নিরাপত্তাহীনতায় শৈশব, ২০২৫ সালেও শিশুদের সঙ্গী সহিংসতা ও শঙ্কা

রোববার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

ফুলের মতো পবিত্র আর আগামীর স্বপ্ন নিয়ে বেড়ে ওঠার কথা যে শিশুদের, তাদের জীবন কাটছে চরম নিরাপত্তাহীনতায়।

সংবাদপত্রগুলোতে শিশুদের নিয়ে প্রকাশিত খবরের মধ্যে ৬২.৬৬ শতাংশই শিশুই ধর্ষণ ও হত্যার শিকার

বর্তমানে একটি ‘অস্থির’ সময় পার করছি আমরা: শিশু একাডেমির মহাপরিচালক

২০২৫ সাল জুড়ে জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদপত্রের পাতায় শিশুদের নিয়ে আসা খবরের সিংহভাগই ছিল ধর্ষণ, হত্যা আর নিপীড়নের করুণ আখ্যান। বছরের শেষে এসে পাওয়া তথ্য বলছে, দেশের শিশুদের জীবন ও যৌন নিরাপত্তা এখন এক চরম ঝুঁকিপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে।

রোববার, (২৮ ডিসেম্বর ২০২৫) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘সচেতন সংস্থা’ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ‘শিশু

অধিকার পরিস্থিতি ২০২৫’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহায়তা করেছে ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)’ এবং ‘স্ক্যান বাংলাদেশ’। গবেষণায় পাওয়া তথ্যে আতঙ্কের চিত্র ফুটে উঠেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ২০২৫ সালে সংবাদপত্রগুলোতে শিশুদের নিয়ে প্রকাশিত ১,৮৬৭টি নেতিবাচক খবরের মধ্যে ৬২.৬৬ শতাংশই (১১৭০টি) ছিল শিশু ধর্ষণ ও হত্যার সঙ্গে সম্পর্কিত। এই পরিসংখ্যান কেবল সংখ্যা নয়, বরং শিশুদের বিরুদ্ধে ঘটে যাওয়া অপরাধের এক ভয়াবহ ও নিষ্ঠুর বাস্তবতাকে নির্দেশ করছে।

অনুষ্ঠানে মানুষের জন্য ফাউ-েশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ‘সংবাদপত্র বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, ২০২৫ সালে শিশুরা চরম নিরাপত্তাহীনতা ও কাঠামোগত দুর্বলতার শিকার হয়েছে। বিশেষ করে যৌন শোষণ ও দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।’ আর সংকটের মূলে অস্থিরতা ও সমন্বয়হীনতাই বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক মোছা. আরজু আরা বেগম বর্তমান সময়কে ‘অস্থির’ হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, ‘পারিবারিক শিক্ষা শিশুদের জন্য প্রধান হলেও অনেক সময় পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমেই তারা নির্যাতিত হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি কাজের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবও এই পরিস্থিতিকে জটিল করছে।’

গবেষণা প্রতিবেদনটি উত্থাপন করেন স্ক্যান-এর সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুকুল। শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিতে তিনি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দাবি তুলে ধরেন। রাজনৈতিক অঙ্গীকার: আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী সব রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে শিশু অধিকার রক্ষার সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার থাকতে হবে। কঠোর আইন: রাজনৈতিক সহিংসতা থেকে শিশুদের দূরে রাখতে কঠোর আইন ও রাজনৈতিক সমঝোতা প্রয়োজন। দ্রুত বিচার: শিশু ধর্ষণ ও হত্যার মতো অপরাধের ক্ষেত্রে দ্রুত বিচার ও কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সামাজিক সচেতনতা: পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি শিক্ষাব্যবস্থাকে শিশুবান্ধব করে গড়ে তুলতে হবে।

আলোচকরা একমত হয়েছেন যে, কেবল আইনের প্রয়োগ নয়, বরং পরিবার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত শিশুদের প্রতি সংবেদনশীলতা এবং সম্মিলিত পদক্ষেপই পারে আগামীর শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ দেশ নিশ্চিত করতে।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

» নান্দাইলে মাইকে ঘোষণা দিয়ে দুই গ্রামের সংঘর্ষ, আহত ৩০

» মাঠ ভরে ফসলে, ঘর ভরেনি স্বস্তি আদিবাসী নারীর বেদনার দিনলিপি

» আত্রাইয়ে আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার

সম্প্রতি