ডেঙ্গুতে আরও ১১৪ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে রোববার (২৮ ডিসেম্বর) পর্যন্ত মোট এক লাখ দুই হাজার ৫৬২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে ৪১২ জন।
গত ২৪ ঘন্টায় ভর্তিকৃতদের মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১০জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৪০ জন, ঢাকা বিভাগে ৪ জন, ঢাকা উত্তরে ২৫ জন, ঢাকা দক্ষিণে ১৬ জন, খুলনা বিভাগে ১৪ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩ জন, সিলেট বিভাগে ২ জন ভর্তি হয়েছে।
আক্রান্তদের মধ্যে ৫ বছর বয়সের ১০ জন, ৬-১০ বছর বয়সের ৭ জন, ১১-১৫ বছর বয়সের ৩ জন, ১৬-২০ বছর বয়সের ১৫ জন, ২১-২৫ বছর বয়সের ১৫ জন, ২৬-৩০ বছর বয়সের ১৬ জন, ৩১-৩৫ বছর বয়সের ১১ জন, ৩৬-৪০ বছর বয়সের ৭ জন, ৪১-৪৫ বছর বয়সের ৮ জন, ৪৬-৫০ বছর বয়সের ৯ জন, ৮০ বছর বয়সের ১ জন রয়েছে।
কীটতত্ত্ব বিশেষদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভেক্টরবাহিত রোগ যেমন- ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাসের বিস্তার। ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত এবং আদ্রতার পরিবর্তন এ রোগগুলোর সংক্রমণ ও মৌসুমি ধরন আমূল বদলে দিচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে সতর্ক করেছে যে, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকার শরাঞ্চলগুলোতে এডিস ইজিপ্টি ও এডিস অ্যালবোপিকটাস মশার প্রজনন ও টিকে থাকার হার দ্রুত বাড়ছে।
এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ এখন আদর্শ কেস স্টাডি, এক সময় জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকা ডেঙ্গু সংক্রমণ এখন জানুয়ারি পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।
ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর বা নারায়ণগঞ্জের মতো ঘনবসতিপূর্ণ নগর এলাকায় অনিয়ন্ত্রিত নগরায়ণ, নির্মাণ বর্জ্য এবং সঠিক পানি নিষ্কাশনব্যবস্থার অভাব জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে আরও তীব্র করছে। ফলে বাংলাদেশে ডেঙ্গু এখন আর কেবল বর্ষাকালের রোগ নয়। এটি রূপ নিয়েছে বছরব্যাপী জনস্বাস্থ্য দুর্যোগে। যেখানে প্রতিটি মৌসুমই নতুন সংক্রমণের ঝুঁকি বহন করছে।
ডেঙ্গুর বিস্তার জলবায়ু উপাদানের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের আবহাওয়ার ধরন বদলে গেছে, বর্ষাকাল দীর্ঘায়িত হয়েছে। এডিস মশা এই বৃষ্টিপাতের সুবিধা নিয়ে প্রজননচক্র চালিয়ে যায়।
বাংলাদেশে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের অন্যতম প্রতিবন্ধকতা হলো প্রশাসনিক কাঠামোর দুর্বলতা। বেশিরভাগ সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা এখনও মৌসুমি ভিত্তিতে কার্যক্রম চালায়। লার্ভা সার্ভিলেন্স ও উৎস হ্রাস কার্যক্রম সীমিত।
অনেক ক্ষেত্রে ফগিং মেশিনে অকার্যকর কীটনাশক ব্যবহার হয় অথবা ভুল সময়ে স্প্রে করা হয়, ফলে প্রকৃত এডিস মশা অপরিবর্তিত থাকে। কীটতত্ত্ববিদ ও প্রশিক্ষিত ভেক্টর বিশেষজ্ঞের ঘাটতি, ডোজ নির্ধারণে ত্রুটি এবং তথ্য ভিত্তিক পরিকল্পনার অভাব প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে আরও দুর্বল করছে। ফলে অনেক এলাকায় এডিস মশার প্রজনন অব্যাহত আছে। অর্থাৎ অভিযান শেষ হলেও মশার প্রজনন বন্ধ হয় না।
এডিস মশার শতকরা ৭০-৮০ ভাগ প্রজনন স্থানই আবাসিক ভবনের ভেতরে বা চারপাশে কিন্তু নাগরিকদের অনেকেই এখনও মনে করেন মশা নিয়ন্ত্রণ সরকারের দায়িত্ব। অথচ প্রতিটি পরিবারের উচিত সপ্তাহে অন্তত একদিন জমে থাকা পানি পরিষ্কার করা, কারণ এডিস মশার জীবনচক্র মাত্র ৫-৭ দিন।