image
ছবি: সংগৃহীত

তীব্র শীতে জবুথবু দেশবাসী, দেখা নেই সূর্যের

সোমবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

সারাদেশে দিন দিন শীতের প্রকোপ বাড়ছে। ক্রমশ কমে আসছে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। দিনভর দেখা মেলেনি সূর্যের। শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও এমন তীব্র শীতে নাকাল রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের মানুষ। সোমবার,(২৯ ডিসেম্বর ২০২৫) ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সারাদিন সূর্যের দেখা মেলেনি, ছিল মেঘলা আকাশ ও ঠাণ্ডা বাতাস। ফলে দিনভর শীতের তীব্রতা অনুভূত হয়েছে নগরজুড়ে।

আবহাওয়া অফিসের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গতকাল রোববার ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অন্যদিকে সোমবার, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫.৫ ডিগ্রি।

টানা দ্বিতীয় দিনের মতো কিশোরগঞ্জে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে। জেলার হাওর উপজেলা নিকলীতে অবস্থিত আবহাওয়া কার্যালয়ে সোমবার, সকালে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। গতকাল রোববার নিকলীতে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। নিকলী আবহাওয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আখতার ফারুক বলেন, ‘সোমবারের তুলনায় শীতের তীব্রতা সামান্য কমলেও জেলার ওপর দিয়ে এখনও মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। সহসাই শীতের অনুভূতি কমার তেমন সম্ভাবনা নেই।’ মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কারণে কনকনে শীতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষের। বিশেষ করে, হাওর এলাকার বোরো ধান চাষ করা কৃষক, জেলে ও ভাসমান মানুষকে চরম কষ্ট পোহাতে হচ্ছে।

চট্টগ্রামে সোমবার, ভোর থেকেই ছিল এক ধূসর শহর। চারদিক ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা, আকাশে সূর্যের কোনো চিহ্ন নেই। কনকনে শীত নগরজীবনে এনে দিয়েছে জড়তা। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার চট্টগ্রামে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে এসেছে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ হাফিজ উদ্দিন জানান, আগামী কয়েকদিন চট্টগ্রামে সকাল ও রাতের দিকে ঘন কুয়াশা থাকতে পারে। সেই সঙ্গে শীতের তীব্রতা থাকারও আশঙ্কা রয়েছে। সোমবার সকালে ঘুম ভাঙতেই অনেকেই টের পেয়েছেন শীতের দাপট। তাই ঘর ছাড়ার আগে গরম কাপড়ের ওপর নির্ভরতা বেড়েছে। রাস্তায় নেমে দেখা যায়, কুয়াশার কারণে ঝাপসা হয়ে আছে দূরের ভবন ও গাছপালা। ভোরে যানবাহন চলাচল ছিল বেশ ধীরগতির। নগরের বিভিন্ন এলাকায় খেটে খাওয়া মানুষের কষ্টটা যেন আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ভাসমান শ্রমিক, পথশিশু ও দিনমজুর অনেকেই খোলা আকাশের নিচে শীতের সঙ্গে লড়াই করছেন। শহরের বাসিন্দাদের অনেকেই বলছেন, এ বছর শীতের প্রকোপ তুলনামূলকভাবে বেশি। আগের দিনের চেয়ে কুয়াশা আজ আরও ঘন। সূর্যের দেখা না মেলায় ঠাণ্ডার অনুভূতিও যেন বেড়ে গেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানাচ্ছে, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের প্রভাবেই শীতের তীব্রতা বাড়ছে। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, এই বলয়ের বর্ধিতাংশ বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছে, যার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়ছে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক অলক পাল বলেন, উত্তরাঞ্চলের তুলনায় চট্টগ্রামে সাধারণত শীত কম থাকে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এখানে ঘন কুয়াশার প্রবণতা বাড়ছে। বায়ুম-লের আর্দ্রতা বৃদ্ধি, বাতাসের গতিপথে পরিবর্তন এবং উত্তর দিক থেকে আসা শীতল বায়ুর প্রবাহ সবমিলিয়েই এই কুয়াশাচ্ছন্ন ও ঠাণ্ডা পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। সূর্যের আলো বাধাগ্রস্ত হওয়ায় দিনের বেলাতেও শীতের অনুভূতি থেকে যাচ্ছে।

অধ্যাপক অলক পাল আরও বলেন, এ ধরনের আবহাওয়া সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে ফেলছে দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষকে। শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য এই শীত ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে। নানা ধরনের ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বাড়তে পারে।

চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতেও ঠাণ্ডার প্রভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। চিকিৎসকদের ভাষ্য, গত কয়েকদিনে সর্দি-কাশি, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও হাঁপানির সমস্যা নিয়ে অনেক মানুষ হাসপাতালে আসছেন। শিশু ও বয়স্ক রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগে প্রতিদিনই ঠাণ্ডাজনিত উপসর্গ নিয়ে রোগী ভিড় করছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, কুয়াশা ও ঠাণ্ডা বাতাসের কারণে এসব রোগের ঝুঁকি বেড়েছে। শীত থেকে বাঁচতে গরম কাপড় ব্যবহার, ভোর ও রাতের ঠাণ্ডা এড়িয়ে চলা এবং অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলা হচ্ছে।

প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বিশেষ করে দেশের উত্তর জনপদে কুয়াশার দাপট। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এক দীর্ঘ কুয়াশার স্তর দেশের প্রায় সব এলাকায় এখন ছড়িয়ে আছে। আর কুয়াশা থাকায়, সূর্যের আলো না দেখা যাওয়ায় তাপমাত্রাও কমছে দ্রুত। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, আগামী আরও দুই দিন অন্তত এমন কুয়াশা থাকতে পারে। এরপর তা কেটে যেতে পারে কিছুটা। তখন শীতের প্রকোপও খানিকটা কমতে পারে।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড পৌর সদরের বাইপাস এলাকার সড়ক বিভাজক থেকে সোমবার, ভোরে পথচারী এক বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তার নাম পরিচয় জানা যায়নি। এলাকাবাসীর ধারণা, কনকনে শীতে ওই নারীর মৃত্যু হয়েছে। সড়ক বিভাজকের ওপর কম্বল গায়ে দেয়া অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এলাকার সামাজিক সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা লাশটি দাফনের ব্যবস্থা করেন। সীতাকুণ্ড থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলমগীর বলেন, সীতাকুণ্ড সদরের বাইপাস সড়ক থেকে এক বৃদ্ধার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে বেওয়ারিশ হিসেবে লাশটি দাফনের জন্য হস্তান্তর করা হয়। এদিকে সারাদেশের মতো সীতাকুণ্ডে গত কয়েকদিন ধরে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার আজ উপজেলায় ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করে। এটাই এই মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। দুপুর একটা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মেলেনি। ঠাণ্ডায় জবুথবু অবস্থা দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষের। অনেকেই কাজে যেতে পারেননি।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

সম্প্রতি