image

দীপু হত্যা: ১৮ জন গ্রেপ্তার, ৪ জনের স্বীকারোক্তি

শুক্রবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫
বাকী বিল্লাহ, ঢাকা/শরীফুজ্জামান টিটু, ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে পোশাক শ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে শুক্রবার,(২৬ ডিসেম্বর ২০২৫) পর্যন্ত মোট ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার মধ্যে ৪ জন নিজেদেরকে জড়িয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিভাগীয় ডিআইজি মোহাম্মদ আতাউল কিবরিয়া।

পোশাক কারখানার ভেতরে উসকানিমূলক স্লোগান দিয়ে মব সৃষ্টি

অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে: ডিআইজি

ঘটনার পরপরই গ্রেপ্তারকৃত ১৮ জনের মধ্যে ময়মনসিংহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। আর র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) অভিযান চালিয়ে আরও ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তার মধ্যে ৪ জন হত্যায় নিজেদের জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

ডিআইজি আতাউল কিবরিয়া বলেন, ঘটনার দিন খবর শুনে জেলা ডিবি পুলিশ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রথমে ৩ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। পরবর্তীতে তাদের দেয়া তথ্য মতে, আরও ২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। র‌্যাব এই ঘটনায় ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

প্রথমে গ্রেপ্তারকৃত ১২ জনকে আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডের আবেদন করলে আদালত তাদের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। তদন্ত সংস্থা ডিবি প্রথম পর্যায়ে ৬ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এর মধ্যে ৪ জন দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

রিমান্ডে নেয়া আসামিদের তথ্য উপাত্তের ভিত্তিতে ময়মনসিংহ জেলা ডিবি পুলিশ গত বুধবার রাতে আরও ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। আজ তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুরকৃত ৬ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেয়া হবে। এছাড়াও নতুন করে গ্রেপ্তারকৃত ৬ জনের রিমান্ডের শুনানি আগামীকাল অনুষ্ঠিত হবে বলে ডিআইজি জানিয়েছেন।

এদিকে আমাদের জেলা বার্তা পরিবেশক জানায়, ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ভালুকায় গার্মেন্টস কর্মী দিপু চন্দ্র দাসকে (২৮) পিটিয়ে হত্যার পর বিবস্ত্র করে মরদেহ গাছে ঝুলিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় আরও ৬ আসামিকে গত বুধবার রাতে ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের কাশর এলাকায় অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত ৬ জন দীপুকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে বাধ্য করেছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃত ৬ জন হলো- সুনামগঞ্জের তাকবির (২২), ঠাকুরগাঁওয়ের রুহুল আমিন (৪২), ময়মনসিংহ সদরের নূর আলম (৩৩), তারাকান্দা উপজেলার মো. শামীম মিয়া (২৮) নোয়াখালীর সেলিম মিয়া (২২) ও মাদারীপুরের মো. মাসুম খালাসী (২৩)।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, গ্রেপ্তারকৃত ৬ আসামি ফ্যাক্টরির ভেতরে উপস্থিত কর্মচারীদের উসকানি ও স্লোগান দিয়ে ধর্ম অবমাননার বিষয়টি ফ্যাক্টরির বাইরে ছড়িয়ে দেয়।

তারা দীপুকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে চাপ সৃষ্টি করে। কেন ওই যুবককে পুলিশের হাতে না দিয়ে জনতার হাতে তুলে দেয়া হলো, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে ভালুকার জামিরদিয়া এলাকার পাইওনিয়ার নীটওয়্যারস বিডি লিমিটেড কারখানায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে দীপুকে মারধর করে কারখানার শ্রমিকরা।

শুধু তাই না, পরে তাকে কারখানার বাইরে উত্তেজিত জনতার হাতে তুলে দেয় সহকর্মীরা। দীপুর মরদেহ কারখানা থেকে দুই কিলোমিটার দূরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায়। সেখানে উত্তেজিত জনতা দীপু দাসের মরদেহ উলঙ্গ করে গাছে ঝুলিয়ে জুতা দিয়ে আঘাত করে ও আগুন জ্বালিয়ে দেয়।

খবর পেয়ে রাত ২টার দিকে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থল পৌঁছে অর্ধপোড়া মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়।

এ ঘটনায় গত ১৯ ডিসেম্বর বিকেলে নিহতের ছোট ভাই অপু চন্দ্র দাস বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ১৫০ জনকে আসামি করে ভালুকা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনী ভালুকা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত এ পর্যন্ত ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

বিভাগীয় ডিআইজি শুক্রবার রাতে সংবাদকে জানায়, দীপু ঘটনায় জড়িত পলাতক অন্যদেরকে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে। ঘটনার পর সাক্ষী হিসেবে ৩ জন নারীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। অপরাধী যেই হোক কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত আছে।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

সম্প্রতি