স্থানীয়দের বাধার মুখে একদিন কাজ বন্ধ থাকলেও পরদিন একই নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করে যশোরের শার্শা উপজেলার বসতপুর বাজার এলাকায় ফের সিসি ঢালাইয়ের কাজ শুরু করায় জনমনে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, অদৃশ্য শক্তির প্রভাবে নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করেই নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয়রা জানান, ১৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন সাতমাইল-গোগা সড়কে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার এলাকাবাসী কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন। অথচ কোনো তদন্ত বা দৃশ্যমান ব্যবস্থা ছাড়াই মাত্র একদিনের ব্যবধানে শুক্রবার সকাল থেকে একই সামগ্রী দিয়ে পুনরায় ঢালাই কাজ শুরু হয়। এতে এলাকাজুড়ে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে। শার্শার বাগআঁচড়ায় সিসি রাস্তা নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগে কাজ বন্ধ বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি আরও আলোচনায় আসে। ওই খবরে উল্লেখ করা হয়, পায়ের আঙুল দিয়ে গুতো দিলেই ঢালাই উঠে যাচ্ছে। অভিযোগের পর শার্শা উপজেলা প্রকৌশলী সানাউল্লাহ ও বাগআঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক শাহারিয়ার মাহমুদ রঞ্জু কাজ বন্ধের কথা জানালেও বাস্তবে একদিনের মধ্যেই ফের একই কাজ শুরু হয়।
সরেজমিনে বসতপুর বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চরম অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে সড়কের সিসি ঢালাইয়ের কাজ চলছে। এসময় স্থানীয়দের অভিযোগ, কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে পুরোনো ও ময়লাযুক্ত নিম্নমানের কালো পাথর, ইটের খোয়া ও বালি। নকশা অনুযায়ী সিমেন্টের পরিমাণ ও রডের মানও বজায় রাখা হয়নি। ফলে সদ্য নির্মিত সড়কটি অল্প সময়েই ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অনিয়মের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার সকালে তারা কাজ বন্ধ করে দেন। কিন্তু কোনো তদন্ত বা প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ছাড়াই শুক্রবার সকাল থেকে অদৃশ্য ক্ষমতাবলে একই সামগ্রী দিয়ে আবারও ঢালাই শুরু হয়। অভিযোগের তীর শার্শা উপজেলা প্রকৌশলী সানাউল্লাহসহ বাগআঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক ও শার্শা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) শাহারিয়ার মাহমুদ রঞ্জুর দিকে। তাদের প্রশ্ন-আগে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সময়ে যে অনিয়ম চলত, এখন প্রশাসকের তত্ত্বাবধানেও যদি একই চিত্র দেখা যায়, তবে পরিবর্তন কোথায়
জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রকল্প উন্নয়ন সহায়তার আওতায় বাগআঁচড়া ইউনিয়নের সাতমাইল-গোগা ১০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে বসতপুর স্কুল মোড় থেকে বাজারের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত প্রায় ৩৫০ মিটার সিসি ঢালাই রাস্তার কাজ চলমান রয়েছে। তবে শুরু থেকেই নির্ধারিত নকশা ও মানদন্ড অনুসরণ না করার অভিযোগ রয়েছে। নির্মাণকাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম বলতে পারেননি। তারা জানান, ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের লোকজন কিছুক্ষণ আগে ঘটনাস্থলে ছিলেন, সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে সরে যান। কাজ বন্ধ থাকার পর আবার কীভাবে শুরু হলো এ প্রশ্নে শ্রমিকদের কেউ কেউ অস্পষ্ট মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে বাগআঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক শাহারিয়ার মাহমুদ রঞ্জু উক্ত কাজে কিছুটা অনিয়ম হয়েছে এমন সত্যতা স্বীকার করে বলেন, স্থানীয়দের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জানানো হয়েছে।
তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। শার্শা উপজেলা প্রকৌশলী সানাউল্লাহ বলেন, অভিযোগের পর নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হয়েছিল। তবে কাজ পুনরায় শুরু হওয়ার বিষয়ে তিনি অবগত নন। তিনি জানান, রবিবার অফিস সময়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে এবং অনিয়মের প্রমাণ পেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে, এ ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা দ্রুত নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত, দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নির্ধারিত মান বজায় রেখে নতুন করে কাজ শুরুর দাবি জানিয়েছেন।