নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বিভিন্ন গুচ্ছগ্রামে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। অধিকাংশ বসতঘর তালাবদ্ধ থাকলেও অভিযোগ রয়েছে—এই গুচ্ছগ্রামগুলো এখন যৌন ও মাদক ব্যবসা, অনিয়ম, অসামাজিক কার্যকলাপ এবং প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের নিরাপদ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, একাধিকবার সংবাদ প্রকাশের পরও গুচ্ছগ্রামগুলোর বাস্তব চিত্রে কোনো পরিবর্তন আসেনি। বসতঘরগুলো পরিত্যক্ত, অধিকাংশ ঘরে তালা ঝুলছে। অথচ প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষ আশ্রয়ের আশায় দিনের পর দিন অপেক্ষায় রয়েছেন।
এদিকে পৌর শহরের গুচ্ছগ্রামে দীর্ঘদিন ধরে যৌন ও মাদক ব্যবসা এবং নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে সংবাদ প্রকাশ করায় স্থানীয় সাংবাদিক শফিকুল ইসলামকে সন্ত্রাসী দিয়ে হুমকি, অপবাদ রটানো ও হেনেস্তা করার অভিযোগ উঠেছে পৌর গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা লিটন মিয়ার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় এলাকায় তীব্র উত্তেজনা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে গত ২৫ জুন জাতীয় দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকায় “রায়পুরায় আশ্রয়ণের বেশিরভাগ ঘরে তালা, নতুন বরাদ্দের দাবি গৃহহীনদের” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর ৯ জুলাই “প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নিশ্চিত করার আহ্বান” শীর্ষক আরেকটি সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সংস্কার ও সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হলেও অভিযোগ রয়েছে—বাস্তবে যৌন ও মাদক ব্যবসা এবং অনিয়ম বন্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সংবাদ প্রকাশের পরপরই প্রশাসনের ভূমিকা জানতে পুনরায় সরেজমিনে গেলে স্থানীয় এলাকাবাসী অভিযুক্ত লিটন মিয়ার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলে ধরেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ ও একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, গত চার থেকে পাঁচ বছর ধরে লিটন মিয়া গুচ্ছগ্রামে প্রকাশ্যে অসামাজিক কার্যকলাপ চালিয়ে আসছেন। তার ছত্রছায়ায় সেখানে গড়ে উঠেছে মাদক বাণিজ্য ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের একটি শক্ত নেটওয়ার্ক। এসব কার্যকলাপের মাধ্যমেই অল্প সময়ের মধ্যে তিনি পৌর এলাকায় জমির মালিক হয়েছেন এবং নিজেকে ‘স্বাবলম্বী ব্যবসায়ী’ হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন।
এতে প্রশ্ন উঠেছে—যে গুচ্ছগ্রাম প্রকৃত ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য নির্মিত, সেখানে একজন স্বাবলম্বী ব্যক্তি কীভাবে বছরের পর বছর সরকারি আশ্রয়ে বসবাস করছেন? প্রশাসনের তদারকি কোথায়?
এলাকাবাসী আরও জানান, গুচ্ছগ্রামের অধিকাংশ ঘর দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ থাকলেও প্রকৃত ভূমিহীন পরিবারগুলো ঘর পাওয়ার আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। এই চরম বৈষম্য ও অনিয়মের পেছনে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে বলেও অভিযোগ ওঠেছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত লিটন মিয়ার বক্তব্য নিতে গেলে উল্টো সাংবাদিক শফিকুল ইসলামকে বিভিন্ন মোবাইল নম্বর থেকে সন্ত্রাসী দিয়ে হুমকি, অপবাদ রটানো ও হেনেস্তা করার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হলে অভিযুক্তকে ডেকে ‘সমাধানের’ আশ্বাস দেওয়া হয়।
তবে অভিযোগ রয়েছে, এরপরও সাংবাদিককে ফোনে হুমকি দিয়ে বলা হয়
“আপনি কত বড় সাংবাদিক, পারলে গুচ্ছগ্রামে এসে বক্তব্য নেন। এখানে তো আরও ২০–২৫টা ঘরে কেউ থাকে না, সবাইকে একত্র করে নেন।”
একজন দায়িত্বশীল সংবাদকর্মীকে প্রকাশ্যে ভয় দেখিয়ে সত্য প্রকাশে বাধা দেওয়ার এই ঘটনা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য গভীর উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
বিষয়টি রায়পুরা ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। পাশাপাশি আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শও দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
রায়পুরা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান খোকন বলেন,
“গুচ্ছগ্রাম নিয়ে অনিয়মের কথা বললেই যদি সাংবাদিককে হুমকি দেওয়া হয়, তাহলে তা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। শফিকুল ইসলাম একজন সাহসী ও প্রতিবাদী সংবাদকর্মী। তাকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা জানাই এবং দোষীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।”
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: ২৭তম আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে ১টি গোল্ড মেডেলসহ ১১টি পদক অর্জন করল বাংলাদেশ
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলের ১৬ হাজারের বেশি কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিলো বিকাশ
সারাদেশ: পঞ্চগড়ে বড় দিন উদযাপিত