিয়া কম ৫৭%, টিএসপি ৬৪%, ডিএপি ৪৪% এবং এমওপি সার কম এসেছে ৭৫%।
প্রত্যেক ইউনিয়নে ৭১ জন ডিলারের মাধ্যমে সার সরবরাহ করা হয়। সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজি ইউরিয়ার দাম ২৭ টাকা, টিএসপি ২৭ টাকা, ডিএপি ২১ টাকা এবং এমওপি সার ২০ টাকা। কিন্তু সরবরাহ কম থাকায় অনেক ডিলার ও খুচরা বিক্রেতা সার বেশি দামে—প্রতি কেজি ১০ থেকে ১২ টাকা অতিরিক্ত—বিক্রি করছেন।
কৃষকেরা জানান, প্রতি শতাংশ জমিতে গড়ে তিন কেজি সার লাগে, যার স্বাভাবিক বাজারদর ৮০ থেকে ৮২ টাকা হওয়া উচিত। কিন্তু সরবরাহ সংকটে এখন একই সার কিনতে হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। এতে প্রতি শতাংশ জমিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা অতিরিক্ত ব্যয় পড়ছে। ফলে ফসল উৎপাদন ব্যয় বাড়বে এবং লাভ কমে যাবে।
নড়িয়া উপজেলার নসাশন ইউনিয়নের কৃষক নুরুল ইসলাম ঢালী বলেন, পেঁয়াজ রসুন কালোজিরা ও ধনীয়া আবাদে আমার ১২ থেকে ১৩ বস্তা সার লাগে। এখন পেঁয়াজ বীজে যেমন বেশি টাকা লেগেছে আর সার কিনতে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বেশি লেগেছে। তার ফলে আমার উৎপাদন বেড়ে গেছে। এরপর আরও সার দেয়া লাগবে। যার ফলে উৎপাদন ব্যয় আরও বেড়ে যাবে। কিন্তু ফসল উঠলে ন্যায্য মূল্য না পেলে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। প্রতিবছরই পেঁয়াজ বাজারে উঠলে আমদানির কারণে দাম কমে যায়। ফলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হই।
পোড়াগাঁও গ্রামের মাজেদা বেগম। সন্তান হারিয়েছেন অনেক আগেই। শয্যাশায়ী স্বামীকে নিয়ে সংসার তার। স্বামীর ফসলী জমিতে আবাদ করেই তাদের জীবন-যাপন। কিন্তু সারের মূল্য বৃদ্ধিতে আবাদ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন মাজেদা। এ কারনে ৮০ শতাংশ জমির অর্ধেকটা এবার অনাবাদি থাকবে বলে জানায় তিনি। মাজেদা বলেন, ১০৫০ টাকার ডিএপি সারের বস্তা ১৬৫০ টাকা দরে কিনতে হয়েছে। ধার দেনা করে কিনেছি। এরপরে আবার নতুন করে সার কিনে চাষাবাদ সম্ভব না। সরকারের কোন লোক নেই যে এগুলো দেখার। সারের বাজারে আমরা অসহায়।
শরীয়তপুরের হাটবাজার গুলো ঘুরে দেখা যায় একই চিত্র। কাজিরহাট বাজারে গিয়ে দেখা যায়, সার বেচাকেনার ধুমধাম পড়েছে। কৃষক ৫শ থেকে ৬শ টাজা দাম দিয়েই শার্ট কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এমনই এক কৃষক ইমামুল সরদারের সাথে কথা হয়।
ইনি ভ্যানযোগে দুই বস্তা সরকারি ডিএপি সার ৩ হাজার ১শ টাকা কিনেছেন। এই প্রতিবেদক যখন স্যারের বস্তা লেখা ১০৫০ টাকা দেখায় তখন তিনি হতভাগ হয়ে যান। প্রতিবেদক কে নিয়ে বিক্রেতার দোকানে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে বিক্রেতা পুরোপুরি অস্বীকার করেন। এরপর কাজির হাট বাজারে কিছুক্ষণ সময় সার বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোস্তফা কামাল হোসেন বলেন, বর্তমানে রবি মৌসুমে আমাদের ফসলের মধ্যে পেঁয়াজ রসুন কালোজিরা ধনিয়া গম সরিষা আলু এসব ফসল চাষাবাদ হচ্ছে। এই মৌসুমে স্যারের চাহিদা বেশি থাকে। তবে চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ কম থাকায় কৃষকেরা নানা উপায়ে ঘাটতি পুষিয়ে নিচ্ছেন। কিছু কিছু ডিলার বেশি দামে সার বিক্রি করে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। বেশি দামে বিক্রি বন্ধে মনিটরিং বাড়ানো হয়েছে এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতও কাজ করছে।
সারাদেশ: কলারোয়ার মেছোবাঘ আটক
সারাদেশ: ঐতিহ্যসমৃদ্ধ এক জনপদ ভাটপাড়া গ্রাম
সারাদেশ: গ্রামীণ সড়কের দুই পাশে নেই সেই দৃশ্য