টানা তিন ধরে সূর্যের দেখা মেলেনি দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সামান্য বাড়লেও, দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যবধান কমে যাওয়ায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়ে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একই দিনে বিকেল ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং নীলফামারীর ডিমলায় ১৩ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলায়— ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জিতেন্দ্রনাথ এসব তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, আগামী ২ থেকে ৩ দিন শীতের তীব্রতা অব্যাহত থাকতে পারে। হিমালয় থেকে ঘণ্টায় প্রায় ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার বেগে বয়ে আসা ঠান্ডা বাতাস পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
আকাশ পরিষ্কার থাকায় এবং হালকা কুয়াশার কারণে উত্তরের ঠান্ডা বাতাস খুব সহজেই এ অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান তিনি। তীব্র শীতের কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। অনেকেই বাধ্য হচ্ছেন ঘরের ভেতর থাকতে।
স্থানীয় হাসপাতাল ও ক্লিনিক সূত্রে জানা গেছে, দিন ও রাতের তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে হাসপাতালগুলোতে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত রোগির সংখ্যা বেড়েছে। টানা তিন দিন ধরে জেলার নিকলী উপজেলায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে হাওর অধ্যুষিত এই উপজেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন সোমবার সকালে নিকলীতে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রোববার সকালে এখানকার তাপমাত্রা নেমে আসে ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রোববার ও সোমবারের তুলনায় শীতের তীব্রতা সামান্য কমলেও জেলার ওপর দিয়ে এখনো মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। চলতি মাসজুড়ে শীতের প্রভাব অব্যাহত থাকতে পারে এবং শীতের অনুভূতি কমার তেমন সম্ভাবনা নেই।
শীতের এ পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষজন। পাশাপাশি জেলার হাওরাঞ্চলে বোরো ধান আবাদের মৌসুম চলায় কৃষকেরাও বাড়তি দুর্ভোগে পড়েছেন। নিকলী নতুন বাজার এলাকার বাসিন্দা আবেদ আলী (৭০) বলেন, ‘তিন দিন ধরে আমরার এহানে অনেক শীত। শীতের লাগে ঘরতে বাইর অইতে ফারিনা। বৃষ্টির মতো কুয়াশা পড়তাছে। কামকাজও যাইতে পারতেছি না। কষ্টে আছি।’ স্থানীয় শিক্ষক হেলাল উদ্দিন জানান, সকাল থেকে আকাশে সূর্যের দেখা নেই। কনকনে শীত মানুষের জীবনে এনে দিয়েছে জড়তা। অতিরিক্ত ঠান্ডায় নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে। দৈনন্দিন কাজে যেতে না পেরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তাঁরা। এর প্রভাব পড়েছে বোরো ধানের আবাদেও। মৌসুমের শুরুতে অতিরিক্ত ঠান্ডায় ধানের চারা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এখানকার কৃষকেরা।
নিকলী আবহাওয়া কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আখতার ফারুক বলেন, আজ (মঙ্গলবার)ও সারা দেশের মধ্যে নিকলীতেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কয়েক দিন ধরে কিশোরগঞ্জে তাপমাত্রা কম। ঘন কুয়াশার সঙ্গে হিমেল হাওয়া প্রবাহিত হওয়ায় কয়েক দিন ধরেই তাপমাত্রা নিম্নমুখী। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান অনেকটা কমে যাওয়ায় তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। তবে রোববার ও সোমবারের তুলনায় তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও জেলার ওপর দিয়ে এখনো মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।