রাজবাড়ী সদর উপজেলার ফেলুর দোকান এলাকায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)এর গ্রামীন সড়ক সংস্কার কাজে ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের অভিযোগ উঠেছে। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে লোকালয়ের পাশেই গার্মেন্টস ঝুট, পরিত্যক্ত চামড়া ও প্লাস্টিকজাত বর্জ্য পুড়িয়ে বিটুমিন গলানোয় ঘন কালো ধোঁয়া, ধুলাবালি ও তীব্র দুর্গন্ধে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী।
গত বৃহস্পতিবার রাজবাড়ী-গোয়ালন্দ মোড় আঞ্চলিক মহাসড়কের ফেলুর দোকান এলাকায় এই কাজ চলমান থাকায় ধোয়া ও ধুলায় যাতায়াতে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, রাস্তা উন্নয়নের কাজ জরুরি হলেও লোকালয়ের পাশে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ধোঁয়া ও ধুলাবালি ছড়ানো জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি হোয়েছে। প্রশাসনের নজরদারির অভাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো নির্বিঘ্নে পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের আওতাধীন ফেলুর দোকান এলাকায় এলজিইডি’র গ্রামীন সড়ক সংস্কারের নামে প্রধান সড়কের পাশেই অস্থায়ীভাবে বসানো হয়েছে একটি বড় হট মিক্স প্ল্যান্ট বা বিটুমিন মিক্সিং মেশিন। সড়ক নির্মাণ কাজে বিটুমিন গলাতে গার্মেন্টস ঝুট, পাথরের ধুলাবালি ও অন্যান্য বর্জ্য ব্যবহার করা হচ্ছে। দিনভর এই মেশিন থেকে নির্গত ঘন কালো ধোঁয়া ও ধুলার আস্তরণে পুরো এলাকা আচ্ছন্ন হয়ে আছে। সড়কের পাশের গাছপালার পাতায় পুরু ধূসর ধুলা জমে বিবর্ণ হয়ে গেছে। ধোঁয়ার কারণে নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, চোখ জ্বালা করছে এবং মাথা ঘোরার মতো সমস্যায় পড়ছেন অনেকে।
আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, তীব্র ধোঁয়া ও ঝুটের গন্ধের মধ্যে কোনো ধরনের সুরক্ষা সরঞ্জাম ছাড়াই শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা গেছে, যা তাদের স্বাস্থ্যের জন্যও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মো. রনজু হোসেন বলেন, আমি এই বিষয়ে ক্যামেরার সামনে বক্তব্য দিতে রাজি নই। সরকারি নির্দেশনা দিলে কাজ তৎক্ষণাৎ বন্ধ হয়ে যাবে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এলজিইডি কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন রুরাল কানেক্টিভিটি ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট-এর আওতায় কল্যাণপুর নতুন রাস্তা থেকে কুঠির হাট জিসি ভায়া রামপুর জিপিএস সড়ক সংস্কার কাজে নির্ধারিত জ্বালানির পরিবর্তে বিটুমিন গলাতে ব্যবহার করা হচ্ছে গার্মেন্টস ঝুট, পরিত্যক্ত চামড়া, কাপড়ের টুকরো ও প্লাস্টিকজাত বর্জ্য। এতে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ছে তীব্র বিষাক্ত গ্যাস ও দুর্গন্ধময়।
অভিযোগ রয়েছে, রাজবাড়ী সদর উপজেলা এলজিইডি’র সহকারী প্রকৌশলী ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা অবস্থাতেই এই পরিবেশবিধ্বংসী কর্মকাণ্ড চলছে। প্রকল্পটির মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ হাজার ৬০০ মিটার। প্রায় ৪ কোটি ২৭ লাখ টাকা চুক্তিমূল্যের এই কাজটি বাস্তবায়ন করছে কুষ্টিয়ার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সৈকত এন্টারপ্রাইজ। দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সামনেই পরিবেশ আইন লঙ্ঘন হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
দেখা গেছে, রাজবাড়ী-গোয়ালন্দ মোড় আঞ্চলিক মহাসড়কের ফেলুর দোকান নামক স্থানটি গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, নারী ও বয়স্ক যাত্রীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এছাড়া সড়কে রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা, মোটরসাইকেলসহ সাধারণ যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয় আসলাম পাটোয়ারী, ফরিদ শেখ, মোজাহের খা সহ একাধিক এলাকাবাসী বলেন, বিষাক্ত গন্ধযুক্ত ধোঁয়ার কুণ্ডলী ছড়িয়ে পড়ায় নিজ বাড়িতে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে এবং রাস্তা দিয়ে চলাচলের সময় কিছুই দেখা যায় না। দীর্ঘ সময় ধোঁয়ার মধ্যে থাকায় শ্বাসকষ্টসহ নানা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ বা বিকল্প নিরাপদ পদ্ধতি ব্যবহার না করায় জনস্বাস্থ্যের জন্য এটি মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
একাধিক যানবাহনের চালক মো. সাইফুল আলম মিরাজ, নজরুল ইসলাম জানান, ধোঁয়ার কারণে কিছুই দেখা যায় না; নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, চোখ জ্বালা করে এবং মাথা ঘোরার মতো উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বেড়ে গেছে।
এ বিষয়ে রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানীর বক্তব্য জানতে মোবাইল ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে রাজবাড়ীর এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইউসুফ হোসেন জানান, বিষয়টি তিনি অবগত হয়েছেন এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
খেলা: টি-২০তে ৭ রানে ৮ উইকেট