নওগাঁর সাপাহার উপজেলায় চলতি মৌসুমে সরিষার বাম্পার ফলন কৃষি অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এ বছর উপজেলায় ৬ হাজার ৭১০ হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ করা হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে থাকা দৃশ্য যেমন চোখ জুড়ানো, তেমনি এটি কৃষক ও মৌচাষিদের জন্য হয়ে উঠেছে আয় বৃদ্ধির বড় উৎস।
সরিষার ফুলকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত মৌচাষিরা সাপাহারে অবস্থান নিয়ে মধু উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বর্তমানে ৭ জন মৌচাষি উপজেলায় মোট ১ হাজার ৬৫টি মৌবক্স স্থাপন করেছেন। এসব মৌবক্স থেকে ইতোমধ্যে পর্যায়ক্রমে প্রায় ১ হাজার ৩৫ কেজি বিশুদ্ধ মধু সংগ্রহ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, সামনে আরও কয়েক দফায় মধু সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি নতুন করে আরও কয়েকজন মৌচাষি এসে মৌবক্স স্থাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মৌচাষিরা জানান, সরিষার ফুল থেকে সংগৃহীত মধু অত্যন্ত মানসম্মত হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা ও দাম দুটোই ভালো। স্থানীয় বাজার ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এই মধু সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে মৌচাষিদের পাশাপাশি স্থানীয় পরিবহন ও শ্রমিকরাও উপকৃত হচ্ছেন।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, মৌমাছির মাধ্যমে সরিষার পরাগায়ন বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসলের ফলন স্বাভাবিকের তুলনায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। ফলে একই জমিতে উৎপাদন ব্যয় কমে গিয়ে কৃষকের লাভের পরিমাণ বাড়ছে। এ কারণে অনেক কৃষক মৌচাষিদের স্বাগত জানাচ্ছেন এবং ভবিষ্যতে সমন্বিতভাবে চাষাবাদে আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার শাপলা খাতুন জানান, চলতি মৌসুমে সরিষার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে, কৃষক ও মৌচাষিদের এই সমন্বিত উদ্যোগ টেকসই কৃষি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর সরিষার উৎপাদন নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এবিষয়ে স্থানীয় কৃষকরা জানান, সাপাহার কৃষি অফিসের মাধ্যমে তারা সরকারি প্রণোদনা, উন্নত জাতের বীজ ও প্রয়োজনীয় কৃষি পরামর্শ পেয়েছেন। এসব সহায়তার ফলে সরিষা চাষে আগ্রহ বেড়েছে। তারা আরও জানান, ভবিষ্যতে সরকারি সহায়তা ও প্রণোদনা বাড়ানো হলে অধিক জমিতে সরিষা চাষ করে তেলজাত ফসলে দেশকে আরও স্বয়ংসম্পূর্ণ করা সম্ভব হবে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, সরিষা চাষ ও মধু উৎপাদনের এই সমন্বিত কার্যক্রম সাপাহার উপজেলার কৃষিতে নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনার সৃষ্টি করেছে। এতে একদিকে কৃষকের আয় বাড়ছে, অন্যদিকে মৌচাষিদের কর্মসংস্থান ও লাভের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। সব মিলিয়ে এই উদ্যোগ স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি কৃষি খাতে একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করছে।
অর্থ-বাণিজ্য: ডিসেম্বরের ২৭ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি: চ্যাটজিপিটিতে ভয়েস ব্যবহার
সারাদেশ: শ্রীমঙ্গলে অবৈধ মাটি কাটায় জরিমানা