ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার শেরপুর ইউনিয়নের পাঁচরুখি বাজারে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় উভয়পক্ষের কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়েছে। আহতদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে পাঠায় স্থানীয়রা।
রোববার, (২৮ ডিসেম্বর ২০২৫) সকালে মাইকে ঘোষণা দিয়ে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়। পরে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এ সময় উত্তেজিত জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে সেনাবাহিনীর ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে বেশ কয়েকজন সেনা সদস্য অবরুদ্ধ হয়।
স্থানীয় সূত্র জানায়, পাঁচরুখি গ্রামের বাচ্চু মিয়া (৫০) নামের এক আদম ব্যবসায়ী এলাকার কমপক্ষে ১৫ জনকে সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে পাঠান। বিদেশে গিয়ে অধিকাংশ ব্যক্তি কাজ না পেয়ে অনেকে পুলিশের হাতে আটক হয় আবার অনেকে পালিয়ে থাকে। এ ঘটনার বিচার চাইতে পরিবারের লোকজন আদম ব্যবসায়ী বাচ্চু মিয়ার দ্বারস্থ হলে কোনো কাজে আসেনি। উল্টো বাচ্চু মিয়ার কাছে প্রবাসীদের পরিবারের নাজেহাল হতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, পুলিশ সঠিক কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় বিষয়টি দুই গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। এ অবস্থায় রোববার, সকালে সোহেল ভেন্ডারের পক্ষ থেকে বাচ্চুর অপকর্মের ঘটনায় প্রতিবাদ জানাবে বলে মাইকে প্রচার করা হয়। কিছুক্ষণ পর একই কায়দায় বাচ্চুর পক্ষ থেকেও সোহেল ভেন্ডারকে প্রতিহত করতে মাইকে ঘোষণা দেয়া হয়। একপর্যায়ে মুহূর্তেই দুই গ্রামের লোকজন লাঠিসোঁটা, দেশীয় অস্ত্রসহ মারমুখী অবস্থান নিতে থাকে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কালাম জানান, জনতার জমায়েত দেখে সেনাবাহিনী আচমকা উপর্যুপরি লাঠিচার্জ করলে বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়। এতে জনতা ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। তারা সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় রক্ষা পেতে সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য একটি ঘরে আশ্রয় নেয়। বেশ কিছুক্ষণ পর স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করে গাড়িতে তুলে দেয়।
বাচ্চু মিয়া জানান, তার কাছে সোহেল ভেন্ডার ২ লাখ টাকা চাঁদা চেয়েছিল। চাঁদা না দেয়ায় লোকজন নিয়ে বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাট চালায়।
সোহেল ভেন্ডার বলেন, আমি সালিশ-দরবার করি। ভুক্তভোগী লোকজন এসে বিচার প্রার্থী হলে বাচ্চুর কাছে জবাব চাইতে গেলে আমাকে মারধর করে প্রায় দেড় লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। এই খবরে লোকজন উত্তেজিত হয়ে তার (বাচ্চু) বাড়িতে হামলা চালায়।
নান্দাইল থানার ওসি আল আমীন জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ওই সময় সেনাবাহিনী কিছুটা লাঠিচার্জ করে। এতে অনেকেই দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দেয়, এক বৃদ্ধ আহত হয়। এই খবরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। সেনাবাহিনীর দায়িত্বরত ওয়ারেন্ট অফিসার মো. মোর্শেদ জানান, খবর পেয়ে তারা ওই স্থানে গিয়ে এক পক্ষকে থামিয়ে অপর পক্ষের কাছে যেতেই তারা এদিক সেদিক দৌড় দেয়। তখন অনেকেই মাটিতে পড়ে যায়। কোনো ধরনের লাঠিচার্জ করা হয়নি। এর মধ্যে কিছু লোক ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।