image
ছবি: সংগৃহীত

পীরগাছায় একাধিক শিক্ষকের বিরুদ্ধে জাল সনদে শিক্ষকতা ও পদোন্নতির অভিযোগ

বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতিনিধি, পীরগাছা (রংপুর)

এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হয়েই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান, পরে জাল সনদ দাখিল করে চাকরি স্থায়ীকরণ ও পদোন্নতি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার একাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের বিরুদ্ধে। কোথাও আবার প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ সনদ ছাড়াই বছরের পর বছর আর্থিক সুবিধা ভোগের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার চর রহমত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুবাস চন্দ্র ৬ মার্চ ১৯৯১ সালে রামগোপাল পূর্বপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। অভিযোগ রয়েছে, ওই সময় তিনি এসএসসি উত্তীর্ণ ছিলেন না। পরে চাকরি সরকারি হওয়ার সময় এসএসসি পাসের একটি সনদ দাখিল করেন। সনদ অনুযায়ী তাঁর রেজিস্ট্রেশন নম্বর ৬৪২৬/৮৬, রোল নম্বর ৭৫০, পাসের বছর ১৯৯১ এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধর্মপুর ডিডিএম উচ্চ বিদ্যালয়। তবে অনুসন্ধানে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সনদটি সঠিক নয় বলে প্রত্যয়ন দেন। এ বিষয়ে সুবাস চন্দ্র বলেন, বিদ্যালয় কী প্রত্যয়ন দিল, জানি না। বোর্ড আমাকে সার্টিফিকেট দিয়েছে।

কাশিয়াবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহ আলম ২৩ জুন ১৯৯২ সালে তাজতালুক রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। অথচ তিনি এসএসসি পাস করেন ওই বছরের ১৪ আগস্ট। নিয়োগকালীন সময় তাঁর বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে।

দ্বিতীয় দফায় ২০ নভেম্বর ১৯৯৭ সালে তিনি পুনরায় যোগদান করেন এবং ওই সময় থেকে এমপিওভুক্ত হয়ে বেতন ভাতা গ্রহণ করছেন। অথচ তিনি এইচএসসি পাস করেন ২০০৫ সালে। এ বিষয়ে শাহ আলম বলেন, আমি বুঝতে পারছি, আমার নিয়োগ বিধিসম্মত হয়নি। এতদিন পর যদি ক্ষতিগ্রস্ত হই, তাহলে কিছু করার নেই।

কিসামত ঝিনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক জুলফিকার আলী ২৫ জুন ১৯৯২ সালে যোগদান করেন। তাঁর এসএসসি পাসের তারিখ ১৪ আগস্ট ১৯৯২। অর্থাৎ পাসের আগেই চাকরিতে যোগদান করেন তিনি। জুলফিকার আলী বলেন, আমি এভাবেই চাকরি করে আসছি। জালিয়াতি বুঝি না। যদি জাল হতো, তাহলে এতদিনে ধরা পড়ত।

শিবদেব চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আছিয়া খাতুন দাখিল পাস করেন ৭ মে ২০১২ সালে। অথচ জাতীয়করণ সংক্রান্ত ‘খ’ ফরম অনুযায়ী তিনি ৫ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে দৌলতখাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করেন বলে উল্লেখ রয়েছে। বিদ্যালয়ের মনিটরিং বোর্ড ও মাসিক তথ্যবিবরণীতে আবার প্রথম যোগদানের তারিখ ৩১ ডিসেম্বর ২০১২ উল্লেখ রয়েছে। দাখিল পাসের আগেই চাকরিতে যোগদানের বিষয়ে আছিয়া খাতুন কোনো স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেননি।

উত্তর তালুক কান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হোসনে আরার বিরুদ্ধে সিইনএড বা সিএড প্রশিক্ষণের জাল সনদ দিয়ে উচ্চতর বেতন স্কেল ভোগের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। তাঁর স্বামী আ.লীগ নেতা সানু মিয়া বিষয়টি ম্যানেজের চেষ্টা চালাচ্ছেন।

ছোট হায়াত খাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বুলু মিয়ার বিরুদ্ধে উপজেলা শিক্ষা কমিটির সুপারিশসংবলিত রেজুলেশনসহ পদোন্নতির কাগজপত্র নিজে তৈরি করে উচ্চতর স্কেল গ্রহণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে তিনি কোনো বক্তব্য দেননি।

স্থানীয় অভিভাবক আব্দুস ছালাম বলেন, যাঁরা নিজেরাই নিয়ম না মেনে শিক্ষক হয়েছেন, তাঁদের কাছে আমরা সন্তানদের শিক্ষা গ্রহনের জন্য পাঠিয়ে দিচ্ছি। এতে শিক্ষার মান নিয়ে বড় প্রশ্ন তৈরি হয়।

আরেক অভিভাবক তাজুল ইসলাম বলেন, জাল সনদ দিয়ে চাকরি করে কেউ বেতন–ভাতা নিলে সেটা রাষ্ট্রের ক্ষতি। যোগ্য ছেলেমেয়েরা চাকরি পাচ্ছে না, এটা সবচেয়ে দুঃখের বিষয়। এ বিষয়ে পীরগাছা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে বিধি অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

» লালমোহনে ইয়াবাসহ আটক ১

সম্প্রতি