image
সাতক্ষীরা : শ্যামনগরে মুন্ডা জনগোষ্ঠীর চার শতাধিক পরিবারের কিছু -সংবাদ

নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি হারাতে বসেছে সাতক্ষীরা রেঞ্জের সুন্দরবনের মুন্ডা জনগোষ্ঠী

রোববার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতিনিধি, সাতক্ষীরা

বাংলাদেশে মুন্ডাদের আগমন ও তাদের বসতি বিন্যাসের প্রকৃত তথ্য এখনো পুরোপুরি উদঘাটিত হয়নি। তবে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এবং উৎখননের ভিত্তিতে ভারতবর্ষের অন্তর্ভুক্ত বিহার ও রাচিতে যে তথ্য পাওয়া যায়, তাতে তাদের আদি বসতি বিন্যাসের সময়কাল এবং স্থান নিরূপণ করা যায়। বাংলাদেশে মুন্ডাদের আগমন ও তাদের বসতি বিন্যাসের প্রকৃত তথ্য এখনো পুরোপুরি উদঘাটিত হয়নি। তবে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এবং উৎখননের ভিত্তিতে ভারতবর্ষের অন্তর্ভুক্ত বিহার ও রাচিতে যে তথ্য পাওয়া যায়, তাতে তাদের আদি বসতি বিন্যাসের সময়কাল এবং স্থান নিরূপণ করা যায়। প্রায় ২৩০ বছর আগে সুন্দরবন অঞ্চলে বসতি গড়ে তুলেছিল মুন্ডা জনগোষ্ঠী। এরপর ধীরে ধীরে এ অঞ্চলে বাইরের মানুষ বসতি স্থাপন করতে শুরু করে। মূল ধারার জনগোষ্ঠীর সঙ্গে খাপ খাওয়াতে না পেরে অনেকটা অন্তরালে চলে যান মুন্ডারা। বর্তমানে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় এ জনগোষ্ঠীর চার শতাধিক পরিবার রয়েছে। তবে জায়গা-জমি থেকে শুরু করে নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধিশালী এ মুন্ডারা একে একে সবই হারাতে বসেছেন। একসময় তাদের জমি থাকলেও এখন বেশির ভাগই ভূমিহীন। চর্চার অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে তাদের নিজস্ব বর্ণমালাও। সুন্দরবন আদিবাসী মুন্ডা সংস্থার (সামস) দেয়া তথ্যমতে, প্রায় ২৩০ বছর আগে ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের রাচি অঞ্চল থেকে মুন্ডাদের এ অঞ্চলে আনা হয়। সুন্দরবন কেটে আবাসভূমি গড়ে তোলার কাজে নিযুক্ত করা হয় তাদের। তবে বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে তাদের স্বীকৃতি দিলেও নিজস্ব ভাষা-সংস্কৃতিকে সুরক্ষা করা হয়নি। মুন্ডারি অস্ট্রো-এশীয় ভাষা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এবং ভারতীয় আর্যভাষা থেকেও প্রাচীন। এ ভাষা উড়িয়া, অসমীয়া ও বাংলা ভাষার প্রাথমিক ভিত রচনা করেছে। খাসিয়া, গারো, সাঁওতাল, কোল ইত্যাদি উপজাতীয় ভাষার সঙ্গে মুন্ডা ভাষার সম্পর্ক লক্ষণীয়। বাংলা বাগভঙ্গির ওপর মুন্ডা ভাষার প্রভাব আছে। এ জনগোষ্ঠী সনাতনী হলেও মূলত প্রকৃতি পূজারি। প্রতি বছর ভাদ্র মাসের একটি নির্ধারিত দিনে কারাম উৎসব করেন তারা। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সুন্দরবন অঞ্চলে কারাম বৃক্ষ মরে যাওয়ায় ব্যাহত হচ্ছে তাদের উৎসবও।

সামসের নির্বাহী পরিচালক কৃঞ্চপদ মুন্ডা জানান, মুন্ডা জনগোষ্ঠী অন্তত ২৩০ বছর আগে ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের রাচি থেকে এসে সাতক্ষীরার সুন্দরবন অঞ্চলে জঙ্গল কেটে বসতি শুরু করে। তাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি অতি প্রাচীন। তারা প্রকৃতি পূজারি। তাদের রয়েছে নিজস্ব শাসন ব্যবস্থা। গ্রামপ্রধানের পাশাপাশি ও উপজেলা পর্যায়ে থাকে একজন করে রাজা। তারা স্বতন্ত্র বিচার ও আচার ব্যবস্থার মধ্যে বসবাস করে। তবে তাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও শাসন ব্যবস্থা হারিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে সুন্দরবন আদিবাসী মুন্ডা সংস্থার পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছি ভাষা ও সংস্কৃতি সুরক্ষার পাশাপাশি তাদের নিজস্ব শাসন ব্যবস্থার সুযোগ করে দেয়ার জন্য। এজন্য দক্ষিণাঞ্চলে মুন্ডা ভাষা চর্চা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা দরকার। দেশের উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় মুন্ডা ভাষা চর্চা কেন্দ্র সরকারিভাবে স্থাপিত হলেও খুলনা বা সুন্দরবন অঞ্চলে আজও হয়নি। এছাড়া পাঠ্যপুস্তকে মুন্ডা ভাষার বর্ণমালা অন্তর্ভুক্ত করার জন্য দাবিও জানানো হচ্ছে। মুন্ডা জনগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা হলো মুন্ডারি, যা অস্ট্রো-এশিয়াটিক পরিবারের অন্তর্গত। তবে এখন মুন্ডারা শাদ্রী ভাষা ব্যবহার করছেন। সার্বিক বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা সাংস্কৃতিক কর্মকর্তা ফাইজা হোসেন অন্বেষা বলেন, বৈচিত্র্যই পৃথিবীর সৌন্দর্যের কারণ। বাংলাদেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলো তাদের সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র্য লালন করেই বাংলাদেশকে সমৃদ্ধ করেছে। বাংলাদেশ একই সঙ্গে সংকট ও সম্ভাবনাময় একটি দেশ। দেশের সর্ব দক্ষিণ-পশ্চিমে বসবাসকারী মুন্ডা জনগোষ্ঠী তাদের সংস্কৃতি লালন করে চলেছে নিজ উদ্যোগে। সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে মুন্ডা জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি বাংলাদেশের ঐতিহ্যের স্থায়ী অংশ হয়ে উঠবে।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

» মাঠ ভরে ফসলে, ঘর ভরেনি স্বস্তি আদিবাসী নারীর বেদনার দিনলিপি

» আত্রাইয়ে আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার

সম্প্রতি