image
সৈয়দপুর (নীলফামারী) : সড়ক ও জনপথ বিভাগের সড়কের দুই পাশে ভূ-সম্পদ বেদখল হয়ে গেছে। ছবিটি নেয়া হয়েছে শহরের রংপুর সড়ক থেকে -সংবাদ

সৈয়দপুরে সওজ’র ৪০০ কোটি টাকা মূল্যের ভূ-সম্পত্তি বেদখল

বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতিনিধি, সৈয়দপুর (নীলফামারী)

নীলফামারীর সৈয়দপুরে সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগের প্রায় ৪০০ কোটি টাকা মূল্যের ভূ-সম্পদ বেহাত হয়ে গেছে। এ ভূ-সম্পদ উদ্ধারে কর্তৃপক্ষের নেই কোনো তৎপরতা। শহরের একাধিক সূত্র মতে, দিনাজপুর-ঢাকা সরাসরি সড়কপথে চলাচল করতে সৈয়দপুর হয়ে এই মহাসড়ক নির্মাণ করা হয় ১৯০০ সালের গোড়ার দিকে। এজন্য কর্তৃপক্ষ ভূমি অধিগ্রহণ করে সড়ক নির্মাণ করে। এই সড়কটি প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে সৈয়দপুর শহরের মাঝ দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে শহরের পার্বতীপুর মোড় হতে সড়ক ও জনপদ দপ্তরের ওই সড়কটি কুন্দল গ্রামের হাড়ি মামুন শাহর ব্রীজ পর্যন্ত রয়েছে। যা দৈর্ঘ্যে প্রায় তিন কিলোমিটারের কাছাকাছি। এতে সড়কের উভয় পাশ মিলে ৯২০ শতকের বেশি জায়গা অবৈধ দখলে চলে গেছে। বর্তমানে এ রাস্তার পাশের এক শতক জায়গার দাম ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা। সেই হিসাবে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা মূল্যের ভূ-সম্পদ বেহাত হয়েছে।

সার্ভেয়ার ইয়াসিন আলী সরকারের দেয়া তথ্য মতে, এই সড়কটি সিএস, এসএ ও বিএস নকশায় শহরের মূল কেন্দ্রে সড়কের টপ (যানবাহন চলাচল করে যতটুকু জায়গায়) ২৬ ফুট। সেই হিসাবে রাস্তার প্রশস্ততা স্থান ভেদে ৬০ থেকে ৭০ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু বর্তমান সময়ে এ সড়কটির কিছু কিছু অংশে সড়কের টপ নকশার চেয়ে অনেক কম রয়েছে। তার মতে সড়কের ট্প অংশ বাদ দিয়ে রাস্তার দুই তীরের অংশ পুরোপুরি বেদখলে চলে গেছে। জনসংখ্যার চাপ এবং যান্ত্রিক যানের সংখ্যা বর্তমান সময়ে পূর্বের তুলনায় শতগুণ বেড়েছে। সেই হিসাবে পূর্বের মতো রাস্তার প্রশস্ততা নেই। এজন্য দখল হয়ে যাওয়া সড়কের অংশ উদ্ধার করে পথচারীদের কল্যানে কাজে লাগানোর তিনি দাবি করেন। এমন দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন সৈয়দপুর পৌরসভার সাবেক শ্রেষ্ঠ কাউন্সিলর আকতার হোসেন ফেুক।

সড়ক ও জনপদের এ সড়ক বিষয়ে কথা হয় সৈয়দপুর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, রাস্তার টপ (উপরের অংশে যান চলাচল ব্যবহৃত) ২৬ ফুট হলে সেখানে রাস্তার উভয় পাশে সোল্ডার (মূল রাস্তার তীর) হবে ১০ ফুট করে এবং স্লোপিং হতে হবে (রাস্তার ভিত্তি) ৭ ফুট। সব মিলে এমন রাস্তা নির্মাণে প্রশস্ততা হবে ৬০ ফুটেরও বেশি।

এ নাম প্রকাশ না করার শর্তে সড়ক ও জনপথ বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, শহরের মধ্য দিয়ে যাওয়া মহাসড়কের জায়গা সমাজের প্রভাবশালীরা দখলে নিয়ে বহুতল ভবন নির্মাণ করে কোটি কোটি টাকা আয় করছে। আর এই দখল প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আসছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা ও নজরদারির অভাবে শত শত কোটি টাকার ভূ-সম্পদ অবৈধ দখলে গেছে। ওইসব ব্যক্তিদের মতে শহরের যানজট নিরসনে সওজ কর্তৃপক্ষ শহর বাইপাস সড়ক নির্মাণ করে ২০/২৫ বছর আগে। ওই সড়ক নির্মাণ করতে আবাদি জমি নষ্ট হয়েছে হাজার একরের মতো। আর্থিক ব্যয় হয়েছে কয়েকশো কোটি টাকা। অথচ শহরের মাঝ দিয়ে মহাসড়কের যে অংশ চলে গেছে সেই সড়কের জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করে রাস্তার প্রশস্ততা বৃদ্ধি করা হলে সরকারের বাইপাস সড়ক নির্মাণে বাড়তি টাকা খরচ হতো না। আমলাতন্ত্রের গাফিলতির কারণে জনগণের কষ্টার্জিত টাকার অপচয় থামছে না।

এ ব্যাাপারে নীলফামারী সড়ক বিভাগের সহকারি প্রকৌশলী জুয়েল আহমেদের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, আমাদের সার্ভেয়ারের কাছে রক্ষিত পুরাতন নথি ঘাটলে সড়কটির অধিগ্রহণকৃত জায়গার সঠিক হিসাব মিলবে। একই বিষয়ে মন্তব্য জানতে মুঠোফোনে কথা হয় নীলফামারী সড়ক ভবনের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ জানান, বেদখল হয়ে যাওয়া ভূ-সম্পদ উদ্ধারে আমরা নোটিশ দিয়ে থাকি। সৈয়দপুরের বিষয়েও অবৈধ দখলদারকে দখল ছাড়তে নোটিশ দেয়া হবে।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

সম্প্রতি