image

কালিহাতীতে সরিষা বাম্পার ফলনে লাভের স্বপ্ন সরিষা ও মধু চাষিদের

মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতিনিধি, কালিহাতী, (টাঙ্গাইল)

টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে বিস্তীর্ণ সরিষা ফুলের হলুদ মাঠজুড়ে। চলতি রবি মৌসুমে উপজেলায় ৫.৭০৫ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৫ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। এদিক উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে মধু সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মৌচাষিরা। উপজেলার কোকডহরা ইউনিয়নের আগ চারান, পাছ চারান ও টেংগুরিয়া গ্রামে সরিষার ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করতে আসছেন বিভিন্ন জেলার মৌচাষিরা। এবার সরিষার ফলন ভালো হওয়ায় টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন এলাকায় মধু আহরণও আশানুরূপ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মৌচাষিরা।

এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৩৩০টি মৌ বাক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব মৌ বাক্স থেকে মধু সংরক্ষণের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।

জেলার মধুপুর উপজেলার দুখোলা গ্রামের বাসিন্দা মৌচাষি আব্দুস সাত্তার জানান, তারা কয়েকজন মিলে কালিহাতী উপজেলায় মধু সংগ্রহ করতে এসেছেন। উপজেলার কোকডহরা ইউনিয়নের চারান গ্রামের বিস্তীর্ণ সরিষা ক্ষেতে ১০৫টি মৌ বাক্স বসিয়েছেন।

এসব বাক্স থেকে প্রতি সপ্তাহে গড়ে প্রায় সাড়ে ৩২০ কেজির মতো মধু পাওয়া যাবে। ওইসব বাক্স থেকে হাজার হাজার মৌমাছি উড়ে গিয়ে মধু সংগ্রহে ঘুরে বেড়াচ্ছে সরিষা ফুলের মাঠে। তিনি আরো জানান, মধু সংগ্রহের জন্য স্টিল ও কাঠ দিয়ে বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে বাক্স। যার ওপরের অংশটা মোড়ানো কালো রঙের পলিথিন ও চট দিয়ে।

বক্সের ভেতরে কাঠের তৈরি ৪-৮ পর্যন্ত ফ্রেমের সঙ্গে মোম দিয়ে বানানো এক ধরনের সিট বিশেষ কায়দায় লাগানো থাকে। পরে বাক্সগুলো সরিষা ক্ষেতের পাশে সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়। পাশাপাশি বাক্সগুলোর ভেতরে দেওয়া হয় রানি মৌমাছি।

যাকে ঘিরে আনাগোনা করে হাজারো পুরুষ মৌমাছি। রানির আকর্ষণে সরিষা ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে মৌমাছিরা। একটি রানি মৌমাছির বিপরীতে প্রায় তিন হাজারের মতো পুরুষ মৌমাছি থাকে একেকটি বাক্সে। এসময় তিনি আরও বলেন, মৌমাছিতে টইটুম্বুর বাক্সগুলো সরিষা ক্ষেতের লাগোয়া স্থানে সারিবদ্ধভাবে রেখে দেওয়া হয়। এরপর সেই সব বাক্স থেকে সরিষা ক্ষেতের ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে চলে আসে বাক্সে প্রশিক্ষিত মৌমাছিরা।

চারানের কৃষক আবু শাহান শাহা খান ও স্বাধীন খান জানান, আমি প্রতি বছর ৫শত শতাংশ জমিতে সরিষা চাষ করি। এবছরও সরিষা লাগিয়েছি আশ করি আবহাওয়া ভালো থাকলে লাভবান হবো। সরিষার বিক্রির টাকা দিয়ে ধানের জমি চাষ করতে পারবো।

এসময় কোকডহরা ইউনিয়নের চারান ব্লকের উপসহকারী কৃষি অফিসার হোসনে আরা, কোকডহরা ব্লকের উপসহকারী কৃষি অফিসার আবুল হোসেন ও বলধী ব্লকের উপসহকারী কৃষি অফিসার উজ্জল বলেন, আমরা নিয়মিত কৃষকদের উঠান বৈঠকের মাধ্যমে সেবা মূলক পরামর্শ দিয়ে থাকি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারহানা মামুন জানান, তেল জাতীয় ফসলের আওতায় ও বিভিন্ন প্রকল্পের প্রদর্শনী প্লটের জন্য মোট পাঁচ হাজার কৃষকের মাঝে বিনামূল্যে বীজ, সার ও কীটনাশক বিতরণ করা হয়েছে। কৃষি প্রণোদনা কর্মসূচির চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল

৫৭০৫ হেক্টর, বিপরীতে ৫ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে বারি-১৪, বারি-১৫, বারি-১৭, বিনা-৪ ও বিনা-৯সহ অন্যান্য স্থানীয় জাতের সরিষা সরিষা চাষ হয়েছে। এজন্য উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের সবসময় পরামর্শ দিচ্ছেন। আবহাওয়া বেশ অনুকূলে হওয়ায় ফলন ভালো হবে বলেও আশা করছেন তিনি।

এছাড়া বাক্স পদ্ধতি ব্যবহার করে বাণিজ্যিকভাবে এসব সরিষা ফুল থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ৩৩০টি মৌ বাক্সের মাধ্যমে মধু সংগ্রহ করা প্রস্তুতি চলছে। তিনি জানান, সরিষা ফুল থেকে সংগ্রহ করা মধু গুণে ও মানে অত্যন্ত ভালো। সরিষা ফুলের মধুতে কোনো প্রকার ভেজাল থাকে না। একেবারে খাঁটি। আর এভাবে অনেকটা সহজ প্রক্রিয়ায় মধু আহরণের মাধ্যমে বাড়তি আয় করতে পারেন সংশ্লিষ্টরা।

তিনি আরও জানান, সরিষা ক্ষেতে মৌমাছির বিচরণ থাকায় ফুলের পরাগায়নে সহায়তা হয়, ফলে সরিষার ফলনও হয় বেশি। প্রতি বছরই ৩৫-৪৫ ভাগ জমিতে মৌবাক্স স্থাপন করা হয়। সরিষার বাজার ভালো থাকায় চাষিদের ও মৌ বাক্স স্থাপনকারীদের উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও আমরা নানাভাবে কৃষকদের পরামর্শ ও উৎসাহিত করছি যাতে সরিষা ক্ষেতে মৌ বাক্স স্থাপনের মাধ্যমে মৌচাষ করে তারা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারেন। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে। কৃষকরা আগ্রহ প্রকাশ করলে তাদের জন্য প্রয়োজনে আবারও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

সম্প্রতি