ময়মনসিংহ-৩ গৌরীপুর আসনে মতানৈক্য ভুলে ধানের শীষের প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এম ইকবাল হোসেইনকে বিজয়ী করতে মাঠে নেমেছেন মনোনয়নবঞ্চিত তিন প্রার্থী। চারজনের এ জোট তারা চায় ধানের শীষে ভোট। মনোনয়নবঞ্চিত হয়েও ধানের শীষের প্রচারণায় নেমেছেন উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হাফেজ মো. আজিজুল হক, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এডভোকেট নুরুল হক, ময়মনসিংহ উত্তর জেলা যুবদলের সভাপতি শামছুল হক (ভিপি শামছু)। উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক থেকে বহিস্কৃত উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণ মাঠ নাড়ছেন না।
উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হাবিবুল ইসলাম খান শহীদ জানান, আমরা ধানের শীষ চিনি। ধানের শীষের এ প্রতীক শহীদ প্রেডিডেন্ট জিয়াউর রহমানের, বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। এ প্রতীক শহীদ জিয়ার আদর্শের প্রতীকটি সৈনিকের। সে জন্য ধানের শীর্ষ প্রতীককে বিজয়ী করতে সব ভেদাভেদ, বিরোধ, মান-অভিযান ভুলে একযোগে কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন, ধানের শীষের নমিনী ইঞ্জিনিয়ার এম ইকবাল হোসাইন অত্যন্ত সাদামনের মানুষ। তিনি সন্ত্রাস, মাদক, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে স্লোগান ধরেছেন, এ অঞ্চলের উন্নয়ন ও অবহেলিত বঞ্চিত মানুষের জন্য কাজ করতে চান।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি এডভোকেট নুরুল হক বলেন, ধানের শীষের বাহিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ধানের শীষকে বিজয়ী করতেই হবে। নিজে কি পেলাম সেটা প্রশ্ন নয়, দল ও দেশের জন্য কি করতে পারলাম, সেটাই মুখ্য বিষয়। আমি দলের জন্য ও মানুষের জন্য কাজ করছি, দলের দু:সময়ে ছিলাম, এখনও আছি, ভবিষ্যতেও থাকবো। অপরদিকে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব হাফেজ মো. আজিজুল হক, ময়মনসিংহ উত্তর জেলা যুবদলের সভাপতি ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শামছুল হক (ভিপি শামছু) দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ভোটারের দুয়ারে দুয়ারে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। রামগোপালপুরে প্রচারণায় হাফেজ আজিজুল হক বলেন, ধানের শীষের ভোট মানেই সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও মাদকের বিরুদ্ধে, উন্নয়নের জন্য, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের দেয়া ৩১দফার ম্যান্ডেট। শামছুল হক (ভিপি শামছু) বলেন, ধানের শীষকে বিজয়ী করতে হবে। গণতন্ত্রের বিজয় মানেই ধানের শীষের বিজয়। উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. ফাওজুল কবীর খান জানান, উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত নির্বাচনী আসন ১৪৮, ময়মনসিংহ-৩ (গৌরীপুর)। এ আসনে এবার মোট ভোটার ২লাখ ৯৪হাজার ৬০৮জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১লাখ ৪৮হাজার ৪৬৯জন। মহিলা ভোটার সংখ্যা ১লাখ ৪৬হাজার ১৩৯জন।
জানা যায়, ময়মনসিংহ-৩ এ আসনটিতে ১৯৭৯ ও ১৯৯৬ সালে জয়ী হয় বিএনপি। ১৯৮৬ ও ৮৮ সালে জাতীয় পার্টি নির্বাচিত হয়। জাতীয়পার্টির নুরুল আমিন খান পাঠান স্বাস্থ্য উপমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। তবে ১৯৯১, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও সর্বশেষ দ্বাদশ নির্বাচনে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ প্রার্থী। ২০০৮সনে এ আসনে আ’লীগের প্রার্থী ডা. ক্যাপ্টেন (অব.) মজিবুর রহমান ফকির ১লাখ ৭৭হাজার ২৮০ পেয়ে বিজয়ী হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার এম ইকবাল হোসেইন। তিনি পেয়েছিলেন ৭৬হাজার ৫১৭ ভোট। এ নির্বাচেন জাকের পাটির প্রার্থী গোলাম মোহাম্মদ ৩হাজার ১৬৭ ভোট, ন্যাপের প্রার্থী মো. আবদুর মতিন ৩হাজার ১৬৭ ভোট, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের প্রার্থী মো. মতিউর রহমান ৪৭৭ ভোট ও গণফোরামের প্রার্থী মো. রজব আলী ২৫৫ ভোট পান। এ নির্বাচনে ২লাখ ৬০হাজার ৮৮৮জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। যা মোট ভোটের ৮৪.৫শতাংশ।
তবে বিএনপির ভোট বর্জনের ঘোষণায় ব্যতিক্রম ঘটে ২০২৪ সনের অনুষ্ঠিত দ্বাদশ নির্বাচনে। এ নির্বাচনে আ’লীগের প্রার্থী এডভোকেট নিলুফার আনজুম পপি পান ৫৪ হাজার ৪৯১ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী সোমনাথ সাহা পান ৫২ হাজার ৫৬৬ ভোট। এ নির্বাচনে মোট ভোটার ছিলো ২লাখ ৭৫হাজার ৯৮৬জন। ভোটাধিকার প্রয়োগ করে ১ লাখ ৭ হাজার ৫৭ জন। যা মোট ভোটারের ৩৮.৮৮ শতাংশ।
এ আসনে শনিবার পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ৬জন। বিষয়টি নিশ্চিত করেন সহকারী রিটার্নিং অফিসার ইউএনও আফিয়া আমীন পাপ্পা। তারা হলেন ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রার্থী মো. শরিফুল ইসলাম, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উপজেলা জামায়াতের আমির দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের প্রার্থী মাওলানা বদরুজ্জামান, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর শাপলা কলি প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম (কবি সেলিম বালা), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস মনোনীত রিকশা প্রতীকের প্রার্থী মো. ফজলুর রহমান, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এম ইকবাল হোসেইন, বাসদ (মার্কসবাদী) দলের কাঁচি প্রতীকের মনোনীত প্রার্থী গৌরীপুর উপজেলা শাখার আহ্বায়ক এ কে এম আরিফুল হাসান।
সারাদেশ: ডিমলায় শাখা নদীগুলো মরা খালে পরিণত