চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে সম্পন্ন করার নির্দেশনা চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। নিহতের বাবা ও মামলার বাদী জামাল উদ্দিন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এই আবেদন করেন।
মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে তিনি আবেদনটি জমা দেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞার পক্ষে আবেদনটি গ্রহণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. শরীফ উদ্দীন।
চট্টগ্রাম মহানগর আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর মো. রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী জানান, জেলা প্রশাসকের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবেদনটি গ্রহণ করেছেন এবং সেটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী ইমতিয়াজ রেজা নিশান ও আইনজীবী আহসান উল্লাহ মানিক।
আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ২০২৪ সালের ২৬ নভেম্বর ইসকনের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে একটি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম আদালতে হাজির করা হয়। আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করার পর চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে তার অনুসারীদের দ্বারা সংঘটিত সহিংস ও ন্যাক্কারজনক ঘটনার মধ্যে উগ্রবাদী সন্ত্রাসীদের হাতে নৃশংসভাবে নিহত হন আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ।
ওই হত্যাকাণ্ডকে একটি চরম চাঞ্চল্যকর, সংবেদনশীল ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে আবেদনে বলা হয়, এই ঘটনা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, বিচার বিভাগের নিরাপত্তা এবং আইনের শাসনের মৌলিক ভিত্তিকে গুরুতরভাবে বিঘ্নিত করেছে।
আবেদনে আরও বলা হয়, এ ঘটনায় সরকারের শীর্ষ পর্যায়সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন এবং দেশে-বিদেশের অসংখ্য মানুষ তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এর ফলে সাধারণ জনগণ এবং প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যেও ব্যাপক ক্ষোভ ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি হয়েছে।
আলিফ হত্যা মামলাটি বিচার উপযোগী হওয়ায় সম্প্রতি ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠানো হয়। এরপর মামলাটির বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পরিচালনার জন্য নির্দেশনা চেয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাবর আবেদন করেন নিহতের বাবা জামাল উদ্দিন।
আবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, মামলাটি একটি জাতীয়ভাবে আলোচিত ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হত্যাকাণ্ড সংক্রান্ত মামলা, যার সঙ্গে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, জননিরাপত্তা এবং আইনের শাসনের মৌলিক প্রশ্ন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণ এবং দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার সম্পন্ন করার স্বার্থে মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
আবেদনে আরও বলা হয়, মামলার প্রকৃতি, প্রেক্ষাপট, সামাজিক প্রতিক্রিয়া এবং জাতীয় প্রভাব বিবেচনায় এটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য সম্পূর্ণভাবে উপযুক্ত, প্রাসঙ্গিক এবং আইনগত সব মানদণ্ড পূরণ করে।
এর আগে গত বছরের ২৬ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালত ভবন এলাকায় মানববন্ধন ও সমাবেশ করে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ আইনজীবীরা আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানিয়েছিলেন।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন নাকচ করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। এর পরপরই চট্টগ্রাম আদালত প্রাঙ্গণে প্রিজন ভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করেন সনাতনী সম্প্রদায়ের লোকজন।
প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে চিন্ময়কে কারাগারে নিয়ে যায়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা আদালত সড়কে রাখা একাধিক মোটরসাইকেল ও যানবাহন ভাঙচুর করেন। পরে আদালতের সাধারণ আইনজীবী ও কর্মচারীরা তাদের ধাওয়া করলে পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
এই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার মধ্যেই রঙ্গম কনভেনশন হল সড়কে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
এ ঘটনায় গত বছরের ২৯ নভেম্বর নগরীর কোতোয়ালী থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের বাবা জামাল উদ্দিন। মামলায় ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ১৫ থেকে ১৬ জনকে আসামি করা হয়। মামলার সব আসামিই নগরীর রঙ্গম কনভেনশন হল সংলগ্ন বান্ডেল সেবক কলোনির বাসিন্দা বলে উল্লেখ করা হয়।
তদন্ত শেষে চলতি বছরের ১ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী কমিশনার (কোতোয়ালী) মাহফুজুর রহমান মোট ৩৮ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে চিন্ময় দাসকে প্রধান আসামি করা হয়।
পরবর্তীতে ২৫ আগস্ট চিন্ময় দাস ব্রহ্মচারীসহ মোট ৩৯ জন আসামির বিরুদ্ধে বাদীর উপস্থিতিতে অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন আদালত। বর্তমানে এই ৩৯ আসামির মধ্যে ১৭ জন এখনও পলাতক রয়েছেন।
আন্তর্জাতিক: থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্তে নতুন করে সংঘর্ষ
সারাদেশ: মোংলায় চোলাই মদসহ স্বামী স্ত্রী আটক