নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মোহাম্মদ আলী নোমানের বিরুদ্ধে পরকীয়া, যৌতুক লোভ ও চরম নারী নির্যাতনের ভয়াবহ অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, পরকীয়ার প্রতিবাদ করায় স্ত্রীকে দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক নির্যাতন, মানসিক নিপীড়ন, বেআইনি আটক এবং শেষ পর্যন্ত একতরফা তালাক প্রদান করেন অভিযুক্ত এই সরকারি চিকিৎসক। অভিযোগে বলা হয়েছে, জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা গ্রামের মো. মোনতাসির বিল্লার কন্যা মোছা. মোনতাসির মোকাররমা বিল্লার সঙ্গে প্রায় এক বছর তিন মাস আগে ডা. নোমানের বিয়ে হয়। বিয়ের পরপরই অভিযুক্ত ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে ৬০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করা হয়। এ অনৈতিক দাবিতে সাড়া না দেওয়ায় শুরু হয় ভয়াবহ নির্যাতন। ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ অনুযায়ী, বিয়ের আগ থেকেই ডা. নোমান একাধিক নারীর সঙ্গে পরকীয়ায় লিপ্ত ছিলেন। বিয়ের পর এসব বিষয়ে প্রশ্ন তুললে স্ত্রীকে মারধর করা হতো। অভিযোগ রয়েছে, অভিযুক্ত নিয়মিত বহিরাগত নারীদের নিজ বাসায় এনে অনৈতিক কর্মকান্ডে জড়াতেন। এসব ঘটনায় বাধা দিলে স্ত্রীকে মারধর করে কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখতেন, যা স্পষ্টভাবে বেআইনি আটক ও নারী নির্যাতনের অপরাধ। আইনজ্ঞদের মতে, এসব কর্মকান্ডে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর অধীনে গুরুতর ও অজামিনযোগ্য অপরাধ। পাশাপাশি বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৩২৩, ৩৪২ ও ৫০৬ ধারায় একাধিক ফৌজদারি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। একজন দায়িত্বশীল সরকারি চিকিৎসকের দ্বারা এমন অপরাধ সংঘটন রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা ও পেশাগত নৈতিকতার চরম লঙ্ঘন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
অভিযোগে আরও বলা হয়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে ডা. নোমান দ্রুত স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেন। মানবাধিকার কর্মীদের মতে, নির্যাতনের পর তালাক প্রদান ভুক্তভোগী নারীকে সামাজিকভাবে বিপর্যস্ত ও অর্থনৈতিকভাবে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেয়, যা সরাসরি মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল।
ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত ডা. নোমান কর্মস্থল ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনুপস্থিত রয়েছেন। জানা গেছে, তিনি গত ৩ ডিসেম্বর থেকে কর্মস্থলে না এসে আত্মগোপনে রয়েছেন, যা তদন্ত এড়ানোর কৌশল বলেও মনে করছেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ডা. মোহাম্মদ আলী নোমানের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি নিজেকে ঢাকায় প্রশিক্ষণে রয়েছেন দাবি করলেও অভিযোগের বিষয়ে কোনো বক্তব্য না দিয়ে ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
নীলফামারীর সিভিল সার্জন ডা. মো. আব্দুর রাজ্জাক জানান, বিষয়টি তিনি অবগত রয়েছেন। তিনি বলেন, ডা. নোমান তার স্ত্রীকে ১৩ লাখ টাকা প্রদান করে তালাক দিয়েছেন । অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিভাগীয় তদন্তের প্রয়োজন হলে তা গ্রহণ করা হবে।
ভুক্তভোগীর পিতা মো. মোনতাসির বিল্লা বলেন, ‘৬০ লাখ টাকা যৌতুকের অনৈতিক দাবিতে রাজি না হওয়ায় আমার মেয়েকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। গত ৩ ডিসেম্বর তাকে মারধর করে বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়। তালাকের কোনো কাগজপত্র এখনো আমরা পাইনি।’ তিনি জানান, তিনি ডিমলা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং বর্তমানে পরিবার নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর দাবি, একজন সরকারি চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ রাষ্ট্রীয় সেবার বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। তারা অবিলম্বে অভিযুক্তের গ্রেপ্তার, নিরপেক্ষ তদন্ত, বিভাগীয় শাস্তি এবং ভুক্তভোগী নারীর সর্বোচ্চ আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন।
সারাদেশ: চুনারুঘাটে দুইমণ গাঁজাসহ গ্রেপ্তার ১