ডিবির হাওর
সিলেট বিভাগের সীমান্তঘেঁষা জৈন্তাপুর উপজেলা প্রকৃতি, ইতিহাস ও নান্দনিক সৌন্দর্যের এক অনন্য মেলবন্ধন। এই জৈন্তাপুরেই অবস্থিত ডিবির হাওর জৈন্তারাজ্যের স্মৃতিবিজড়িত, শাপলায় মোড়া এক বিস্ময়কর জলাভূমি। বাংলাদেশ–ভারত সীমান্তবর্তী মেঘালয় পাহাড়ের পাদদেশে বিস্তৃত এই হাওর আজ কেবল একটি পর্যটনকেন্দ্রই নয়, বরং ইতিহাস ও লোককথায় ভরপুর এক জীবন্ত ভূদৃশ্য।
খাসিয়া পুঞ্জি ও পিয়াইন নদী পার হয়ে সিলেট-তামাবিল সড়ক ধরে অগ্রসর হলে মূল সড়ক থেকেই চোখে পড়ে ডিবির হাওরের বিস্তৃত জলরাশি। বর্ষা ও শীত—উভয় মৌসুমেই ভিন্ন ভিন্ন রূপে ধরা দেয় এই হাওর। সড়ক ছেড়ে অল্প একটি মাটির পথে নামলেই শাপলায় ঘেরা বিলগুলোর নৈসর্গিক দৃশ্য মন কেড়ে নেয়।
ডিবির হাওর মূলত চারটি বিলকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ডিবি বিল, কেন্দ্রী বিল, হরফকাটা বিল ও ইয়াম বিল। এই চার বিলের সম্মিলিত পরিচয়ই ডিবির হাওর। স্থানীয় জনশ্রুতি ও ইতিহাস অনুযায়ী, এই বিলগুলোর সঙ্গে জৈন্তারাজ্যের রাজা রাম সিংহের স্মৃতি জড়িয়ে আছে। একসময় রাজকীয় কর্মকাণ্ড ও বসতির অংশ ছিল বলে ধারণা করা হয় এই অঞ্চলকে।
আজ ডিবির হাওরের সবচেয়ে বড় পরিচয় এর শাপলা। বিশেষ করে লাল শাপলায় প্রায় ৭০০ একর জলাভূমি আবৃত। গোলাপি ও লাল আভায় পুরো হাওর যেন রঙিন ক্যানভাসে রূপ নেয়। সকালে সূর্যের আলোয় ফোটা শাপলা আর বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাপড়ি গুটিয়ে নেওয়ার দৃশ্য প্রকৃতিপ্রেমী ও আলোকচিত্রশিল্পীদের বিশেষ আকর্ষণ।
স্থানীয়দের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রায় তিন দশক আগেও এই বিলগুলোতে শাপলার তেমন উপস্থিতি ছিল না। সীমান্তের ওপারে বসবাসরত খাসিয়া সম্প্রদায় পূজা–অর্চনায় শাপলা ব্যবহার করত। সেই চাহিদা পূরণে প্রথমে ডিবি বিলে লাল শাপলার চারা রোপণ করা হয়। ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের বিল, পুকুর ও নালায়। আজ সেই উদ্যোগই ডিবির হাওরকে পরিণত করেছে শাপলার স্বর্গে।
ডিবির হাওরের পাশেই মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে মেঘালয়ের পাহাড়। পাহাড়ের ঢালে ও পাদদেশে খাসিয়া সম্প্রদায়ের বসবাস। দূর পাহাড়ে চোখে পড়ে তাদের পানবাগান—সবুজের ভেতর সাজানো এক অনন্য কৃষি–সংস্কৃতি। বিলের জলে নৌকা ভেসে চলে, আর চারপাশে পাহাড়, টিলা, খাল ও নদীর সমাহার জৈন্তাপুরকে করে তুলেছে প্রকৃতির এক অফুরন্ত ভা-ার।
হরফকাটা ও ডিবি বিলের মাঝামাঝি একটি প্রাচীন সমাধিস্থল বা মঠ-মন্দিরের অস্তিত্ব চোখে পড়ে। এর স্থাপত্য ও অবস্থান দেখে ধারণা করা হয়, এটি জৈন্তা রাজবাড়ির সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো ধর্মীয় স্থাপনা হতে পারে। জৈন্তা বাজার এলাকায় আজও রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ ও বাংলাদেশের মেগালিথ স্তম্ভগুলো ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করছে। ডিবির হাওর থেকে এসব স্থানের দূরত্ব খুব বেশি নয়, যা এই অঞ্চলের ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতাকে আরও দৃঢ় করে।
নান্দনিক জলাভূমি, পাহাড়ঘেরা প্রাকৃতিক পরিবেশ, শাপলার বিস্তার ও ইতিহাস—সব মিলিয়ে ডিবির হাওর এখন সিলেট অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন আকর্ষণ। দেশি–বিদেশি পর্যটক ও আলোকচিত্রশিল্পীদের নিয়মিত আনাগোনায় হাওর জীবন্ত হয়ে ওঠে। তবে এই সৌন্দর্য টিকিয়ে রাখতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও পরিবেশ সংরক্ষণে সচেতনতা জরুরি।
ডিবির হাওর তাই শুধু একটি জলাভূমি নয় এটি জৈন্তারাজ্যের ইতিহাস, খাসিয়া সংস্কৃতি ও প্রকৃতির রঙিন ক্যানভাসে আঁকা এক অনবদ্য অধ্যায়।
অর্থ-বাণিজ্য: অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত কাগজশিল্প
অর্থ-বাণিজ্য: হিলি স্থলবন্দর দিয়ে রপ্তানি অনেক বেড়েছে
অর্থ-বাণিজ্য: ইজিসিবির শেয়ারহোল্ডারদের নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা
অর্থ-বাণিজ্য: ডিসেম্বরের ২৩ দিনে রেমিট্যান্স প্রবাহ ১৩.৪ শতাংশ বৃদ্ধি