যশোরের শার্শা উপজেলা জুড়ে সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ। ফসলের মাঠের হলুদ রাজ্যে গুঞ্জনে মুখরিত মৌঁমাছির দল। মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলের অপরুপ দোলাচালে কৃষকের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাসি। শীতের সকালের নরম রোদে উপজেলার মাঠগুলো যেন নতুন করে জেগে উঠেছে। যতদূর চোখযায়, শুধু হলুদ আর হলুদ। সরিষা ফুলে ঢাকা বিস্তীর্ণ মাঠ দেখে মনেহয়, প্রকৃতি নিজ হাতে হলুদের চাদর বিছিয়ে দিয়েছে। বাতাসে দুলতে থাকা ফুলের ফাঁকে ফাঁকে মৌমাছির গুঞ্জন আর মাঠের আইলে দাঁড়িয়ে থাকা কৃষকদের চোখ-মুখে এক রাশ আশা। এ যেন শুধু ফসলের মাঠ নয়, বরং কৃষকের স্বপ্নের রাজ্য।
এক সময় লাভ না হওয়া ও অব্যাহত লোকসান গুনতে থাকায় যশোরের শার্শায় সরিষা চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিলেন চাষিরা। এখন স্বপ্ন দেখছেন বাম্পার ফলনের। গত বছর স্থানীয় বাজারে উন্নত জাতের সরিষার দাম ভাল পাওয়ায় কৃষকরা এবারও সরিষা চাষে অধিক আগ্রহী হয়ে পড়েছে। বিনামূল্যে পাওয়া উচ্চফলনশীল জাতের সরিষা ফলনে কৃষকের প্রশান্তির হাসি দীর্ঘ হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস থেকে জানা গেছে, শার্শা উপজেলায় গত বছরে প্রায় ৫৯২৯ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছিলো। উৎপাদন হয়েছিল ৮৯২৯ মে.টন সরিষা। যা হেক্টর প্রতি ১.৫১ মে. টন সরিষা উৎপাদন হয়। এ বছর কৃষি বিভাগের উদ্যোগে সরিষা চাষে কৃষকরা দারুণ অনুপ্রাণিত হয়েছেন। এ বছর ৬৫০২ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬৫০২ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। এখনো অনেকে চাষ করছে। যা লক্ষ্যমাত্রার বেশি চাষ হবে বলে কৃষি বিভাগের ধারনা।
ফলে এ বছর উপজেলায় সরিষার চাষ বেড়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবছর সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। গত বছর স্থানীয় বাজারে সরিষার ভালো দাম পাওয়ায় এবার এ উপজেলার এক হাজারের বেশি কৃষক এ সরিষা চাষ করেছেন। আগামীতে এ জাতের সরিষা চাষে কৃষকরা আরও আগ্রহী হবেন বলে তাদের ধারণা। তবে শুধু ধান চাষ করলে হবে না। পাশাপাশি ভুট্রা, সরিষা, আলু, সূর্যমুখী ফুল, পাট, তিলসহ অন্যান্য ফসল চাষের প্রতিও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
কৃষকের নিপুন হাতে প্রকৃতির বুকে গড়ে তোলা ভোজ্য তেল হিসেবে সরিষার তেলের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে সরিষা আবাদ করা হয়েছে। কৃষি বিভাগের সহযোগিতা ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলনের পাশাপাশি দাম ভালো পাওয়ার আশা কৃষকদের। ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় আগামীতে আরও সরিষার আবাদ বৃদ্ধির চিন্তা-ভাবনা করছেন উপজেলা কৃষি অফিস।
উপজেলার বিভিন্ন সরিষাক্ষেত ঘুরে দেখা যায়, মাঠে যেন কেউ সবুজের গায়ে হলুদের আল্পনা দিয়ে রাঙিয়ে দিয়েছে। হলুদ ফুলে ভরে গেছে পুরো মাঠ। মাঠের পর মাঠ যেন হলুদের গালিচা। দিগন্ত জুড়ে শুধু হলুদের সমারোহ। সরিষার ফুলে ফুলে মৌঁমাছিরা মধু আহরণে ব্যস্ত। সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌঁমাছির গুনগুনানিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে গোটা মাঠ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কৃষি বিভাগের পরামর্শে শার্শার শার্শা, বাগআঁচড়া বেনাপোল, পুটখালি, বাহাদুরপুর, নিজামপুর, ডিহি, লক্ষ্মণপুর ইউনিয়নসহ উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নের কয়েকজন কৃষক পাঁচ থেকে ছয় বিঘা করে জমিতে অধিক ফলনশীল জাতের সরিষা চাষ করেছেন।
এ বছর দুই বিঘা জমিতে বারি-১৪ ও বিনা-৯/১০ জাতের সরিষা চাষ করা উপজেলার শ্যামলাগাছী গ্রামের কৃষক জাহাঙ্গীর আলম জানান, প্রতি বিঘা সরিষা চাষে খরচ হয়েছে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা। এর বাজারে চাহিদা ভালো থাকে এবং দাম ভালো পাওয়া যায়। বর্তমান সরিষার গাছ, ফুল-ফল ভালো হয়েছে। আশা করছি, বাম্পার ফলন হবে। গত বছরের মতো লাভবান হতে পারবো।
বালুন্ডা গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বলেন, সরিষার চাহিদা ভালো থাকাতে এবং চাষে ক্ষতির সম্ভাবনা কম থাকাতে প্রতি মৌসুমে সরিষার চাষ করি। আশা করছি এবারও দাম ভালো পাওয়া যাবে। এ বছর উপযুক্ত দাম পেলে আগামী বছর সরিষা চাষে আরও অনেকেই ঝুঁকে পড়বে বলে মনে করেন তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার সাহা বলেন, কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। চলতি মৌসুমে উপজেলায় বারি-৮, বারি-১৪, বারি-১৭, বারি-১৮, বিনা-৪, বিনা-৯, বীজ সরবরাহ ও বিতরণ করা হয়েছে। বারি-১৪ সহ অন্যান্য জাতের সরিষা বপনের মাত্র ৭৫-৮০ দিনের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়। এ সরিষা উত্তোলন করে বোরো আবাদ করতে পারেন বলে কৃষকরা একে ‘লাভের ফসল’ হিসেবে অভিহিত করছেন। স্থানীয় বাজারে গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষে অধিক আগ্রহী হয়েছেন বলে মনে করছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবছর সরিষার ভালো আবাদ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরো জানান, বারি-১৪ সরিষার গাছ লম্বা হওয়ায় এর পাতা মাটিতে ঝরে পড়ে জৈব সারের কাজ করায় জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ে। এ জাতের সরিষা আবাদের পর ওই জমিতে বোরো আবাদে সারের পরিমাণ কম লাগে। তাই এ জাতের সরিষা চাষের জন্য আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে উদ্বুদ্ধ করা এবং বিভিন্ন উপকরণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
অর্থ-বাণিজ্য: ডিসেম্বরের ২৭ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: চ্যাটজিপিটিতে ভয়েস ব্যবহার
সারাদেশ: শ্রীমঙ্গলে অবৈধ মাটি কাটায় জরিমানা