image

ত্রিফসলী মাটি গিলে খাচ্ছে অবৈধ ইটভাটা গৌরীপুরে হুমকিতে প্রকৃতি ও খাদ্য উৎপাদন

বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতিনিধি গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)

ত্রিফসলী জমিতে একের পর এক ইটভাটা স্থাপিত হচ্ছে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে। ইটভাটাগুলোতেও গিলে খাচ্ছে, ফসলি জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি (টপসয়েল)। বিষাক্ত ধোয়ায় পুড়ছে ফসলের মাঠ, বনজ-ফলজ বাগান। প্রকৃতি হারাচ্ছে ভারসাম্য। প্রতিবছর কমছে ফসলি জমি খাদ্য উৎপাদনে বাড়ছে অশনিসংকেত কৃষি বিভাগের।

উপজেলার অচিন্তপুর, বোকাইনগর, ডৌহাখলা ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, ইটভাটায় মাটি নেয়ার জন্য ত্রিফসলী জমির টপসয়েল খেটে নেয়া হচ্ছে। এসব ফসলি জমিতে দেয়া হচ্ছে পুকুর। অনুমোদন ছাড়াই ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন হচ্ছে। তাছাড়া মাটিবাহী মাহিন্দ্র গাড়ি ও ট্রাক্টর চলাচলের জন্য জমির মাঝখান দিয়ে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। মাটি ভর্তি এসব ট্রাক্টর-ট্রলির ভারী চাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কাঁচা-পাকা সড়ক। ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের রামগোপালপুরে ৪টি ইটভাটা মাটিভর্তি করে সড়কে চলায় মূল সড়ককে ধ্বংস করে দিচ্ছে। গৌরীপুর-কলতাপাড়া সড়কের গুজিখাঁ ও গৌরীপুর-শাহগঞ্জ সড়কের অচিন্তপুর, দারিয়াপুর এলাকায় ইটভাটার মাটি পরিবহনের কারণে পরিত্যক্ত মাটি পুরো রাস্তাকে বিপদজ্জনক করে তুলছে। প্রচন্ত কুয়াশায় পাকা সড়কে মাটি পিচ্ছিল হওয়ায় ঘটচ্ছে দুর্ঘটনা।

ইটভাটার বিষাক্ত ধোয়ায় গাছপালায় মড়ক দেখা দিচ্ছে। পুড়ে যাচ্ছে ফসলি জমি। ভাটার ধোয়ায় সর্দি-কাশি, শ^াসকষ্ট ও নানা রকম রোগ-ব্যাধির সৃষ্টি হয় বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ করেন। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুসারে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও উন্নয়নের স্বার্থে আধুনিক প্রযুক্তির অর্থাৎ জিগজ্যাগ ক্লিন, হাইব্রিড হফম্যান ক্লিন, বার্টিক্যাল শফট ক্লিন, টানেল ক্লিন বা অনুরূপ উন্নততর কোনো প্রযুক্তির ইটভাটা স্থাপন করার বিধান রয়েছে। তাছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক কিলোমিটারের মধ্যে, আবাসিক ও জনবসতি, সংরক্ষিত এলাকার বনভূমি ও জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ইটভাটা করা যাবে না এবং সরকারি বনাঞ্চলের সীমারেখা হতে দুই কিলোমিটার দূরত্বে ভাটা স্থাপন বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা কেউ মানছে না।

কৃষি অফিস সূত্র জানায়, এ উপজেলায় ২৭৭ বর্গকিলোমিটারে আয়তন, যা হেক্টরে ২৭হাজার ৭শ হেক্টর। এরমধ্যে এক ফসলি জমি ৯৮০ হেক্টর, দুই ফসলি জমি ১৭হাজার ৭৭০ হেক্টর, তিন ফসল ও তার অধিক ফলনযোগ্য জমির পরিমান ৩৫০ হেক্টর। বেলমাটি ১হাজার ৮০১ হেক্টর, দোঁআশ মাটি ৮হাজার ৩৮০ হেক্টর, পলি মাটি ৯১০ হেক্টর। উঁচু জমি ৩হাজার ৮৮৬ হেক্টর, মধ্যম উঁচু জমি ৯হাজার ৮২৮ হেক্টর, মধ্যম নিচু জমি ৫হাজার ৪৮৭ হেক্টর, নিচু জমি ৩হাজার ৩২৯ হেক্টর। উপজেলার সবকয়টি ইটভাটা হয়েছে ফসলি জমিতে।

কৃষি বিভাগের সাবেক উপসহকারী এক কৃষি অফিসার জানান, রামগোপালপুর ইউনিয়নের ইটভাটাগুলো দ্বিফসলি জমিতে স্থাপিত। বোকাইনগরের একটি ইটভাটা দ্বিফসলি জমিতে আর অচিন্তপুর ও বোকাইনগরের অপর ইটভাটাগুলো ত্রিফসলি জমিতে স্থাপন করা হয়েছে। এ কর্মকর্তা আরও জানান, প্রতি বছর শত শত হেক্টর জমির টপসয়েল কেটে নেয়া হচ্ছে। এতে ফসলের ও প্রকৃতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ। এভাবে মাটি কাটা হলে এক সময় খাদ্য উৎপাদন চরমভাবে ব্যাহত হবে। অপরদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, গৌরীপুরের কোনো ইটভাটার বৈধ লাইসেন্স নেই। সবকয়টি ইটভাটাই অবৈধ।

জানা গেছে, উপজেলার গাজীপুর মামদীপুর রয়েছে মো. রফিকুল ইসলামের ইকো ব্রিক, বলুহায় শামছু ও সোহেলের রয়েছে এস এস ব্রিকস, মো. শাফায়েত ভুইয়ার শাফায়েত ব্রিকস, মো. বাবুল মিয়ার এন জি এম ব্রিকস, বেরাটি গ্রামে শামছুল ইসলাম ভুইয়ার শামছু ব্রিকস, পুম্বাইলে মো. মতিউর রহমান মতির মাইসা ব্রিকস, রসুলপুরে মো. মোসলেম উদ্দিনের আয়েশা ব্রিকস, দারিয়াপুরে মো. হাবিবুল্লাহ হাবিবের এস এইচ বি ব্রিকস, মো. তারা মিয়ার মদিনা ব্রিকস, অচিন্তপুরে মো. জায়েদুর রহমানের জননী ব্রিকস, বোকাইনগরের ডালিয়াবিলে মো. মামুন খানের খান ব্রিকস, কুটুরগাঁও চরপাড়ায় সাব্বির হোসেন সাব্বিরের বি আর বি (মেসার্স ঢাকা ব্রিকস), গুজিখাঁয় মো. আব্দুল গণির একতা ব্রিকস, চাচা-ভাতিজা ব্রিকস, অচিন্তপুর ইউনিয়নের সিংরাউন্দে মাইনুস সালাম রিপনের মেসার্স তাজ ব্রিকস রয়েছে। এছাড়াও বন্ধ থাকা মাহমুদ হাসান ভূইয়া (জলিল ভূইয়া) এর বিসমিল্লাহ ব্রিকস, এবার নতুনভাবে চালু করা হয়েছে। বন্ধ রয়েছে মো. লিটন মিয়ার তানিয়া ব্রিকস ও শাপলা ব্রিকস।

উপজেলা কৃষি অফিসার নিলুফার ইয়াসমিন জলি জানান, ফসলি জমির প্রাণ বলা হয় টপ সয়েল। জমির প্রথম ৮ থেকে ১০ ইঞ্চিকে বলা হয় টপ সয়েল, এখানে থাকে মাটির জৈব পদার্থ। টপ সয়েল কর্তন করা হলে ওই জমি উর্বরতা শক্তি হারায় এবং দীর্ঘমেয়াদী উৎপাদনশীলতা কমিয়ে দেয় এবং ফসল উৎপাদন কমে যায়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফিয়া আমীন পাপ্পা জানান, ইটভাটায় ইট তৈরির জন্য মাওহা ইউনিয়নর টপসয়েল কাটার অভিযোগ পাওয়া গেছিলো। সেখানে বন্ধ করা হয়েছে। অন্য কোথাও অভিযোগ পেলে সেখানে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

সম্প্রতি