মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার টেংগারচর ইউনিয়নের টেংগারচর গ্রাম সংলগ্ন তিন ফসলি কৃষিজমি ও বসতবাড়ির ওপর দিয়ে উচ্চক্ষমতার বিদ্যুৎ সঞ্চলন লাইন ও টাওয়ার নির্মাণের উদ্যোগকে ঘিরে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন এলাকাবাসী। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে কৃষিজমি, বসতভিটা ও পরিবেশ মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়বে। তিন ফসলি উর্বর জমিতে ফসল উৎপাদন ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার পাশাপাশি বসতবাড়ি নির্মাণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে, কমে যাবে জমির ন্যায্য মূল্য, বিপন্ন হবে কৃষকের জীবন-জীবিকা।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যুৎ লাইনের টাওয়ার নির্মাণের জন্য তিন ফসলি কৃষিজমির মাঝ দিয়ে একটি কাঁচা রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। জমির এক পাশে অস্থায়ী একটি শেড নির্মাণ করে সেখানে বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী রাখা হয়েছে। তবে ঘটনা স্থলে কাজ বন্ধ থাকতে দেখা যায়। এ সময় শেডের ভেতরে তিনজন শ্রমিক বসে ছিলেন। কাজটি কোন কোম্পানির আওতায় পরিচালিত হচ্ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, গজারিয়াকে শিল্পাঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার নামে একের পর এক বিদ্যুৎ লাইন ও টাওয়ার স্থাপন করা হচ্ছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে সীমিত কৃষিজমি ও আবাসিক এলাকার ওপর। এতে করে ঐতিহ্যবাহী কৃষিনির্ভর জনপদ ধীরে ধীরে নিশ্চিহ্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। টেংগারচর গ্রামের বাসিন্দা জাকারিয়া প্রধান, শাহ আলম মিয়াসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, উন্নয়নের নামে কৃষি ও বসতভিটা ধ্বংস করা হলে তা কখনোই টেকসই উন্নয়ন হতে পারে না। তারা দ্রুত পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করে বিকল্প পথে বিদ্যুৎ লাইন ও টাওয়ার স্থাপনের দাবি জানান। দাবি মানা না হলে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পাশাপাশি বৃহত্তর কর্মসূচির হুঁশিয়ারিও দেন তারা। এ বিষয়ে টেংগারচর ইউনিয়ন কৃষক দলের সভাপতি আসিব ইকবাল লিটন বলেন,গজারিয়া শিল্পাঞ্চলে রূপ নিচ্ছে, কিন্তু আমাদের ইউনিয়নে জমির পরিমাণ খুবই সীমিত। বসতবাড়ি ও তিন ফসলি জমির ওপর দিয়ে বারবার বিদ্যুৎ লাইন ও টাওয়ার বসানো হলে আমরা কোথায় যাব? এতে জমির দাম কমছে, বাড়িঘর নির্মাণ করা যাচ্ছে না। আমরা জানতে পেরেছি, একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে এই লাইন আমাদের গ্রামের ওপর দিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চলছে। প্রয়োজনে জান দেব, তবু আমাদের জমির ওপর দিয়ে এই লাইন নিতে দেব না। এদিকে, টেংগারচর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এসএম সালাহউদ্দিন বলেন, এই লাইন ও টাওয়ার নির্মাণ হলে এলাকার বহু কৃষক ও বাড়ির মালিক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সাধারণ মানুষের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির উচিত বিকল্প পথে সঞ্চালন লাইন নেওয়া। তিনি আরও বলেন, উন্নয়ন অবশ্যই প্রয়োজন তবে তা যেন মানুষের জীবন, কৃষি ও পরিবেশ ধ্বংসের বিনিময়ে না হয়। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মানবিক ও দায়িত্বশীল হস্তক্ষেপ কামনা করেন