ইলেকট্রনিক সিগারেট (ই-সিগারেট) ও উত্তপ্ত তামাক পণ্যের ব্যবহার, উৎপাদন ও বিপণন নিষিদ্ধের প্রস্তাব করে ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশের অনুমোদন মিলেছে। এছাড়াও তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেটের গায়ে বিদ্যমান ৫০ শতাংশের পরিবর্তে ৭৫ শতাংশ এলাকা জুড়ে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সতর্কবাণী মুদ্রণের বিধান সংযোজন করা হয়েছে এ অনুমোদিত অধ্যাদেশে। উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এর অনুমোদন মেলে বলে গতকাল বুধবার এক তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ের অধ্যাদেশ জারির লক্ষ্যে অবিলম্বে লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের ভেটিং গ্রহণ করারও সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে। বৈঠকে বলা হয়, তামাক ব্যবহার ক্যান্সারসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের অন্যতম প্রধান কারণ। তামাক ব্যবহারজনিত রোগে বাংলাদেশে প্রতি বছর এক লাখ ত্রিশ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়।
দেশে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বিদ্যমান ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫’ আরও শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে অনুমোদিত হয়েছে।
অধ্যাদেশে আরও যা আছে: ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস, যেমন- ই-সিগারেট বা ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেম, হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট ইত্যাদির ব্যবহার, উৎপাদন ও বিপণন নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ‘তামাকজাত দ্রব্য’-এর সংজ্ঞার আওতায় নিকোটিন পাউচ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের পাশাপাশি সবধরনের তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান রাখার বিধান সরকারের নির্দেশনার শর্তাধীন করা হয়েছে। ‘পাবলিক প্লেস’ ও ‘পাবলিক পরিবহন’-এর সংজ্ঞা ও অধিক্ষেত্র সম্প্রসারণ করা হয়েছে। বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শনসহ ইন্টারনেট বা অন্য যে কোনো মাধ্যমে তামাকজাত দ্রব্যের সব ধরনের বিজ্ঞাপন, প্রচার ও প্রসার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেটের গায়ে বিদ্যমান ৫০ শতাংশের পরিবর্তে ৭৫ শতাংশ এলাকাজুড়ে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সতর্কবাণী মুদ্রণের বিধান সংযোজন করা হয়েছে।
বর্তমানের আইনটি ২০০৫ থেকে চলে আসছে, তবে এটির ক্ষতির মাত্রা বিবেচনায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের তরফে আইনটির সংশোধনের দাবি ছিল। এছাড়াও নতুন করে ভেপিং ও ই-সিগারেটের মতো পণ্যগুলো আইনের ফাঁকে তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয় হতে থাকায় তাদের তরফে উদ্বেগ ছিল। এর বিপরীতে এ খাতের উৎপাদকরা বরাবরই এই আইন সংশোধনের বিরোধিতা করে আসছে; সেক্ষেত্রে সরকার রাজস্ব হারাতে পারে এমন শঙ্কা তুলে ধরা হয় তাদের পক্ষে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অর্থবছর জুড়ে যে পরিমাণ রাজস্ব আদায় করে তার এক-দশমাংশের বেশি আদায় হয় সিগারেট কোম্পানি থেকে। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এনবিআর ৩ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করেছে; এর মধ্যে তামাক খাত থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে মোট ৪০ হাজার ৪১১ কোটি টাকা।
সরকারের এদিকটি বিবেচনায় নিয়েই আইন সংশোধনে ধীরয়া দেখা গেছে। সর্বশেষ এ আইন সংশোধনে গত বছরের ৯ ডিসেম্বর একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করলেও এর কার্যকারিতায় এক বছরের বেশি সময় লাগলো। এদিন উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সংশোধিত অধ্যাদেশের অনুমোদন মিললেও এর ভেটিং এখনও বাকি রইলো।