image

বেশি লাভের আশায় সরিষা চাষে ঝুঁকছেন নরসিংদীর চাষিরা

বৃহস্পতিবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতিনিধি, নরসিংদী

স্বল্প সময়ে অধিক লাভ হওয়ায় সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকছেন নরসিংদীর চাষীরা। সামান্য পরিচর্যা আর স্বল্প খরচে চাষ হওয়ায় বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করছেন তারা।সরিষার হলুদ ফুল ও সবুজ গাছে ছেয়ে গেছে দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ।

অগ্রহায়ণ-মাঘ মাসের সময় থেকেই নরসিংদীর ফসলি জমিগুলোয় দেখা যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। ফুলে ফুলে ভরে উঠেছে সরিষার ক্ষেত। আমন ধান কাটার পর কয়েক মাসের জন্য পরিত্যক্ত থাকে কৃষকের জীবিকার একমাত্র উৎস এই কৃষিজমি। আর সেই জমিতেই অতিরিক্ত ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন নরসিংদীর কৃষকরা।সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত যেমন মাঠ, তেমনি ভালো ফলনের হাতছানিতে কৃষকের চোখেমুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাসি। যেন সরিষার হলুদ হাসিতে স্বপ্ন দেখছে কৃষক।

আমন ধান কাটা শেষ হলে ফসলি জমিতে বীজ ছিটিয়ে আর হালকা চাষ দিয়ে করা যায় সরিষার আবাদ। এই শস্য আবাদের পর এ জমিতে অন্য ফসল বেশ ভালো হয়ে থাকে। আমন আর বোরো ধান আবাদের মাঝে যে সময় জমি পতিত থাকে, সে সময় আবাদ হওয়া সরিষার তেমন উৎপাদন খরচ নেই। এছাড়াও একই সময়ে ক্ষেতে জৈব সারের অভাবও পূরণ হয়ে যায়, ফলে বাড়তি খরচ থেকে রক্ষা পায় কৃষক। কারণ বোরো আবাদে প্রচুর সারের প্রয়োজন হয়। সরিষার আবাদের ফলে পরবর্তী ফসলে খরচ কমে আসে।

চলতি মৌসুমে নরসিংদী জেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে উন্নত জাতের সরিষা চাষ হয়েছে। বেড়ে ওঠা গাছ আর ফুল দেখে বেশি ফলনের স্বপ্ন দেখছেন জেলার কৃষকরা। গত বছর স্থানীয় বাজারে উন্নত জাতের সরিষার দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা এবারও সরিষা চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে পড়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর প্রত্যেক চাষি বেশি মুনাফা লাভ করবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এই জেলা সরিষা চাষের জন্য খুবই উপযোগী। চলতি মৌসুমে জেলার ৬টি উপজেলার ৭ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সরিষা আবাদ হয়েছে ৭ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে। কৃষকরা অধিকাংশ জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) বারি-১৪, বিনা-৯, বারি-১৭, বারি-১৮ সরিষা আবাদ করে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বছরের পর বছর স্থানীয় জাত চাষ করে ফলন কম হওয়া ও উৎপাদনে সময় বেশি লাগার কারণে কৃষকরা সরিষা চাষ অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। তবে চলতি মৌসুমের শুরুতে উপজেলা কৃষি বিভাগ বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট’ উদ্ভাবিত বেশি ফলনশীল বারি-১৪ জাতের সরিষা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে। এ জাতের সরিষা মাত্র ৭৫-৮০ দিনে ঘরে তোলা যায়। প্রতি হেক্টরে ফলন হয় প্রায় দেড় হাজার কেজি। সরিষা কেটে ওই জমিতে আবার বোরো আবাদ করা যায়। এতে কৃষি জমির সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত হয়।

সদর উপজেলার বালুসাইর গ্রামের সরিষা চাষি ইকবাল জানান, তিনি এ বছর ১ বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষার আবাদ করেছেন। বিঘাপ্রতি তার প্রায় ২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সরিষা ভালো হয়েছে। তিনি আশা করছেন বাম্পার ফলন হবে। রায়পুরা উপজেলার তেলিয়াপাড়া গ্রামের কৃষক ফকরুল জানান, গত বছর বাজারে সরিষার দাম ভালো পাওয়ায় এবারও সরিষা চাষ করেছেন। ফলন ভালো ও দাম পেলে আগামী বছর সরিষা চাষে অনেকেই ঝুঁকে পড়বেন।

শিবপুর উপজেলার চৈতন্য গ্রামের কৃষক মজিবর জানান, বাপ-দাদার আমল থেকে এই সরিষা চাষ করছি। অন্যান্য ফসল থেকে সরিষা চাষ তুলনামূলক লাভজনক। আমন ধান কাটার পর আমরা সরিষার বীজ বুনি। আর এই সরিষা চাষের পর সেই জমিতে বোর ধান চাষে ভালো ফলন পাওয়া যায়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ আজিজল হক বলেন, অন্যান্য ফসলের তুলনায় সরিষা একটি দ্রুত অর্থকরী ফসল। নরসিংদী জেলায় বর্তমানে দুই ধরনের সরিষার আবাদ হচ্ছে। একটি দেশীয় জাতের সরিষা ও অন্যটি উন্নত জাতের সরিষা। উন্নত জাতের মধ্যে বারি-১৪, ১৭ ও ১৮ জাতের সরিষা এখানে আবাদ হচ্ছে। এছাড়া দেশি জাতের সরিষার আবাদ করা হচ্ছে। দেশি জাতের সরিষা থেকে উন্নত জাতের সরিষায় দ্বিগুণের বেশি ফলন হয়।কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। বারি-১৪,১৭, ১৮ সহ অন্যান্য সরিষা বপনের মাত্র ৭৫-৮০ দিনের মধ্যে এর ফলন পাওয়া যায়। এ সরিষা উঠিয়ে আবার বোরো আবাদ করতে পারেন বলে একে কৃষকরা লাভের ফসল হিসেবে অভিহিত করে থাকেন।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

» মহেশপুরে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার ৫

» সাঘাটায় কাবিখা প্রকল্পের মাধ্যমে শিমুল তাইড় কবরস্থানে মাটিভরাট কাজ সম্পন্ন

সম্প্রতি