image
৫৪ বছর পরেও স্বীকৃতি পায়নি শহীদ পরিবারের পিতা ও ভ্রাতৃহীন বোন মিন্টু রানী হালদার -সংবাদ

মোরেলগঞ্জে স্বাধীনতার ৫৪ বছর পার হলেও হয়নি বধ্যভূমি

মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
গনেশ পাল, মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট)

১৯৭১ সালে সেদিন পাকসেনাদের গুলিতে একই পরিবারের ৫ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল ওরা। একটি গ্রামে ৩শ’ ঘর অগ্নি সংযোগ করে জ্বালিয়ে দিয়েছিল সেদিনের সেই দিনগুলোর স্মৃতি আজও কাঁদিয়ে বেড়ায়। কথাগুলো বলেন বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে চিংড়াখালী ইউনিয়নের পূর্ব চন্ডিপুর গ্রামের পিতা ভাই হারা এক বোন মিন্টু রানী হালদার (৭০)। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেড়িয়ে গেলেও স্বীকৃতি পাইনি শহীদ পরিবারের। গণহত্যার স্থানে আজও হয়নি বধ্যভূমি। স্থানীয়দের দাবী স্বাধীনতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি ধরে রাখতে গণহত্যার স্থানে বধ্যভূমি নির্মাণ করা।

সরজমিনে মঙ্গলবার, (৩০ ডিসেম্বর ২০২৫) উপজেলার পূর্ব চন্ডিপুর গ্রাম বলেশ্বর নদীর তীরবর্তী মোরেলগঞ্জ ও জিয়ানগর দুটি উপজেলার সীমান্তবর্তী এ গ্রামটি গঠিত। এক সময় এ গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ লোকেরই ছিল বসবাস। ১৯৭১ সাল স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মৃতি বলতে গিয়ে অঝরে কাঁদলেন পিতা ভাই হারা এক স্বজন মিন্টু রানী হালদার। বার্ধক্যের কাতারে শেষ বয়সে এসে শহীদ মুক্তিযোদ্ধার পরিবারের সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি ও স্মৃতি স্বরূপ বধ্যভূমির নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন সরকারের প্রতি। সংবাদ কর্মীদের সামনে পিতা ও ভাইকে হারানো এ সন্তান বলেন ১৯৭১ সাল ৬ই মে বাংলা ২২ শে বৈশাখ এই দিনটিতে বাবা দেবেন্দ্রনাথ হালদার তার গুরু বিপিন চাঁদ ঠাকুরের মৃত্যু বার্ষিকী অনুষ্ঠানে বাড়িতে ব্যাপক লোক সমাগম। একমাত্র ভাই, খুলনা পলিটেকনিক্যাল কলেজের প্রভাষক ইঞ্জিনিয়ার বিমল কৃষ্ণ হালদার, ঠাকুরদাদা দাড়িকানাথ হালদার, কাকাতো ভাই উপেন্দ্রনাথ হালদার, অনিল কৃষ্ণ হালদার একই বাড়ির ৫ জনকে গুলি করে পাখির মতো হত্যা করে পাকসেনারা। তখন বেলা সকাল ৮ টা স্পিড বোর্ড যোগে পিরোজপুর থেকে নদী পথে এসে বাড়ীর পেছন থেকেই উঠে প্রথমে বাবা দেবেন্দ্রনাথ হালদারকে মন্দির থেকে বের করে গুলি করে হত্যা করে আমার চোখের সামনেই, বয়স তখন আমার ১৬ বছর সবকিছু ভালোভাবেই বুঝি। বাবাকে মারার পরে ভাই বিমল কৃষ্ণ বাথরুমে পালিয়ে গিয়েও আত্মরক্ষা করতে পারিনি। তাকেও ধরে নিয়ে বাড়ির উঠানেই গুলি করে। এভাবে একে একে ওরা ৫ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। বাড়ির অন্য সবাই আমরা বাগানের মধ্য পালিয়ে থেকে সবকিছু দূর থেকে শুধু তাকিয়ে দেখেছি। সেদিনের পাকসেনাদের হামলায় গুরুতর ১৫/২০ জন আহত অবস্থায় মাটিতে পড়েছিল। গোটা গ্রামে ৫ ঘণ্টা ধরে তা-ব চালিয়েছিল রাজাকার ও পাকসেনারা। গ্রামের অন্যস্থান থেকেও গণহত্যা করে এ ঠাকুর বাড়ীতে লাশের স্তূপ ফেলে রেখে যান সেদিন এ পাকসেনারা। জীবনের শেষ বয়সে এসে আজও পাইনি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের স্বীকৃতি। এখানে নির্মিত হয়নি কোনো বধ্যভূমি। একাধিকবার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করেও হয়নি কোনো ব্যবস্থা। যদিও স্বাধীনতার পরবর্তী থেকে ২২ বৈশাখ প্রতিবছর এ দিনটিতে মতুয়া ভক্তদের এখানে বসে মিলনমেলা দেশ বিদেশের হাজার হাজার ভক্তরা এখানে সমবেত হন। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরে হলেও স্মৃতি স্বরূপ ধরে রাখতে এখানে একটি বধ্যভূমি নির্মাণ করার দাবি জানান স্থানীয়রা।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাবিবুল্লাহ বলেন বধ্যভূমি নির্মাণের বিষয়ে তিনি জেলা সমবায় সভায় উপস্থাপন করবেন, বধ্যভূমি নির্মাণ করার ক্ষেত্রেও অনেকটা নিয়ম-কানুন রয়েছে, তবে সে নিয়ম-কানুন মেনেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আবেদন প্রেরণ করা হবে।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

» অপহরণ মামলার সূত্র ধরে মাথাবিহীন লাশের রহস্য উদ্ঘাটন

» চান্দিনায় হাত-পা-মুখ বেঁধে সাত বছরের শিশুকে ধর্ষণ

» পটুয়াখালীর বাউফলে শ্রমিকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

» ট্রেনে নাশকতার দুই মামলায় গ্রেপ্তার ৩ জন

» বুধবার অতিরিক্ত ট্রেন চলাচল করবে: মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ

» নিকলী হাওড়: প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মৎসসম্পদের সুরক্ষা জরুরি

সম্প্রতি