পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়কের দুই পাশে দেশী প্রজাতির গাছ না থাকায় পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সামাজিক বনায়নের জন্য দেশী প্রজাতির গাছ রোপন না করে সড়কের জমিতে বিদেশী প্রজাতির গাছ রোপন করায় স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। দীর্ঘ সময় ধরে সড়কের দুই পাশে দ্রুত বৃদ্ধিকারী ও পরিবেশের ক্ষতিকারী এই ধরনের গাছের বনায়ন করা হচ্ছে। অল্প সময়ে অধিক লাভের আশায় বন বিভাগ এই ধরনের গাছ দিয়ে বনায়ন করেছিল। ফলে বনায়নের নামে পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন সড়কের দুই পাশে রোপনকৃত গাছগুলো পরিবেশ বান্ধব নয়।
উপজেলা বন বিভাগ থেকে জানা যায়, গত কয়েক দশক ধরে দেশি বিদেশী প্রজাতির গাছ দিয়ে বনায়ন শুরু হয়। অল্প সময়ে অধিক লাভের আশায় স্থানীয় লোকজনের মাধ্যমে নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্য রাস্তার দুই পাশে এসব বনায়ন করা হচ্ছে। কৃত্রিমভাবে সামাজিক বনায়ন এবং ব্যক্তি উদ্যোগে বসত বাড়ির আশেপাশে এই জাতীয় গাছের শোভা পায়। এই গাছগুলো বিদেশী প্রজাতির আগ্রাসী গাছ হিসাবে পরিচিত। এই সকল গাছের ছায়ায় পড়ে ধান গাছে রোগ ও পোকার আক্রমন মারাত্মক হারে বৃদ্ধি পায়। গাছের পার্শ্ববর্তী এলাকায় ধানক্ষেত বিনষ্ট হয়। আকাশি গাছের পাতা সহজে পঁচে না এবং কৃষিক্ষেতে ব্যাপক ক্ষতি সৃষ্টি করে। প্রকৃতি, পরিবেশ ও কৃষি ক্ষেতে ব্যাপক ক্ষতি বয়ে আনা গাছ দিয়ে বনায়ন বন্ধের দাবি তুলেছেন পরিবেশবিদ ও গবেষকরা। উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক ছাড়াও গ্রামগঞ্জের রাস্তার দু’পাশে এই সব গাছের সামাজিক বনায়নে ভরে উঠেছে।
উপজেলা বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের দক্ষিন দাসপাড়া গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর ও শংকর চন্দ্রসহ আরও অনেকে বলেন, রাস্তার পাশে বিদেশী প্রজাতির গাছ রোপন করায় কৃষি জমি বিনষ্ট, মৎস্য চাষাবাদে ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গাছের ছায়ায় ধানী জমির জায়গা দখল করে। চাষাবাদকৃত ধান গাছ কেটে গরুর খাদ্য ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। স্থানীয়রা বলেন, আকাশি গাছের ছায়ায় ধান থেকে শুরু করে কোন ধরনের চাষাবাদ সম্ভব হয় না। একইভাবে মৎস্য খামারের পাশে এইসব গাছের কারনে মৎস্য চাষাবাদেও ক্ষতির কারন হয়ে দেখা দিয়েছে। দক্ষিন দাসপাড়া পরিবেশ কর্মী শাহ আলম বলেন, আমাদের প্রকৃতি ও পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্য নয় এমন প্রজাতির গাছের চারা রোপন করে বনায়ন শুরু হয়েছিল। বিদেশী প্রজাতির গাছ ক্ষতিকর হওয়ায় বর্তমানে চারা উৎপন্ন এবং রোপন করা বন্ধ রয়েছে। বিদেশী প্রজাতির এই গাছগুলো স্থানীয় প্রজাতিদের জায়গা দখল করে সেগুলোকে বিপন্ন করে তোলে। এই গাছ গাছালি শুধু কৃষিক্ষেতই বিনষ্ট করে না, মৎস্য চাষাবাদেও ক্ষতি করে এবং পশুপাখির খাদ্য তৈরি করে না। তিনি আরও বলেন, যে কোন প্রজাতি ভিন্ন পরিবেশ থেকে এনে বিস্তার ঘটাতে দিলে কালক্রমে তা হয়ে উঠে আগ্রাসী প্রজাতি। আমাদের দেশেও এই গাছগুলো আগ্রাসী হয়ে উঠছে এবং পরিবেশের ক্ষতি বয়ে আনছে। এই ব্যাপারে উপজেলা বন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়, এক সময়ে কাঠের চাহিদা মেটাতে বিদেশী প্রজাতির গাছ দিয়ে বনায়ন করা হয়ে ছিল। বর্তমানে দেশী প্রজাতির গাছ রোপন করার জন্য সকলেই এগিয়ে আসছে।