image

১ বছর ধরে সরকারি বরাদ্দ থেকে একঘরে ইউপি সদস্য ভোগান্তিতে ৫ গ্রামের মানুষ

সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতিনিধি মাধবপুর (হবিগঞ্জ)

হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার বহরা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. শাহ আলমকে বিগত ১ বছর ধরে সকল ধরনের সরকারি বরাদ্দ থেকে পরিকল্পিতভাবে বঞ্চিত রাখার অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে ওই ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত পাঁচ গ্রামের সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। অভিযোগ অনুযায়ী, টিসিবির কার্ড, মাতৃত্বকালীন ভাতা, সার বিতরণ, বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, পিআইসি কমিটিতে অন্তর্ভুক্তি এবং উন্নয়ন প্রকল্পসহ সব ধরনের সরকারি বরাদ্দ থেকে ওই ইউপি সদস্যকে সম্পূর্ণভাবে বাদ রাখা হচ্ছে। এমনকি তার ওয়ার্ডে বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রায় ২ লাখ টাকা মূল্যের পিআইও কর্মসূচির আওতায় ইট সলিং কাজের ক্ষেত্রেও বিধি অনুযায়ী কমিটিতে তাকে রাখার কথা থাকলেও তাকে বাদ দিয়ে পার্শ্ববর্তী ওয়ার্ডের এক ইউপি সদস্যকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

এসব অনিয়ম ও নিজের প্রতি বৈষম্যের প্রতিবাদে সম্প্রতি সাংবাদিকদের সামনে অভিযোগ তুলে ধরেন ভুক্তভোগী ইউপি সদস্য মো. শাহ আলম। তিনি জানান, ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন সদস্য সিন্ডিকেট করে তাকে কোরআন শরীফে শপথ করে তাদের নির্দেশনা অনুযায়ী চলতে বাধ্য করার চেষ্টা করছেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বহরা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য না দেওয়া এবং তার পক্ষে অবস্থান না নেওয়ায় বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও কয়েকজন ইউপি সদস্য মিলে শাহ আলমের বিরুদ্ধে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, তাকে কোরআন শরীফে শপথ করে ক্ষমা চাইতে এবং তাদের কথামতো চলতে চাপ দেওয়া হয়েছে। তবে শাহ আলম স্পষ্টভাবে জানান, তিনি এ ধরনের শপথে রাজি নন। এদিকে ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের গাংগাইল, পানিয়াহাতা, মেরাশানি, আউলিয়াবাদ ও শাহাপুর এই পাঁচ গ্রামের বাসিন্দারা জানান, ইউপি সদস্যের সঙ্গে পরিষদের বিরোধের জেরে তারাও সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

পানিয়াহাতা গ্রামের বাসিন্দা তাসলিমা আক্তার বলেন, আমাদের এলাকায় চাল, মাতৃত্বকালীন ভাতা—কোনো কিছুই দেওয়া হচ্ছে না। ইউপি সদস্যদের নিজেদের দ্বন্দ্বের বলি হচ্ছি আমরা সাধারণ মানুষ। আমাদের মেম্বার অত্যন্ত ভালো মানুষ। তিনি আটরশির দরবারের খাদেম হিসেবেও সুপরিচিত।

ভুক্তভোগী ইউপি সদস্য শাহ আলম বলেন, এক বছরের বেশি সময় ধরে আমাকে পরিকল্পিতভাবে সব প্রকল্প থেকে বাদ রাখা হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে কোরআন শরীফে শপথ করে তাদের কথামতো চলতে। বারবার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি।

তবে এ বিষয়ে পরিষদের নারী সদস্য আসমা আক্তার ভিন্নমত পোষণ করে বলেন, তিনি নিজেই নিয়মিত পরিষদে আসেন না, রেজুলেশনে স্বাক্ষর করেন না। বরাদ্দের বিষয়ে গত ১ বছর ধরে কোনো প্রকল্পই আসেনি। স্থানীয় বিএনপি নেতা মির্জা ইকরাম বলেন,

“ফ্যাসিস্ট কায়দায় এই ইউপি সদস্যের সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে। এতে তার ওয়ার্ডের মানুষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিষয়টি প্রশাসনের জরুরি তদন্ত প্রয়োজন। বহরা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ফরিদুর রহমান বলেন, বিষয়টি পুরোপুরি সত্য নয়। তিনি নিয়মিত পরিষদে উপস্থিত থাকেন না। তবে কেউ যদি কোরআন শরীফে শপথে বাধ্য করে থাকে, সে বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দেখব। এ বিষয়ে মাধবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদ বিন কাসেম বলেন,

“কাউকে প্রকল্প থেকে বঞ্চিত রাখা বা কোরআন শরীফে শপথ করতে বাধ্য করা সম্পূর্ণ বেআইনি ও বিধিবহির্ভূত। এ বিষয়ে এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

সম্প্রতি