image
পটুয়াখালী : অবহেলিত সুপারি গাছের খোল ব্যাবহারে সম্ভাবনার নতুন স্বপ্ন -সংবাদ

সুপারি গাছের খোলে তৈরি হচ্ছে পরিবেশবান্ধব তৈজসপত্র

বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতিনিধি, পটুয়াখালীতে

সুপারি গাছের খোল এখন আর ফেলনা নয়। অবহেলিত সুপারি গাছের খোল ব্যাবহারে সম্ভাবনার নতুন স্বপ্নের সফলতা পেয়েছেন তৌকির আহমেদ সাবাব নামের এক তরুন। বাড়ির আঙিনা ও বাগানের ফেলনা বা বর্জ সুপারির খোল দিয়ে তৈজসপত্র তৈরী করে তিনি মানুষের মাঝে আশার আলো দেখিয়েছেন। সুযোগ হয়েছে বেকাদের কর্মসংস্থান।

পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার রাজাখালী গ্রামের শিক্ষিত সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান তৌকির আহমেদ সাবাব’র ‘আলপথ গ্রুপ’-নামের এর দৃষ্টিনন্দন কারখানা গড়ে তোলেন। এই তরুন উদ্যোক্তা মানুষের বাড়ির আঙিনা ও বাগানের ফেলনা বা বর্জ সুপারির খোল দিয়ে পরিবেশবান্ধব তৈজসপত্র তৈরীর পাশাপাশি প্লাস্টিক রিসাইক্লিংও করে তাক লাগিয়েছেন। তৌকিরের দাদা আজিজ উদ্দিন আহমেদ, যিনি জেলা প্রশাসক ছিলেন, রাজাখালী এলাকায় কলেজ, মাদ্রাসাসহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে গেছেন। মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছা আর সৎ পরিশ্রমের গল্পই নাতিকে সাহস যুগিয়ে দেয়।

দাদাকে দেখেই বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখার মন্তব্য করেন তৌকির। তিনি শিক্ষা দিয়েছেন-মানুষকে কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে। আমি ভেবেছি, চাকরি করব না, বরং মানুষকে চাকরি দেব। এই স্বপ্নই এলাকার মানুষের বেকার দূর করার চাবিকাঠি উদ্যোক্তা তৌকির আহমেদ সাবাব ।

স্বপ্নের ‘আলপথ গ্রুপ’ : পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার গ্রামীন জনপথ রাজাখালীর মধ্যেই ‘আলপথ গ্রুপ’-এর দৃষ্টিনন্দন কারখানা। পৈত্রিক ৩৫ শতক জমির ওপর সাজানো-গোছানো স্থাপনা। উদ্বোধনের পর থেকেই কর্মসংস্থানের আশা-প্রত্যাশা মনে রেখে স্থাণীয় যুবক যুবতিদের মাঝে প্রানের সঞ্চার যুগীয়েছে ‘আলপথ গ্রুপ। কারখানার ভিতরে শৈল্পিক নির্মান কর্মীদের সুপারি খোল নিয়ে ব্যস্ততার মাঝে বিভিন্ন মেশিনের টুংটাং শব্দ । টেবিলে পরিপাটি করে সাজানো আছে তৈরী করা প্লেট, বাটি, লবণদানি, চামচ, কাঁটা চামচ। উদ্যোক্তা তৌকির বললেন,সুপারি খোল মাটিতে মিশে যায়, পচে। তাই এটিই পরিবেশের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ উপাদান। ভাবলাম, তাহলে মানুষ প্লাস্টিক কেন ব্যবহার করবে?

জীবিকা ও উৎপাদনে হাসির ঝলক : কারখানার ভেতর ঢুকতেই দেখা গেল কয়েকজন নারী কর্মী সুপারির খোল রোদে শুকাচ্ছেন, কেউ আবার গ্লাভস পরে মেশিনে খোল দিচ্ছেন। দুই-তিন মিনিটেই বেরিয়ে আসছে ঝকঝকে প্লেট।

সেখানকার নারী কর্মী মোসা. সুখি আক্তার, মোসা. শিমুল আক্তার, ফরিদা বেগম, মোসা. বিথী আক্তারের কথায় বললেন, এখন গ্লাভস ব্যবহার করলে হাত পোড়ে না, হাত চালাতে খুব স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। আমাদের আত্মবিশ্বাসই যেন পুরো কারখানার প্রাণ। আমরা কোনো দিন ভাবিনি সুপারি খোল দিয়ে এরকম সুন্দর জিনিস তৈরি করা যায়। প্রশিক্ষণ পেয়েছি, এখন নিজেরাই বানাচ্ছি। আগে সংসার চারাতে খুব কষ্ট ছিল, এখন সে কষ্ট লাঘোপ করেছে ‘আলপথ গ্রুপ’।

কারখানার ব্যবস্থাপক মো. জলিলুর রহমান জানান, দেশের সুপারশপ, হোটেল-রেস্তোরাঁ, অনলাইন বাজার-সব জায়গাতেই বাড়ছে পণ্যের চাহিদা। ঢাকাতে আড়ংসহ বেশ কিছু বড় প্রতিষ্ঠান পণ্য নেয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। এখন আমাদের লক্ষ্য-পণ্যকে মানুষের কাছে আরও সহজলভ্য করা। অনটাইম প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে এটি বাজারে ভালোই সাড়া দিচ্ছে। খোল দিয়ে তৈরি প্লেট হাতে নিলেই বোঝা যায়-ওজন আছে, শক্তিও আছে। একবার ব্যবহারে ভাঙেনা, বেঁকেও যায় না। ধুয়ে বহুদিন ব্যবহার করা যায়।

তৌকির বলেন, আমি চাই তরুণরা পরিবেশ নিয়ে সচেতন হোক। তাহলে এই পণ্যের চাহিদা শুধু দেশে নয়, বিদেশেও বাড়বে।

পরিবেশবান্ধব উদ্যোগে সরকারের প্রশংসা : দুমকী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুজর মো. ইজাজুল হক বলেন, সুপারি খোল থেকে তৈজসপত্র তৈরির এই উদ্যোগ সবুজ শিল্পায়নের অনন্য উদাহরণ। পরিবেশ ও অর্থনীতি দুই দিক থেকেই এটি গুরুত্বপূর্ণ। প্রশাসন থেকে সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।

‘আলপথ গ্রুপ’-এর সামনে আরও অনেক পরিকল্পনার কথা জানালেন উদ্যোক্তা তৌকির আহমেদ সাবাব । এর মধ্যে নতুন মেশিন সংযোজন, অনলাইন শোরুম , জেলো-বিভাগে ডিলার নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, নারীকর্মীর সংখ্যা দ্বিগুণ করা, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্য পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া। প্লাস্টিক দূষণে জর্জরিত পৃথিবীতে সুপারি খোলের এমন ইকো-ফ্রেন্ডলি শিল্প নিঃসন্দেহে সময়ের দাবি। আর সেই দাবিকে বাস্তবে রূপ দিয়েছেন তৌকির আহমেদ ও তাঁর সহযাত্রীরা।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

» লালমোহনে ইয়াবাসহ আটক ১

সম্প্রতি