image
ভৈরব (কিশোরগঞ্জ) : আগানগর ইউনিয়নের ছাগাইয়া গ্রামে এলজিইডির অধীনে নির্মাণাধীন বেরিবাঁধ -সংবাদ

ভৈরবে ফসলি জমি নষ্ট করে সড়ক নির্মাণ, কৃষকদের অসন্তোষ

রোববার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতিনিধি, ভৈরব (কিশোরগঞ্জ)

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার আগানগর ইউনিয়নের ছাগাইয়া গ্রামে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) অধীনে নির্মাণাধীন একটি বেরিবাঁধ সড়কের কাজকে কেন্দ্র করে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। সড়কের জন্য কৃষকদের ব্যক্তিগত ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়া হলেও, বর্ষা মৌসুমের আগে সেই গর্ত ভরাট করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করছে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মমিনুল হক। ফলে বিঘার পর বিঘা জমিতে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। এ ছাড়া রাস্তার কাজের মান নিয়েও এলাকাবাসী অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

জানা যায়, ছাগাইয়া কাচারিঘাট থেকে ছাগাইয়া সাউথ ইন্ড সড়কের ১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সড়কে জন্য ৪ কোটি ২৪ লক্ষ ৩৫ হাজার ৬৩৩ টাকা ব্যয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) একটি প্রকল্প হাতে নেয়। পরে টেন্ডার মাধ্যমে কাজটি পায় চট্টগ্রামের নাসিরাবাদের ঠিকাদার কোম্পানি মোহাম্মদ ইউনুস এন্ড ব্রাদাস (প্রা.) লিমিটেড। কিন্তু কাগজে কলমে কাজটির ঠিকাদার কোম্পানি মোহাম্মদ ইউনুস এন্ড ব্রাদাস (প্রা.) লিমিটেড পেলেও সড়কের কাজটি করছেন স্থানীয় আরেক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স মমিনুল হক। কাজটি শুরুর আগে চলতি বছরের ২২ মার্চ কাজের উদ্বোধনও করেন স্থানীয় ওই ঠিকাদার কোম্পানিটি এবং তারা কাজ শুরু করেন। প্রথম তিন মাসে রাস্তা উঁচুর জন্য মাটি ভরাটের কাজ এবং ব্লক বসানোর কাজ করেন। পরবর্তী বর্ষাকাল আসলে সড়কের কাজটি বন্ধ হয়ে যায়। এর মধ্যে স্থানীয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স মমিনুল হক কাজের মোট বিলের তিন ভাগের এক ভাগ টাকা উত্তোলন করেও নিয়ে যায়। কিন্তু বিল উত্তোলন করলেও বর্তমানে সড়কের কাজটি বন্ধ রয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, ছাগাইয়া গ্রামে বেরিবাঁধ সড়কটি পাকা ও প্রশস্ত করার কাজ পায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মমিনুল হক। কাজের শুরুতে ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা কৃষকদের আশ্বস্ত করেছিলেন, সড়ক উঁচু করার জন্য জমি থেকে মাটি নেওয়া হলেও বর্ষার আগেই বাইরের মাটি এনে সেই গর্ত ভরাট করে দেওয়া হবে। তখন তারা সড়কের পাশের কৃষকদের জমি থেকে মাটি কাটার অনুমতি চায় কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য। শর্ত ছিল-সড়কে মাটি ভরাট শেষে বর্ষা আসার আগেই অন্যত্র থেকে মাটি এনে কৃষকদের জমির গর্তগুলো ভরাট করে দেওয়া হবে, যাতে তারা পরবর্তী মৌসুমে চাষাবাদ করতে পারেন। কিন্তু বর্ষাকাল চলে গেলেও গর্ত ভরাটের কোনো লক্ষণ নেই। সড়কের পাশের জমিতে বিশাল বড় বড় গর্ত হয়ে আছে। এতে করে কৃষকদের জমি কেটে গর্ত করে মাটি নেয়ায় কৃষকরা চাষাবাদ করতে পারছেনা।

এছাড়া রাস্তার কাজ নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। তারা বলছেন রাস্তার জন্য যে ব্লকগুলো দিয়েছে সেগুলো কাজ শেষ হওয়ার আগেই বিভিন্ন অংশে ভেঙে যাচ্ছে। ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের জিও ট্যাক।

কৃষক হযরত আলীর অভিযোগ, জমি থেকে মাটি নেওয়ার পর এখন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন আর কথা রাখছেন না। বর্ষা শেষে হয়ে গেলেও এই গর্তগুলোতে পানি জমে স্থায়ী জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। ফলে আগামী কয়েক বছর সেখানে কোনো ফসল ফলানো সম্ভব হবে না। তাছাড়া রাস্তায় যে ব্লক দিয়েছে সেটিরও বিভিন্ন অংশ ভেঙে যাচ্ছে।

কৃষক মো. দুলাল মিয়া বলেন, আমাদের ফসলি জমি এখন খাদের মতো হয়ে আছে। আমরা এসব জমিতে শীত মৌসুমে রবি শস্য চাষ করতাম। এখন আমাদের দাবী কৃষি জমিগুলো মাটি দিয়ে ভরাটের পাশাপাশি সড়কটির নির্মাণ কাজ যেন দ্রুত শেষ করে।

জমির গর্ত ভরাটের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা সরাসরি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তবে তাঁর এক প্রতিনিধি মতিউর রহমান জানান, গত বর্ষাকালে কিছু অংশের মাটি ভরাট করা হয়েছে। সামনের মৌসুমে বাকীগর্তগুলো ভরাট করে দেয়া হবে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী ইসতিয়াক আহমেদ জানান, কাজ উদ্বোধনের পর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স মমিনুল হক এর স্বত্ত্বাধিকারী মমিনুল হক সেলিম তিন মাস কাজ করে। পরে বর্ষার মৌসুমের জন্য কাজ বন্ধ ছিলো। আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে সড়কের কাজটি শেষ করতে হবে। যেহেতু কাজের মেয়াদকাল ১ বছর তাই পুনরায় কাজ শুরুর জন্য ঠিকাদারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া কাজের অংশ হিসেবে দেড় কোটি টাকা ঠিকাদার উত্তোলন করে নিয়েছেন বলেও তিনি জানান।

ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স মমিনুল হক এর স্বত্ত্বাধিকারী মমিনুল হক সেলিম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কাজটি হলো চট্টগ্রামের এক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের। আমার ঠিকাদারীর প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে কাজটি হয়েছে। বর্তমানে এ কাজের তদারকি করছে অন্যরা। এখন আমি এ কাজটির সাথে জড়িত নয়।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

» মাঠ ভরে ফসলে, ঘর ভরেনি স্বস্তি আদিবাসী নারীর বেদনার দিনলিপি

» আত্রাইয়ে আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার

সম্প্রতি