image
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

হাতিয়ায় সক্রিয় চোরাই তেল সিন্ডিকেট, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতিনিধি, সুবর্ণচর (নোয়াখালী)

নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে চোরাই ডিজেল, পেট্রোল ও অকটেনের অবৈধ ব্যবসা চললেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা চোখে পড়ছে না। হাতিয়া থেকে নলচিরা ঘাট পর্যন্ত নৌপথ ও সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক সড়কগুলো বর্তমানে চোরাই তেল পরিবহন ও বিক্রির নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

হাতিয়ার সাথে মূল ভূখন্ডের গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ঘাটগুলোর মধ্যে নলচিরা, চরচেঙ্গা ও তমরুদ্দি উল্লেখযোগ্য। নদী পার হয়ে সোনাপুর থেকে দক্ষিন অঞ্চলে চেয়ারম্যান ঘাট পর্যন্ত আঞ্চলিক মহাসড়কটি সুবর্ণচর উপজেলার চরজব্বর থানার মোড় হয়ে ৪নং ঘাট চরজব্বর পুলিশ ফাঁড়ির সামনে দিয়ে হাতিয়া উপজেলার সাথে সংযুক্ত চেয়ারম্যান ঘাট নামক স্থানে গিয়ে মিলিত হয়েছে। স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, এই সড়ক ও এর সাথে সংযুক্ত গ্রামীণ সড়কগুলো ব্যবহার করে চোরাই তেল কারবারি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে আসছে হাতিয়া উপজেলার বিশেষ করে চরঈশ্বর ও নলচিরা ইউনিয়নের মাঝে উক্ত ঘাট এলাকায় অবৈধ ব্যবসা আরও বেপরোয়া রূপ নিয়েছে। কলেজ গেইট থেকে নলচিরা ঘাট পর্যন্ত প্রায় ৪০ থেকে ৫০টি গোডাউন রয়েছে, যেগুলোতে দিন-রাত চোরাই তেল মজুত ও বিক্রি করা হচ্ছে।

দিনের বেলা সীমিত পরিসরে লেনদেন হলেও রাত বারোটার পর বড় পরিসরে কেনাবেচা হয় ভোররাত পর্যন্ত। সমুদ্র পথে সরকারি-বেসরকারী কোম্পানীর তেল ডিপোতে নেওয়ার পথে ছোট-বড় নৌকা নিয়ে সিন্ডিকেটের সদস্যরা জাহাজ থেকে ব্যারেল গুলো অল্প দামে ক্রয় করে বেশি দামে বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের অর্থ। যার ফলে বিপুল পরিমানে এসব জ্বালানী তেল থেকে রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে দেশ।

জাহাজ থেকে তেল বিক্রি ও মজুদের এমন তথ্য উপাত্ত প্রতিদেককের নিকট সংরক্ষণ রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র দাবি করেছে, সংশ্লিষ্ট এলাকার কিছু অসাধু ব্যক্তি ও সিন্ডিকেটের কারণে এই ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে না। অতীতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলেও বাস্তবে কোনো দৃশ্যমান পরিবর্তন হয়নি। স্থানীয় সূত্রে জানাযায়, আওয়ামী লীগ পতনের পর নতুন করে চোরাই তেল সিন্ডিকেট চক্রিয় নেতৃত্বে রয়েছে প্রভাবশালী একটি রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠনের লোভী কিছু সদস্যরা। ঐ দলের ৪০-৫০ জনের মতো দলীয় অঙ্গসংগঠনের পদ প্রত্যাশী কর্মী মিলে ৮টি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছেন বলে তথ্য উপাত্ত পাওয়া গেছে।

এদের মধ্য নলচিরা ঘাটে বাসু মেম্বার, আলা উদ্দিন সারেং,ইব্রাহিম,সাহেদ, মঞ্জু সারেং, আব্দুরব মেম্বার, ইরাক সারেং এবং আজিমের নেতৃত্বে সিন্ডিকেট গুলো বেশি সক্রিয়। তাঁরা প্রতিনিয়ত প্রকাশ্যভাবে চোরাই তেল, ডিজেল, অকটেন, পাম ওয়েল, কয়লা, অনুমতিবিহীন সিমেন্ট, ইউরিয়া সার মায়ানমার সহ জেলার বিভিন্ন স্থানে রমরমা বাণিজ্যে করার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

প্রশাসন মাঝে মাঝে সংবাদ প্রচার হলে লোভ দেখানো অভিযান পরিচালনা করে নিশ্চুপ হয়ে যায়। এর ফলে সচেতন নাগরিক মহলে ক্ষোভ সৃষ্টি দেখা যাচ্ছে প্রশাসনের প্রতি। আইন অনুযায়ী জ্বালানি তেল বিক্রি করতে ট্রেড লাইসেন্স, বিস্ফোরক লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, এজেন্সি লাইসেন্স ও জেলা প্রশাসনের অনুমতি প্রয়োজন। তবে সংশ্লিষ্ট অধিকাংশ দোকান ও গোডাউনের এসব কাগজপত্র নেই বলে অভিযোগ রয়েছে।

অভিযুক্ত চোরাই তেল সিন্ডিকেটের একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা হলে তাঁরা জানান, আমরা টাকা দিয়ে তেল কিনে বিক্রি করি এটা অবৈধ কেন? আজিম নামে সিন্ডিকেটের এক সদস্য এ প্রতিদেককে দাম্ভিকতার সাথে বলেন, জাহাজ থেকে টাকা দিয়ে তেল কিনে ব্যবসা করি। তাই এটা বৈধ ব্যবসা তার। অপরদিকে ইরাক নামে সিন্ডিকেটের আরেক সদস্য বলেন, আপনি নোয়াখালীর লোক এটা নিয়ে কেন এতো মাথাব্যাথা আপনার? এখানে তো অনেক সাংবাদিক আছে। সব দিক ম্যানেজ করে ব্যবসা করছি এই বলে ফোন কেটে দেন। পরে বার বার ফোন দিলেও রিসিভ করেননি।

চক্রটি এটাও দাবি করে তেল বিক্রির জন্যে জেলা প্রশাসন, বিষ্ফোরক অধিদপ্তরের সকল অনুমতি তার রয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গুলোর সাথে কথা বলে এমন কোন ডকুমেন্ট তার নামে পাওয়া যায়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চোরাই তেল ব্যবহারের ফলে একদিকে যানবাহনের ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে অগ্নিকা-ের ঝুঁকিতে রয়েছে আশেপাশের বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি সরকার প্রতিবছর বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে। এ বিষয়ে দ্রুত প্রশাসনিক পদক্ষেপ ও কার্যকর নজরদারি না বাড়ানো হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আলা উদ্দিন জানান, আমরা নলচিরা ঘাটে কয়েকটি মোবাইল কোর্ট পরিচালা করেছি। অনেক দিন বন্ধ ছিলো এসব,এখন যদি পূনরায় চালু হয় আমরা দ্রুত আইনগত পদক্ষেপ নিবেন বলে নিশ্চিত করেন এ প্রতিবেদককে।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

সম্প্রতি