১শ’ ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার
এখন পর্যটন মৌসুম। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ সারাদেশে একশ’র বেশি পর্যটন স্পটে দেশি ও বিদেশি হাজার হাজার পর্যটক বেড়াতে যান।
কিন্তু প্রায় সময় পর্যটকরা ইভটিজিং, ছিনতাই, চুরি, প্রতারণা, ব্ল্যাকমেইলসহ নানাভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। কিছু কিছু পর্যটকের অভিযোগের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক আইনি ব্যবস্থা নেয়া হলেও অনেক ঘটনা পুলিশ পর্যন্ত পৌঁছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানিয়েছে, ট্যুরিস্ট পুলিশ সারাদেশে ১৩০টি পর্যটন স্পটে নিরাপত্তা দিচ্ছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পর্যটন স্পট হলো- কক্সবাজারের লাবনী বিচ, সুগন্ধা বিচ, কলাতলী বিচ, কবিতা চত্বর, ঝাউবন এলাকা, ইনানী বিচ, পাটোয়ার টেক বিচ, হিমছড়ি বিচ, সেন্টমার্টিন দ্বীপ, ছেড়া দ্বীপ, টেকনাফ বিচ, ডুলাহাজরা সাফারি পার্ক।
এছাড়াও রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, চট্টগ্রাম, সিলেট, সুনামগঞ্জ, টাঙ্গুয়ার হাওড়, শিমুল বাগান, নিলাদ্রী, যাদুকাটা লাকমা ছড়া ঝর্ণা, বিছানাকান্দি, সুন্দরবন পর্যটন স্পটসহ সারাদেশে ১৩০টি পর্যটন স্পটে বেশিরভাগ পর্যটক বেড়াতে যান। কিন্তু প্রায় সময় অনেক পর্যটক প্রতারণা, ছিনতাইয়ের কবলে পড়েন। নারীরা সন্ধ্যার পর সৈকতে গিয়ে বখাটেদের হাতে ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছেন। প্রায়ই এসব ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানিয়েছে, ট্যুরিস্টদের নিরাপত্তায় আগের চেয়ে বেশি কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
চলতি বছরের নভেম্বর মাস পর্যন্ত ট্যুরিস্ট পুলিশ সদর দপ্তরের তথ্যে জানা গেছে, পর্যটন স্পটে বেড়াতে গিয়ে ৪৮১ শিশু হারিয়ে গেছে। খবর পেয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ অনুসন্ধান চালিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছেন। সৈকতে পানিতে নামতে গিয়ে বিপাকে পড়া ৭৪ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে।
পর্যটকদের টাকা, জিনিসপত্রসহ অন্যান্য সামগ্রী ছিনতাই করতে গিয়ে সন্দেহভাজন ১শ’ ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে নভেম্বর মাস পর্যন্ত এ সংখ্যা ছিল ৯৩ জন।
ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে ও হারিয়ে যাওয়া ১০৬টি মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে। পর্যটকদের ৩শ’র বেশি অভিযোগ অনুসন্ধান তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নিতে রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। হারিয়ে যাওয়া মূল্যবান সামগ্রী ৬০টির বেশি উদ্ধার করা হয়েছে।
সোমবার ও পঞ্চগড়ের ৪০-৫০ জন মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক সেন্টমার্টিন যাওয়ার জন্য পঞ্চগড় থেকে টিকেটের বুকিং (অনলাইনে) দিলেও কক্সবাজার গিয়ে তারা প্রতারণার শিকার হন। বিষয়টি ট্যুরিস্ট পুলিশকে জানালে তারা এক প্রতারককে আটক করেছে বলে জানিয়েছেন।
ট্যুরিস্ট পুলিশ প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মাইনুল হাসান তার কার্যালয়ে এই প্রতিবেদককে জানায়, ট্যুরিস্ট পুলিশ সাধারণত দু’ভাগে পর্যটন স্পটে সেবা দিয়ে থাকেন। এর মধ্যে একটি প্রতিরোধমূলক ও অন্যটি প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মধ্যে পর্যটন স্পটগুলোতে ট্যুরিস্ট পুলিশের টহল জোরদার, মোবাইল কোর্ট পরিচালনায় সহযোগিতা, স্থানীয় পর্যটনবান্ধব জনগোষ্ঠীর সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ, পর্যটন স্পটে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও মনিটরিং করা, হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট মালিক কর্মচারীসহ স্থানীয় স্টেকহোল্ডারদের সচেতন ও প্রশিক্ষণ প্রদান, পর্যটকদের করণীয় ও বর্জনীয় বিষয় নিয়ে প্রচার ও প্রচারণা চালানো, হেল্প ডেস্ক, ওয়াচ টাওয়ার স্থাপনের মাধ্যমে পর্যটকদের কাছে তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করা, পর্যটন স্পট কেন্দ্রিক কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, আগে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন স্পটে পর্যটকদের ছবি তোলার নামে বেশি টাকা আদায়, গোপনে ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা হাতিয়ে নেয়া হতো। অটোরিকশায় বাড়তি ভাড়া নেয়া হতো। সৈকতে গেলে নানাভাবে নারী পর্যটকরা হেনস্তার শিকার হতো। এখন ট্যুরিস্ট পুলিশের নানামুখী তৎপরতায় পর্যটক হয়রানি কিছুটা হলেও কমেছে। আর বিদেশি পর্যটকরা যাতে নিরাপদে দেশের বিভিন্ন স্পটে যেতে পারে তার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশের সদর দপ্তর থেকে জানা গেছে, পর্যটকদের নিরাপত্তা বাড়াতে পুলিশের জনবল আরও বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বেশি জনবল হলে স্পটগুলোতে দিনে-রাতে পালাক্রমে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা যাবে। এখন জেলা পুলিশ, র্যাব সদস্য ও আমর্ড পুলিশ নিরাপত্তায় সহায়তা করছেন বলে জানা গেছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশের মিডিয়া শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার খন্দকার খালিদ বিন নূর জানায়, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ সারাদেশে ১৩০টি পর্যটন স্পটে এখন ট্যুরিস্ট পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। সদর দপ্তর থেকে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন। সিনিয়র অফিসাররা স্পটগুলোর নিরাপত্তা পরিদর্শন করে গাইডলাইন দিচ্ছেন। পর্যটক বাড়ানোর জন্য সবধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক: থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্তে নতুন করে সংঘর্ষ
সারাদেশ: মোংলায় চোলাই মদসহ স্বামী স্ত্রী আটক