image
ভাঙ্গুড়া (পাবনা) : উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ভবনের ছাদ প্লাস্টার খসে পড়ে বেরিয়ে এসেছে রড -সংবাদ

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে চলছে ভাঙ্গুড়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কার্যক্রম

শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতিনিধি, ভাঙ্গুড়া (পাবনা)

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কার্যক্রম চলছে চরম ঝুঁকিপূর্ণ একটি ভবনে। জরাজীর্ণ ও ব্যবহারের অনুপযোগী ভবনটিতে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। একই সঙ্গে দলিল নিবন্ধনসহ গুরুত্বপূর্ণ সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষকেও থাকতে হচ্ছে আতঙ্কে। একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও ভবন সংস্কার বা নতুন ভবন নির্মাণে এখনো কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

জানা গেছে, ১৯৮৭ সালে ভবনটি উপজেলা ফৌজদারি ও দেওয়ানি আদালত হিসেবে নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনে এটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। দীর্ঘদিন ধরে কোনো সংস্কার কাজ না হওয়ায় ভবনটির অবস্থা দিন দিন ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। একপর্যায়ে ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হলেও বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় এখানেই চলছে অফিসের কার্যক্রম।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনের ছাদ ও দেয়ালের বিভিন্ন অংশে বড় বড় ফাটল। প্লাস্টার খসে পড়ছে, বীমের ভেতরের রড বেরিয়ে এসেছে। ক্ষতিগ্রস্ত ছাদ থেকে প্রায়ই বালু-সিমেন্টের চাপড়া পড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এতে সম্প্রতি কয়েকজন কর্মচারী সামান্য আহত হয়েছেন বলেও জানা গেছে। এমন অবস্থার মধ্যেই প্রতিদিন শত শত মানুষ দলিল নিবন্ধনসহ বিভিন্ন কাজে এই ভবনে আসছেন।

সেবা নিতে আসা ভাঙ্গুড়া পৌর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ভবনের ভেতরে ঢুকতেই ভয় লাগে। মাথার ওপর যেকোনো সময় ছাদ ভেঙে পড়তে পারে—এই আশঙ্কা নিয়েই কাজ শেষ করতে হচ্ছে।

দিলপাশার ইউনিয়নের বাসিন্দা রাশেদ মাহমুদ বলেন, সরকার যেখানে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে, সেখানে এমন ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে অফিস পরিচালনা খুবই দুঃখজনক। নারী ও বয়স্ক মানুষও এখানে আসেন, তাদের নিরাপত্তা কে নিশ্চিত করবে?

একই উদ্বেগ প্রকাশ করে দলিল লেখার কাজে আসা শিরিনা খাতুন বলেন, ভবনের ভেতরে বসে অপেক্ষা করার মতো পরিবেশ নেই। একটু শব্দ হলেই মনে হয় কিছু একটা ভেঙে পড়বে।

ভাঙ্গুড়া উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মো. জাকির হোসেন মানিক বলেন, পুরাতন ও ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনে দীর্ঘদিন ধরে ভূমি রেজিস্ট্রেশনের কাজ চলছে। নতুন ভবন নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বারবার আবেদন করা হলেও বাস্তব কোনো অগ্রগতি নেই।

সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের পেশকার মো. আলতাব হোসেন বলেন, এটি সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর। অথচ দীর্ঘদিন ধরে ভগ্নদশায় পড়ে আছে। উপায় না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়েই কাজ করতে হচ্ছে। পাশাপাশি মূল্যবান সরকারি দলিল-নথিপত্র নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার রিজভী ইবনে মাহমুদ বলেন, ভবনটি অনেক আগেই ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কিন্তু এখনো নতুন ভবন নির্মাণ বা বিকল্প স্থানে অফিস স্থানান্তরের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে ঝুঁকি ও ভোগান্তির মধ্যেই দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি নথিপত্রও চরম ঝুঁকিতে রয়েছে।

সচেতন মহলের দাবি, অবিলম্বে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের কার্যক্রম নিরাপদ বিকল্প স্থানে স্থানান্তর এবং দ্রুত নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হোক। অন্যথায় যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

সম্প্রতি