ভোলার লালমোহনের যুবক মোহাম্মদ হোসেন। গত ৫ বছর ধরে বাড়ির অঙিনায় বিভিন্ন জাতের বরই চাষ করছেন। এ মৌসুমে তার বাগানে সর্বোচ্চ বরইয়ের ফলন হয়েছে। বাড়ির আঙিনার ১৬০ শতাংশ জায়গাজুড়ে যুবক মোহাম্মদ হোসেনের বরইয়ের বাগান। এ বছর প্রায় ১৬ লাখ টাকার বরই বিক্রির আশা করছেন তিনি। হোসেন উপজেলার রমাগঞ্জ ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের পূর্ব চরউমেদ এলাকার হাজী জালাল আহমেদের ছেলে। বর্তমানে তার বাগানে রয়েছে চার জাতের বরই। বাগানের গাছগুলোতে এখন থোকায় থোকায় ঝুলছে বরই। এরইমধ্যে তার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে বিভিন্ন এলাকার প্রায় ১৬ জন চাষী বরই এর চাষ শুরু করেছে। তাদের বাগান প্রস্তুত ও গাছ লাগানোসহ বিভিন্ন পরামর্শ এবং নিজে গিয়ে হাতে কলমে শিখিয়ে দিয়েছেন তিনি। বরই চাষি যুবক মোহাম্মদ হোসেন জানান, গত ৫ বছর ধরে আমি এই খামারটি করেছি। ৫ বছর পূর্বে শুরুতে আমাদের পতিত এক একর জায়গায় বরই গাছ দিয়ে শুরু করি। বরইতে ভালো লাভ হওয়ায় প্রতি বছর যায়গা ও গাছ বাড়াতে থাকি। বর্তমানে ১৬০ শতাংশ জমিতে বরই এর চাষ করেছি।
এবছর দিনাজপুরের হাজী দানেশ কৃষি ইউনিভার্সিটির নার্সারি থেকে থেকে পরামর্শ নিয়ে বল সুন্দরী, থাই আপেল কুল, চায়না টক মিষ্টি কুল ও ভারত সুন্দরী জাতের বরইয়ের চারা এনে রোপণ করি। বর্তমানে আমার বাগানে ১৬০ শতাংশ জমিতে চারশত বরই গাছ রয়েছে। এবছর আবহাওয়া অনুকুলে না থাকায় বরই এর ফলন বেশি ভালো হয়নি। তারপরেও অন্যান্য চাষীদের তুলনায় আমার ফলন সবচেয়ে ভালো হয়েছে। এরমধ্যে ২ হাজার কেজি চায়না টক মিষ্টি কুল প্রায় আড়াই লাখ টাকার বরই বিক্রি করেছি। প্রতি কেজি বরই পাইকারি একশত ত্রিশ টাকা এবং খুচরা একশত পঞ্চাশ টাকা করে বিক্রি করছি। বিভিন্ন এলাকার মানুষ ও পাইকারগণ আমার খামার থেকেই বরই কিনে নিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে গাছগুলোতে যে পরিমাণ ফলন রয়েছে তাতে শেষ পর্যন্ত প্রায় ১৬লাখ টাকার বরই বিক্রি করতে পারবো ইনশাআল্লাহ। আমার বরই বাগান দেখে ইতোমধ্যে আমার কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে ১৬ জন চাষী বরই এর চাষ শুরু করেছে।
বরই চাষি হোসেন আরো জানান, আমার বরই বাগানে চারজন শ্রমিক নিয়মিত কাজ করেন। তাদেরকে দৈনিক আটশত টাকা করে মজুরি দিচ্ছি। তাদের মজুরি, বাগানের কীটনাশক, সার এবং সেচ খরচসহ সব মিলিয়ে ছয় লাখ টাকার মতো এই বরই বাগানের পেছনে ব্যয় হয়েছে। তবে মৌসুম শেষে সব ঠিক থাকলে ১৬ লাখ টাকার বরই বিক্রি করতে পারবো এবং অন্তত দশ লাখ টাকা লাভ হবে বলে আশা করছি। পহেলা অক্টোবর থেকে এবছর বরই বিক্রি শুরু করেছি এবং আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত বিক্রি করতে পারব। আমি পরিকল্পনা করেছি একের পর এক ফল আবাদের চেষ্টা করবো। সামনে কমলা ও মালটার চাষ শুরু করবো।
হোসেনের বরই বাগানের শ্রমিক মো. আশ্রাফ আলী, মো. কবির ও মো. হোসেন জানান, আমরা মোট চারজন এই বরই বাগানে নিয়মিত কাজ করি। বাগান মালিক আমাদেরকে ঠিকমতো পারিশ্রমিক দেন, এতে করে পরিবার-পরিজন নিয়ে আমরা আল্লাহর রহমতে ভালোভাবে চলতে পারছি।
বরই চাষি মোহাম্মদ হোসেনের প্রতিবেশী মো. খোকন, মো. হেলাল তালুদার বলেন, আমাদের প্রতিবেশী যুবক মোহাম্মদ হোসেন বরই বাগান করে ভালো সফলতা পেয়েছেন। তার বাগানে অনেক ভালো ফলন রয়েছে। এসব ফলন বিক্রি করে তিনি ভালো লাভবান হবেন। তার বাগানের বরই অনেক সুস্বাদু ও মিষ্টি। কম দামে তার বাগান থেকে আমরা টাটকা বরই কিনতে পারছি। এছাড়া যুবক হোসেনের সফলতা দেখে আমরাও বরই চাষের কথা ভাবছি।
এ বিষয়ে লালমোহন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. আবু হাসনাইন বলেন, হোসেন নামের ওই চাষী প্রতি বছর বরই এর ভালো ফলন পাচ্ছেন। তিনি সম্পূর্ণ হাইজানিক পদ্বতিতে বরই চাষ করছেন। ওনার বরইগুলো খুবই রসালো এবং মিষ্টি। আমরা কয়েকবার ওই বাগান পরিদর্শন করেছি। এবছরও ফলন খুব ভালো হয়েছে। এছাড়া বানিজ্যিকভাবে নতুন করে কেউ বরই বাগান করতে আগ্রহী হলে উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে সর্বাতœক সহযোগিতা করা হবে।