ঘন কুয়াশা ও উত্তরের হিমেল হাওয়ায় গাইবান্ধায় শীতের তীব্রতা দিন দিন বাড়ছে। এ বছর পৌষ মাসের শুরুতেই প্রচ- শীতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরের জনজীবন। টানা চারদিন ধরে সূর্যের দেখা না মেলায় শীতের প্রকোপ আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে।
গত শনিবার সকাল থেকে গাইবান্ধা শহরসহ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়ে। দিনের বেলাতেও আলো স্বল্পতায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। চারদিন ধরে সূর্যের আলো না থাকায় নিম্ন আয়ের কর্মজীবী মানুষ সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন। শীতের তীব্রতায় হাসপাতালে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে।
এদিকে কৃষকদেরও বিপাকে পড়তে হচ্ছে। কুয়াশা ও ঠান্ডার কারণে মাঠে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক কৃষক জমিতে ফসলের পরিচর্যা ও বোরো ধানের বীজতলা তৈরিতে নাকাল হচ্ছেন। শীত নিবারণে নিম্ন আয়ের মানুষজন পুরোনো শীতবস্ত্র কিনছেন। আবার অনেককে খড়কুটো ও কাঠ জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে দেখা গেছে।
গাইবান্ধা পৌরসভার পুরাতন বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, তীব্র শীত ও কুয়াশার মধ্যেও জীবিকার তাগিদে একাধিক গরম কাপড় গায়ে জড়িয়ে কাজে নেমেছেন শ্রমজীবী মানুষ। তবে স্বাভাবিক দিনের তুলনায় জনসমাগম কম থাকায় রিকশাচালকসহ অনেক কর্মজীবী মানুষকে শীতের কাপড় জড়িয়ে বসে থাকতে দেখা গেছে। খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না।
সূর্যের দেখা না থাকায় কুয়াশার মধ্যে যানবাহন চলাচল করছে ধীরগতিতে। ফলে সড়কে যাত্রী ও চালকদের দুর্ভোগ বেড়েছে। রিকশাচালকেরা জানান, কুয়াশার কারণে শহরে লোকজন কম, যাত্রীও মিলছে না। শীতের জন্য অনেকেই রিকশায় উঠতে চায় না। তবুও জীবিকার তাগিদে প্রতিদিন ঘর ছাড়তে হচ্ছে।
এদিকে ফুটপাতের দোকানগুলোতে গরম কাপড়ের বেচাকেনা বেড়েছে। আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে জেলায় রবি ফসল, বোরো ধানের বীজতলা এবং মৌ খামারিদের মধু সংগ্রহে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। জেলার সাতটি উপজেলার মাঠে সরিষা, ভুট্টা, পেঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফসল এবং বোরো ধানের বীজতলা রয়েছে।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মো. মোস্তাফিজার রহমান জানান, সোমবার সকালে গাইবান্ধা জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৫ শতাংশ। তিনি আরও জানান, আগামী কয়েক দিনে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আতিকুল ইসলাম বলেন, শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে বোরো বীজতলা ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এতে কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে কৃষকদের ফসল সুরক্ষায় আগাম সতর্কতা ও করণীয় বিষয়ে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত ফসলের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন, যাতে কোনো ক্ষতি হলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
এদিকে, চলমান শীতে সরকারি-বেসরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণের উদ্যোগ তেমন না থাকায় এই দুর্ভোগ আরো বেড়েছে বলে জানান শীতার্তরা। মানবিক উন্নয়ন সংস্থা গণ উন্নয়ন উন্নয়ন কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা নির্বাহী প্রধান এম. আবদুস্ সালাম জানান, শীতের তীব্রতায় জনজীবনে দুর্ভোগ বেড়েছে। আমরা ইতোমধ্যে গাইবান্ধা ও লালমনিরহাট জেলায় কম্বল বিতরণণের পরিকল্পনা করেছি।
শীতার্তদের জন্য সরকারি-বেসরকারি সহায়তার পাশাপাশি বিত্তবানদের এগিয়ে আসা প্রয়োজন বলে জানান এই অঞ্চলের মানুষজন।