image

মাতামুহুরী নদীতে অবশেষে সচল হলো দুই রাবার ড্যাম, বাড়ছে মিঠাপানির উৎস

৬০ হাজার একর জমিতে চাষাবাদে কেটে গেছে সেচ সুবিধার অনিশ্চয়তা

শনিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতিনিধি, চকরিয়া (কক্সবাজার)

পলিমাটি চাপা পড়ে অচল হয়ে পড়া কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা মাতামুহুরী নদীতে স্থাপিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাবার ড্যাম দুটি অবশেষে সফলভাবে ফুলানো শেষে সচল করা হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে চিরিঙ্গা ইউনিয়নের পালাকাটা রামপুর ও কোনাখালী ইউনিয়নের বাঘগুজারা পয়েন্টের রাবার ড্যাম দুটি সচল হওয়ায় এখন নদীতে মিঠাপানির প্রবাহ আটকানো শুরু হয়েছে। গতকাল বিকেলে সরেজমিনে বাঘগুজারা পয়েন্টে দেখা গেছে, দুইদিন আগে গত বৃহস্পতিবার রাবার ড্যামের ফুলানোর কাজ শেষ হওয়ায় এখন নদীর উজান থেকে নেমে আসা মিঠাপানির উৎস ফুলে ফেঁপে উঠতে শুরু হয়েছে।

একইভাবে সপ্তাহ আগে পালাকাটা রামপুর পয়েন্টের রাবার ড্যামটি সফলভাবে ফুলানোর মাধ্যমে কাজ শেষ করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

রাবার ড্যাম দুটি যথাসময়ে ফুলানোর মাধ্যমে সচল করার ফলে মাতামুহুরী নদীতে মিঠাপানির সেচ সুবিধা নিশ্চিত হয়েছে। এতে রাবার ড্যাম দুটির মাধ্যমে সেচের নির্ভরশীল চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার প্রায় ৬০ হাজার একর জমিতে চলতি মৌসুমে শুরু হতে যাওয়া বোরোধান ও রকমারি সবজি চাষাবাদে সেচ সুবিধা নিয়ে স্থানীয় কৃষকদের উদ্বেগ আতঙ্ক কাটিয়ে এখন স্বস্তি ফিরেছে।

জানা গেছে, ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে তৎকালীন সরকার চকরিয়া উপজেলাকে সবুজ বিপ্লবের আওতায় আনতে কৃষকের সেচ সুবিধা নিশ্চিতকরণে মিঠাপানির উৎস ধরে রাখতে সর্বপ্রথম মাতামুহুরী নদীর দুই পয়েন্টে অস্থায়ী ভিত্তিতে ক্রসবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেন।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দের বিপরীতে প্রতিবছর শুস্ক মৌসুমে নদীর বাঘগুজারা ও রামপুর পালাকাটা পয়েন্টে অস্থায়ী মাটির বাঁধ তৈরি করে মিঠাপানি আটকিয়ে অবিভক্ত চকরিয়া (পেকুয়াসহ) উপজেলার প্রায় ৬০ হাজার একর জমিতে চাষাবাদ নিশ্চিত করে আসছিলেন। যা ২০০৭ সাল পর্যন্ত বহাল ছিল।

পাউবোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৯৭৩ সালের পর থেকে প্রতিবছর অস্থায়ী ক্রসবাঁধ নির্মাণে অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করতে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়ায় নদীর দুই পয়েন্টেই স্থায়ীভাবে রাবার ড্যাম স্থাপনের উদ্যোগ নেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়। এরই আলোকে

২০০৯ সালে মাতামুহুরী সেচ প্রকল্পের (২য় পর্যায়) আওতায় প্রায় ৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড মাতামুহুরী নদীর পালাকাটা রামপুর ও কোনাখালী ইউনিয়নের বাঘগুজারা পয়েন্টে স্থায়ীভাবে রাবার ড্যাম দুইটির নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করেন।

এরপর থেকে প্রতিবছর শুস্ক মৌসুমে রাবার ড্যাম ফুলানোর মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকদের মিঠাপানির সেচ সুবিধা দিয়ে আসছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের চকরিয়া উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত শাখা কর্মকর্তা উপ সহকারী প্রকৌশলী (এসও) মো. আতিকুর রহমান বলেন, গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে মাতামুহুরী নদীর পালাকাটা রামপুর পয়েন্টের রাবার ড্যামটি ফুলানো শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত ২২ ডিসেম্বর রাবার ড্যামটি সফলভাবে ফুলানোর কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

একইসঙ্গে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন গত ১৮ ডিসেম্বর থেকে পলিমাটি চাপা পড়ে অচল হয়ে পড়া বাঘগুজারা পয়েন্টের রাবার ড্যামটি ফুলানোর কাজ শুরু করে। সর্বশেষ ২৪ ডিসেম্বর স্বাভাবিক ভাবে রাবার ড্যামটি ফুলানো শেষ হয়েছে।

তিনি বলেন, যথাসময়ে রাবার ড্যাম দুটি ফুলানোর মাধ্যমে সচল হওয়ায় এখন মাতামুহুরী নদীতে মিঠাপানির প্রবাহ বেড়ে চলছে।

এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার শাহনাজ ফেরদৌসী বলেন, যথাসময়ে রাবার ড্যাম দুটি ফুলানো সম্ভব হওয়ায় চলতি মৌসুমে চাষাবাদে মিঠাপানির সেচ সুবিধা নিয়ে কৃষকদের শঙ্কা কেটে গেছে। ফলে সেচ পাম্পের (স্কিম) মাধ্যমে দুই উপজেলার অন্তত ৬০ হাজার একর জমিতে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে চাষাবাদ করতে পারবে কৃষকরা।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীন দেলোয়ার বলেন, পলিমাটি চাপা পড়ে অচল হয়ে পড়া বাঘগুজারা রাবার ড্যামটি প্রথমে পরিদর্শনে যাই।

পরে পালাকাটা রামপুর পয়েন্টের রাবার ড্যাম পরিদর্শন করে দ্রুতসময়ে রাবার ড্যাম দুটি সচল করার জন্য কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।

তিনি বলেন, পাউবোর কর্মকর্তারা জরুরি ভিত্তিতে রাবার ড্যাম দুটি ফুলানোর কাজ শেষ করার ফলে এখন চাষের জমিতে মিঠাপানির সেচ সুবিধা নিয়ে কৃষকদের মাঝে তৈরি হওয়া বিপদের আশঙ্কা কেটে গেছে। এখন নিরবচ্ছিন্ন সেচ সুবিধা নিশ্চিত হয়েছে।

কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম বলেন, চকরিয়া উপজেলার কৃষকদের সেচ সুবিধার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে পাউবোর কর্মকর্তারা দ্রুতসময়ের মধ্যে মাতামুহুরী নদীর রাবার ড্যাম দুটি ফুলানোর মাধ্যমে সচল করার পদক্ষেপ নিয়েছেন। এখন নদীতে মিঠাপানির প্রবাহ বেড়েছে।

তিনি বলেন, মাতামুহুরী নদীর দুই রাবার ড্যাম ১৩ বছর আগে স্থাপন করা হয়। প্রতিবছর ফুলানো আর ড্যামেজ করতে করতে রাবারগুলো বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা এই অবস্থা থেকে রাবার ড্যাম দুটিকে সুরক্ষিত রাখার জন্য নতুন পরিকল্পনা নিয়েছি।

নির্বাহী প্রকৌশলী নুরুল ইসলাম বলেন, চট্টগ্রামের

পটিয়ার শ্রীমাই খালে নির্মিম আধুনিক প্রযুক্তির হাইড্রোলিক অ্যালিভেটর ড্যামের আদলে মাতামুহুরী নদীর দুই রাবার ড্যামের অবকাঠামো বদলাতে চাই।

কারণ প্রচলিত রাবার ড্যামের বিকল্প হিসেবে হাইড্রোলিক অ্যালিভেটেড ড্যাম একটি আধুনিক এবং অর্থ সাশ্রয়ী প্রযুক্তি। সেজন্য পরিকল্পনার আলোকে মাতামুহুরী নদীতে এটি বাস্তবায়নের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কেন্দ্রীয় দপ্তরে একটি প্রস্তাবনা প্রেরণ করা হচ্ছে।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

সম্প্রতি