কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলামসহ দলের পাঁচ নেতা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। জেলার অন্য আসনগুলোর তুলনায় এ আসনেই সবচেয়ে বেশি বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
এদিকে মাজহারুল ইসলামের মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে গত রোববার রাতে জেলা শহরে মশাল মিছিল করেছেন দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া চার নেতা। গত রোববার বিকেল ৫টা পর্যন্ত এই আসনে যেসব বিএনপি নেতা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন তারা হলেন- সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুদ হিলালী, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও সাবেক ঢাকা বিভাগীয় স্পেশাল জজ রেজাউল করিম খান, সাবেক সহ-সভাপতি রুহুল হোসাইন ও সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি খালেদ সাইফুল্লাহ।
জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে সোমবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত জেলার ছয়টি আসনে ৬৭ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ১৩ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনে আইনজীবী মো. জালাল উদ্দীনকে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। জালাল উদ্দীন ছাড়াও এ আসন থেকে মো. আনিসুজ্জামান খোকন ও নূর উদ্দিন আহম্মেদ মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হিসেবে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মুহাম্মদ ওসমান ফারুক মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তবে এখান থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা ও বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সুরক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক এ কে এম আলমগীর। তাছাড়া এ আসনে জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব মো. মুজিবুল হক ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জেলা শাখার সভাপতি মো. আলমগীর হোসাইন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনে আলোচিত বিএনপি নেতা ফজলুর রহমানকে দলীয় মনোনয়ন দেয়া হয়। তিনি ইটনায় নির্বাচন কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমাও দিয়েছেন। তবে এ আসনে সাবেক জেলা প্রশাসক আবদুর রহিম মোল্লা, মো. শাহীন রেজা চৌধুরী ও কাজী রেহা কবির স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসনে বাংলাদেশ জাতীয় দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগদান করা সৈয়দ এহসানুল হুদাকে বিএনপির চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তবে এ আসনে বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি শেখ মজিবুর রহমানও মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। যদিও এখানে বিএনপি থেকে প্রাথমিক মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল শেখ মজিবুর রহমানকে। কিন্তু গত ২২ ডিসেম্বর নিজের দল বিলুপ্ত করে সৈয়দ এহসানুল হুদা বিএনপিতে যোগদান করায় তাকেই চূড়ান্ত মনোনয়ন দেয়া হয়।
কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনে বিএনপি থেকে মনোনীত হয়ে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলম। এখান থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন শাফি উদ্দিন আহাম্মদ।
কিশোরগঞ্জ-১, কিশোরগঞ্জ-৩ ও কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়ন না পেয়ে জেলা বিএনপির ছয় শীর্ষ নেতার মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া চলছে।
যে কারণে প্রকাশ্যে দলে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। একে অন্যর বিষোদগার করছেন। এর মধ্যে কিশোরগঞ্জ-১ ও কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে লাগাতার আন্দোলন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি চলে আসছে।
গত রোববার দুটি আসনেই মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবিতে কাফনের কাপড় পরে বিক্ষোভ মিছিল ও মশাল মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাতে কিশোরগঞ্জ-১ আসনে মশাল মিছিল ও দিনের বেলায় কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে কাফনমিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মনোনয়ন না পাওয়া নেতা সাবেক ঢাকা বিভাগীয় স্পেশাল জজ ও জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি মো. রেজাউল করিম খান বলেন, কিশোরগঞ্জ-১ আসনে যে প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তাতে করে আসনটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে। তাই তিনিসহ তার সঙ্গে মনোনয়ন পরিবর্তনে আন্দোলনকারী নেতারা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। তারা এখনও আশাবাদী, এখানে দলীয় স্বার্থেই মনোনয়ন পরিবর্তন হবে। না হয় তারা বিকল্প চিন্তা করবেন।
বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম বলেন, এ আসন থেকে অনেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু কেন্দ্র থেকে সূক্ষ্মভাবে যাচাই-বাছাইয়ের পর তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। আসনের দুই উপজেলার বিএনপির নেতাকর্মীরাও তার সঙ্গে আছেন। তিনি বলেন, ‘দল আমার ওপর আস্থা রেখে মনোনয়ন দিয়েছে। আমার বিশ্বাস, দলের সে আস্থা-ভরসা আমি রক্ষা করতে পারবো এবং বিপুল ভোটে জয়লাভ করে বিএনপিকে এ আসন উপহার দেবো।’
জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলম বলেন, দল বুঝেশুনেই সব আসনে প্রার্থী দিয়েছে। আশা করা হচ্ছে প্রতিটি আসনেই বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন।
এদিকে ছয়টি আসনের প্রত্যেকটিতে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরা মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি মো. নাজমুল ইসলাম বলেন, সব আসনেই তাদের প্রার্থীরা মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। পরবর্তী সময়ে জোটের ভাগাভাগিতে ছাড়তে হলে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেয়া হবে। একই কথা বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জেলা শাখার সভাপতি মো. আলমগীর হোসাইন। তিনি বলেন, জেলার ছয়টি আসনেই তাদের সব প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। জোটের সমঝোতায় পরে ছাড় দেয়া হতে পারে।
সারাদেশ: আদমদীঘিতে ভটভটি উল্টে দুইজন নিহত
ক্যাম্পাস: জকসু নির্বাচন স্থগিত
সারাদেশ: ঝিনাইদহের মাঠজুড়ে হলুদের গালিচা