ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সুযোগ নিয়ে এক দুর্বৃত্ত সালেহা বেগম নামে একজন নারীর কাছ থেকে ১৪ লাখ টাকা নেয়। ওই সময় তাকে বিয়ে করার আশ্বাস দেয়। পরবর্তীতে ওই নারী পাওনা টাকা ও বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করলে তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। হত্যার পর তার মাথা একস্থানে আর মাথাবিহীন লাশ খুলনার বটিয়াঘাটা ঝপঝপিয়া নদীকে ফেলে দেয়। ঘটনা ধামাচাপা দিতে ওই নারীর কাপড়সহ আসবাবপত্র মাটিতে পুঁতে রাখে।
ওই নারীর এক ছেলের অপহরণের অভিযোগ ও একটি নিউজের লিংকের সূত্র ধরে টানা ৪০ দিন অনুসন্ধান চালিয়ে অবশেষে পিবিআইয়ের তদন্ত টিম সুনামগঞ্জ থেকে সন্দেহভাজন আসামি লালন গাজীকে গ্রেপ্তার করে। তার দেয়া তথ্যে আরও কাহিনী বেরিয়ে আসছে। খুলনার পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন মঙ্গলবার, (৩০ ডিসেম্বর ২০২৫) এ তথ্য জানিয়েছেন।
মামলার পলাতক অন্য আসামিদের চিহ্নিত করে আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নিতে পিবিআইয়ের তদন্ত দল কাজ করছেন বলে এসপি জানিয়েছেন।
পিবিআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খুলনা জেলার ডুমুরিয়ার সাজিয়ারা গ্রামস্থ মজিদ ফকিরের ছেলে শামিম ফকির তার মা সালেহা বেগম অপহরণ সংক্রান্তে একই গ্রামের মো. লালন গাজীকে আসামি করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি তদন্ত করার জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন।
পিবিআইয়ের তদন্ত টিম আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে জানতে পারে ভিকটিম সালেহা বেগম দীর্ঘদিন ধরে পিরোজপুর জেলায় ইন্দুকানি এলাকায় অবস্থান করছে। কিন্তু গত ১৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যা থেকে তার ব্যবহ্নত মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এ নিয়ে পিবিআইয়ের তদন্ত কর্মকর্তা পিরোজপুরে ওই এলাকায় অনুসন্ধান করে জানতে পারে সালেহা বেগম ও আসামি লালন গাজী ওই এলাকার একটি বাড়িতে বাসা ভাড়া নিয়ে দীর্ঘদিন বসবাস করতো।
সর্বশেষ গত ১৯ আগস্ট সন্ধ্যায় সালেহা বেগম ও লালন গাজী তার মামার বাড়ি খুলনা বটিয়াঘাটা গজালিয়া গ্রামে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে চলে যায়।
গত ২০ আগস্ট খুলনার বটিয়াঘাটা থানা পুলিশ ঝপঝপিয়া নদী থেকে মাথাবিহীন অজ্ঞাত নামা একজন মহিলার মৃতদেহ উদ্ধার করছে। এরপর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত ও ডিএনএন নমুনা সংরক্ষণ করে। এ নিয়ে বটিয়াঘাটা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। আর মৃতদেহটি পুলিশ বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করা হয়।
পিবিআই মাথাবিহীন মহিলার মৃতদেহের একাধিক স্থিরচিত্র তদন্তাধীন অপহরণ মামলার বাদী ও তার পরিবারকে দেখালে তারা মৃতদেহের পরনের পোশাক ও শরীরের অন্যান্য আলামত দেখালে মৃতদেহ বাদীর মা সালেহ বেগমের বলে প্রাথমিকভাবে দাবি করে।
এরপর মামলাটি পিবিআই খুলনা স্ব-উদ্যোগে তদন্তের দায়িত্ব নেয়। তদন্তকালে জানা যায়, অজ্ঞাতনামা মহিলার মৃতদেহটি উদ্ধারের পর আগের অপহরণ মামলার আসামি লালন গাজী পালিয়ে যায়।
পিবিআই ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয়ের পরিকল্পনায় সাতক্ষীরা পিরোজপুর ও নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আসামি লালন গাজীকে গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে সুনামগঞ্জের হালুয়াঘাট বাজারস্থ খেয়াঘাট থেকে গ্রেপ্তার করে। সে গ্রেপ্তার এড়াতে মোবাইল ফোনও ব্যবহার করতো না।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে লালন গাজী বলে তার বাড়ি ও সালেহা বেগমের বাড়ি একই গ্রামে। সালেহা বেগম দীর্ঘদিন সৌদি আরবে ছিল। ২০২৩ সালে দেশে ফিরে আসে। তখন আসামি লালন গাজী তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। পরবর্তীতে তারা স্বামী স্ত্রী পরিচয় দিয়ে পিরোজপুরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতো।
সেখানে অবস্থানকালে আসামি লালন গাজী সালেহা বেগমের ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে ১৪ লাখ টাকা উত্তোলন করে নিয়ে যায়। সালেহা বেগম আসামির কাছে ১৪ লাখ টাকা ফেরত ও তাকে বিয়ে করার জন্য চাপ দেয়।
এতে লালন গাজী সালেহা বেগমকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মতে, গত ১৯ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ভাড়া বাসা থেকে সালেহা বেগমকে নিয়ে খুলনায় রওনা হয়। পরবর্তীতে অজ্ঞাত আসামির সহায়তা খুলনার বটিয়াঘাটা নামক খেয়াঘাটে নিয়ে সালেহা বেগমকে হত্যা করে। পরে মাথা বিচ্ছিন্ন করে মৃতদেহ স্থানীয় ঝপঝপিয়া নদীকে ফেলে দেয়। ২০ আগস্ট পুলিশ মাথাবিহীন মৃতদেহ উদ্ধার করে। গ্রেপ্তারকৃত আসামি লালনগাজীর দেখানো ও শনাক্ত মতে, গত ২৭ ডিসেম্বর দুপুরে আসামির মামাতো ভাইয়ের বাড়ির বসতঘরের উঠানের মাটি খুড়ে সালেহা বেগমের ব্যবহ্নত মালামাল ও পরনের কাপড়-চোপড় উদ্ধার করা হয়।
গতকাল সোমবার আসামিকে জিজ্ঞসাবাদ শেষে আদালতে সোপর্দ করে কারাগারে পাঠানো হয়। পলাতকদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে বলে তদন্ত কর্মকর্তা এসআই রেজোয়ান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।