কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পদ্মা নদী তীরবর্তী মরিচা ইউনিয়নের চৌদ্দহাজার মৌজায় ও ফিলিপনগর ইউনিয়নের একটি অংশের হাইকোর্ট, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বিআইডব্লিউটিএর নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে প্রকাশ্যেই চলছে অবৈধ বালু উত্তোলন। ড্রেজার ও বলগেট ব্যবহার করে দিন-দুপুরে বালু তোলা হচ্ছে, যার নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী।
স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজশাহী ও কুষ্টিয়া জেলার নিষিদ্ধঘোষিত একাধিক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ী চক্রের পৃষ্ঠপোষকতায় এই অবৈধ বালু উত্তোলন দীর্ঘদিন ধরে চলমান। প্রতিবাদ করতে গেলেই স্থানীয়দের পড়তে হয় অস্ত্রের মুখে।
অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে পদ্মা নদীর তীব্র ভাঙনে ইতোমধ্যে হাজারো পরিবার তাদের বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। চরম ঝুঁকির মুখে রয়েছে শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত নদী রক্ষা বাঁধ। তবুও প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় ক্ষোভ বাড়ছে এলাকাবাসীর মধ্যে। এ নিয়ে মাঝে মধ্যে মানববন্ধনও করেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দৌলতপুর উপজেলার চৌদ্দহাজার মৌজায় বালু উত্তোলন ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে অতীতে একাধিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। একপর্যায়ে যৌথ বাহিনীর অভিযানে কিছুদিন পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও পুনরায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। পরবর্তীতে আবারও কয়েকটি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার নিষিদ্ধঘোষিত সাবেক নেতা ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের পৃষ্ঠপোষকতায় কয়েকটি সন্ত্রাসী বাহিনী এই বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত। অভিযোগ রয়েছে, মেসার্স সরকার ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান এই অবৈধ বালু ব্যবসার নেতৃত্ব দিচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটি রাজশাহীর বাঘা উপজেলার লক্ষীনগর মৌজায় ২৪ একর বৈধ ইজারা পেলেও সেখানে পর্যাপ্ত বালু না থাকায় তারা পদ্মার অপর পাড়ে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মরিচা ও ফিলিপনগর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় এসে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে স্থানীয় গিট্টু সোহাগ বাহিনী নামে পরিচিত একটি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী দল।
বালু উত্তলনকে কেন্দ্র করে গত ১১ জুলাই কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার ফয়জুল্লাহপুর ঘাটে স্পিডবোর্ডযোগে এসে একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এতে স্থানীয় কামরুল গাইনের ভাই আমরুল গাইন গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনায় ভেড়ামারা থানায় মামলা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি।
দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ও মরিচা ইউনিয়নের সাধারণ মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাদের দাবি অবিলম্বে চৌদ্দহাজার মৌজায় অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে সন্ত্রাসী বাহিনীকে আইনের আওতায় আনা হোক। তা না হলে প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এ বিষয়ে মেসার্স সরকার ট্রেডার্স এর মালিক এস. এম. একলাস আহমেদ বলেন, আমি রাজশাহীর বাঘায় বৈধভাবে ইজারা নিয়েছি। কেউ যদি ইজারার বাইরে অন্য জেলায় বালু উত্তোলন করে, সেটা সম্পূর্ণ বেআইনি। বিষয়টি আমি দেখছি।
দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিন্দ্য গুহ বলেন, আমি সদ্য যোগদান করেছি। যদি দৌলতপুর এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন হয়, অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজশাহী জেলা প্রশাসক অতিরিক্ত মোহাঃ সবুর আলী জানান, ইজারাপ্রাপ্ত এলাকার বাইরে কোথাও বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ অবৈধ। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাম্মী আক্তার বলেন, ২৪ একরের বাইরে বালু উত্তোলন হলে তা বেআইনি। সে ক্ষেত্রে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পদ্মা নদীর দায়িত্বপ্রাপ্ত নৌ-পুলিশের পুলিশ সুপার বিএম নুরুজ্জামান বলেন, অস্ত্রসজ্জিত সন্ত্রাসীরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্টদের তথ্য দিলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
স্থানীয়রা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, অবিলম্বে প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ না হলে দৌলতপুর উপজেলার ফিলিপনগর ও মরিচা ইউনিয়নের চরাঞ্চলের মানুষ এবং চৌদ্দহাজার মৌজার জমির মালিকরা বৃহত্তর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন।
আন্তর্জাতিক: উত্তর কোরিয়ায় বিরল পর্যটন, রাশিয়ার এক নারীর অভিজ্ঞতা
সারাদেশ: গাড়ি চাপায় প্রাণ গেল গর্ভবতী হরিণের