image
শেরপুর (বগুড়া) : দইয়ের সরা, বাটি ও কাপ তৈরি করে মৃৎশিল্প এখন প্রাণ ফিরে পেয়েছে -সংবাদ

শেরপুরে দইয়ের সরা, বাটিও কাপ তৈরি করে মৃৎশিল্প এখন প্রাণ ফিরে পেয়েছে

রোববার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতিনিধি, শেরপুর (বগুড়া)

বগুড়ার শেরপুরে দইয়ের সরা, বাটি ও কাপ তৈরি করে মৃৎশিল্প এখন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। একসময় মাটির হাঁড়ি-পাতিলের বাজার সংকুচিত হয়ে পড়ায় শিল্পটি মৃতপ্রায় মনে হলেও, দইয়ের সরা, বাটি ও কাপ তৈরির নতুন চাহিদা কারিগরদের ফিরিয়ে এনেছে কর্মচঞ্চল জীবনে। বিশেষ করে গাড়ীদহ ইউনিয়নের চন্ডিযান গ্রামের শতবর্ষী কারিগরদের হাতেই এখন ঘুরছে শিল্পের নতুন চাকা যা হয়ে উঠেছে গ্রামীণ অর্থনীতি পুনরুজ্জীবনের এক শক্ত প্রতীক।শেরপুর উপজেলায় চন্ডিযান ছাড়াও কল্যাণী, কাশিয়াবালাসহ বিভিন্ন গ্রাম ও বাজারে সরা-কাপ তৈরির কাজ ছড়িয়ে পড়েছে।

কারিগররা জানান, দইয়ের সরা ও কাপ তৈরিতে প্রথমে মাঝারি আঠালো মাটি সংগ্রহ করা হয়। মাটি কেটে মেশিনে প্রস্তুত করার পর, দক্ষ হাতে তৈরি হয় সরা ও কাপ। দইয়ের মান ভালো রাখতে বিশেষ লাল মাটির প্রলেপ দিয়ে পাত্র রঙ করা হয়। পরে এসব পণ্য টানা দুই দিন ভাটার চুলায় পুড়িয়ে প্রস্তুত করা হয়। মেশিনের ব্যবহার শুরু হওয়ায় উৎপাদনে সময় ও খরচ কিছুটা কমলেও, বিদ্যুৎ বিভ্রাটে এখনো উৎপাদন ব্যাহত হয় বলেতারা জানান । আগে প্রধানত হিন্দু সম্প্রদায়ের কারিগররা এ কাজে যুক্ত থাকলেও, এখন মুসলমান নারী-পুরুষও সমানতালে অংশ নিচ্ছেন। পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও সহযোগিতা করছেন উৎপাদনে। এই পেশার সঙ্গে যুক্ত পরিবারের সন্তানরা এখন স্কুল-কলেজে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন, আবার অবসর সময় পেলেই পরিবারের কাজে সহায়তা করে বাড়তি আয়ও করছেন। ব্যবসায়ী আজিজ জানান, প্রতি ১,০০০ কাপ ও সরায় কারিগরদের মজুরি ৭০০ টাকা এবং ঘণ্টায় ১,০০০ কাপ তৈরি করা যায়। দৈনিক আয় দাঁড়ায় ৭০০/৮০০ টাকা পর্যন্ত। দইয়ের কাপ ২ টাকা পিস, মাটির সরা ১৫/২০ টাকায় বিক্রি হয়। প্রতি সপ্তাহে ২০/৩০ হাজার পণ্য নিয়ে ট্রাক লোড হয়ে রংপুর, দিনাজপুর, ঢাকা, কক্সবাজার, ও বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। এক ট্রাকে ২০/৩০ হাজার পণ্য পরিবহন করা সম্ভব এবং প্রতি সপ্তাহেই ট্রাক লোড হয়। চন্ডিযান গ্রামের প্রবীণ কারিগর রতন পাল বলেন, পাকিস্তান আমলে হাঁড়ি-পাতিলের চাহিদা কমে যাওয়ায় খুব কষ্টে দিন কেটেছে। এখন দইয়ের চাহিদা বাড়ায় আমাদের শিল্প আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সংসার চালাতে পারছি, ছেলেমেয়েদের পড়ালেখাও করাতে পারছি। নারী কারিগর ববিতা রানি পাল বলেন, নারীরাও এখন এ কাজে সমানভাবে সহযোগিতা করি। আয় ভালো, পরিবারও ভালোভাবে চলছে। স্কুলছাত্র মিথুন পাল বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি মাটির কাজ করি, পরিবারকে হেল্প করি। বাড়তি ইনকামও হয়। দইয়ের চাহিদা আমাদের পূর্বপুরুষের শিল্পকে আবার প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছে। কারিগররাবলেন সরকারি সহায়তা না পাওয়ায় অনেক কারিগর বাধ্য হয়ে মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে কাজ চালান। অগ্রিম টাকা নিয়ে ঋণ শোধ করতে গিয়ে তাদের লাভের পরিমাণ সীমিত থেকে যায়। তাই তারা সহজ শর্তে ঋণ, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও সরকারি আর্থিক সহায়তার দাবি জানিয়েছেন, যাতে এই শিল্প আরও বিকশিত ও অর্থনৈতিকভাবে শক্ত ভিত্তি পায়।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

» মাঠ ভরে ফসলে, ঘর ভরেনি স্বস্তি আদিবাসী নারীর বেদনার দিনলিপি

» আত্রাইয়ে আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার

সম্প্রতি