image

আরও ৪ দিন থাকবে কুয়াশা, কমেছে শৈত্যপ্রবাহ

শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

গত দু’দিন ধরে বয়ে যাওয়া মৌসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহটি কেটে গেছে। কিন্তু কুয়াশার দেখা মিলবে আরও কয়েকদিন। আরও কয়েকদিন মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা থাকবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবওহাওয়া অধিদপ্তর। এই কুয়াশার কারণেই শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে বলে অভিমত আবহাওয়া অধিদপ্তরের।

কুয়াশায় ৮ বিমান নামতে পারেনি

নদীতে বরযাত্রীবাহী নৌকা দিকহারা

আবহাওয়া অফিস জানায়, ‘আজ ও কাল মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকতে পারে।’ ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ- পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন আবওহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা।

এদিকে সাত জেলার ওপর দিয়ে গতকাল শুক্রবার বয়ে যাওয়া শৈতপ্রবাহটি শনিবার,(২৭ ডিসেম্বর ২০২৫) আর ‘বইছে না’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তবে কুয়াশার কারণে শীত বেশি মনে হচ্ছে।’

শনিবার সকালে আবওহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ভোর ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে, ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। পাবনার ঈশ্বরদী ও কিশোরগঞ্জের নিকলিতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে টেকনাফে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রেকর্ড হলে সাধারণত মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলে ধরে নেয়া হয়। তবে কিছু স্থানে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রেকর্ড হলেও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী না হওয়ায় ও আশপাশে প্রভাব না রাখায় একে শৈত্যপ্রবাহ বলা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সহকারী আবওহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা।

বিমান নামতে পারেনি

শনিবার সকালে ঘন কুয়াশার কারণে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামতে ব্যর্থ হয়ে কলকাতা, ব্যাংকক ও চট্টগ্রামে অবতরণ করেছে আটটি ফ্লাইট। শাহজালাল বিমানবন্দরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, ঘন কুয়াশা পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার স্বার্থে এদিন কয়েকটি ফ্লাইটকে বিভিন্ন বিমানবন্দরে ‘ডাইভার্ট’ করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি ফ্লাইট চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে, চারটি ফ্লাইট কলকাতা বিমানবন্দরে এবং একটি ফ্লাইট ব্যাংকক বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে।

এর আগে গতকাল শুক্রবার আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছিল, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ এবং নীলফামারী

কুয়াশা থাকবে আরও চার দিন

ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে বিভিন্ন জেলা শহর। এরই মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। ঘন কুয়াশার মধ্যে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা চুয়াডাঙ্গায় দিনের বেলায় সড়কে যানবাহন চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে। তাপমাত্রা কমে আসায় তীব্র শীতে কষ্ট পাচ্ছেন নিম্ন আয়ের মানুষরা। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার রাতে কুয়াশার মধ্যে মেঘনা নদীতে দুই যাত্রীবাহী লঞ্চের সংঘর্ষে মারা গেছেন চারজন। এছাড়াও গত কয়েকদিনে শীতের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে বৃহত্তর রংপুরে মারা গেছে ৪ জন।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, হালকা থেকে ঘন কুয়াশার প্রকোপ অব্যাহত থাকবে আরও চার দিন। আবহাওয়া অধিদপ্তরের শনিবারের বুলেটিনে বলা হয়েছে, ২৭ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর- এ চার দিন মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা কোনো কোনো এলাকায় দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া দেশের সাত জেলা- চুয়াডাঙ্গা, যশোর, গোপালগঞ্জ, রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও নীলফামারীর ওপর দিয়ে বয়ে চলা মৃদু শৈত্যপ্রবাহ কোথাও কোথাও অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে বুলেটিনে।

চার কারণে কুয়াশা বাড়ছে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, দেশের অভ্যন্তরে জলাধার, বিল ও হাওর থেকে উৎপন্ন কুয়াশা, বিকিরণজনিত কুয়াশা, পাহাড়ের ভাঁজে সৃষ্ট কুয়াশার সঙ্গে ভারত থেকে দেশের উত্তর-পশ্চিম দিয়ে প্রবেশ করা বায়ুতাড়িত কুয়াশার কারণে কুয়াশার ঘনত্ব বেড়েছে। এ কুয়াশা মধ্যরাত থেকে দুপুর পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলে থাকায় সূর্যের আলো আসতে পারছে না। ফলে ঠান্ডার অনুভূতিও তীব্র হচ্ছে।

সর্বনিম্ন তাপমাত্রা যশোরে

দ্বিতীয় দিনের মতো দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে যশোরে। শনিবার সকাল পৌনে ৭টায় যশোরের তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৮ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন গতকাল শুক্রবারও দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল যশোরে। যশোর মতিউর রহমান বিমানঘাঁটির আবহাওয়া অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

টানা দুই দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ও উত্তরের হিমেল হাওয়ার কারণে যশোরে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে এই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা। দিনের মধ্যভাগে কিছু সময়ের জন্য সূর্যের দেখা মিলছে। তবে ঘন কুয়াশা ও শৈত্যপ্রবাহের কারণে কৃষকরা দেরিতে মাঠে কাজে যাচ্ছেন।

যশোর শহরের লালদীঘি পাড়ে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ মানুষ শ্রম বিক্রির জন্য জড়ো হন। প্রচণ্ড শীতে সেই সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। কাজ না পেয়ে অনেকেই বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। কেউ কেউ কাজের আশায় অনেক বেলা পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন।

একই সঙ্গে শীতের তীব্রতা বাড়ায় ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপও বৃদ্ধি পেয়েছে। জ্বর, হাঁচি, কাশি ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। শীতের কারণে সারা দিনই গরম পোশাক পরে চলাচল করছেন মানুষজন। শীতকালীন রোগবালাই থেকে রক্ষা পেতে গরম পানি পান ও গরম কাপড় ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা।

কুয়াশায় দিক হারায়

বরযাত্রীবাহী নৌকা

পৌষের রাতের অন্ধকার ছাপিয়ে ঘন কুয়াশায় ঢেকে যায় যমুনা নদী। এর মধ্যেই বর-কনেসহ ৪৭ জন যাত্রী নিয়ে একটি নৌকা গন্তব্যে যাচ্ছিল। হঠাৎ দিক হারিয়ে নদীর মাঝখানের একটি চরে আটকে যায় নৌকাটি। গতকাল শুক্রবার রাত ৯টার দিকে জামালপুরের মাদারগঞ্জ উপজেলাসংলগ্ন যমুনা নদীতে এ ঘটনা ঘটে। উদ্ধারে সহায়তা চেয়ে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করে সহায়তা চাওয়া হয়। তবে ঘন কুয়াশার কারণে নৌকাটির সন্ধান মিলছিল না। প্রায় ১২ ঘণ্টা পর শনিবার সকাল ৯টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতায় নৌকাটির খোঁজ পাওয়া গেছে। বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে সেটিকে নিরাপদে মাদারগঞ্জের জামথল ঘাটে ভেড়ানো হয়। দীর্ঘ সময় নদীতে আটকে থেকে এক বৃদ্ধ বরযাত্রী অসুস্থ হলেও বাকিরা সুস্থ আছেন বলে জানানো হয়েছে।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

সম্প্রতি