image

পেকুয়ায় চার শিক্ষকের বিরুদ্ধে বেতন ভাতার টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতিনিধি, চকরিয়া (কক্সবাজার)

কাইছার উদ্দিন, জাকের হোছাইন, রফিকুল ইসলাম ও কামরুল ইসলাম চারজনই কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের উত্তর মেহেরনামা মনিরুল উলুম মাদরাসার শিক্ষক। অথচ মানুষগড়ার কারিগর এই শিক্ষকরা অন্য প্রতিষ্ঠানে চাকুরিতে থেকে ভুয়া কাগজপত্র সৃজন করে এমপিও জালিয়াতির মাধ্যমে একই ইউনিয়নে অবস্থিত উত্তর মেহেরনামা ইসলামীয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার শিক্ষক পরিচয়ে সরকারি কোষাগার থেকে তিনবছর ধরে বেতনভাতার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করে আসছেন।

এ ঘটনায় প্রতারনার শিকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উত্তর মেহেরনামা ইসলামীয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসার প্রধান শিক্ষক নাসিরউদ্দিন বাদি চলতিবছরের ৮ মে তারিখে পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করার পর ইউএনও মঈনুল হোসেন চৌধুরী কতৃক তদন্তে জালিয়াতির ঘটনাটি ধরা পড়েছে।

লিখিত অভিযোগে আবেদনকারী নাসিরউদ্দিন বলেন, পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নে অবস্থিত উত্তর মেহেরনামা ইসলামীয়া স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদ্রাসার ইবি প্রধান শিক্ষক হই। পক্ষান্তরে বিবাদি

কাইছার উদ্দিন, জাকের হোছাইন, রফিকুল ইসলাম পেকুয়া সদর ইউনিয়নের উত্তর মেহেরনামা মনিরুল উলুম মাদরাসার সহকারী শিক্ষক ও কামরুল ইসলাম প্রধান শিক্ষক পদে কর্মরত রয়েছেন।

অভিযুক্তরা পেকুয়া সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড উত্তর মেহেরনামা ইসলামিয়া মনিরুল উলূম মাদ্রাসার ( কোড নং: ৫৩৯২৫) কর্মরত শিক্ষক হলেও জাল-জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে ভূয়া কাগজ সৃজন করে ভূয়া একজনকে সভাপতি বানিয়ে আমাদের মাদরাসার (উত্তর মেহেরনামা ইসলামীয়া স্বতন্ত্র মাদরাসার কোড নং: ৫৬৭৪৮) শিক্ষক হিসেবে ভুয়া এমপিও হয়ে সরকারী অনুদানের টাকা এবং ও আমাদের মাদরাসার শিক্ষকদের বেতন ভাতা কুটকৌশল করে আত্মসাত করেছেন। তাঁরা জালিয়াতির মাধ্যমে সরকার ও মাদরাসা বোর্ডের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। স্থানীয় সুত্রে জানা গেছে, পেকুুয়া সদরের আহমদ ডিলার চৌমহনীতে শিক্ষা উন্নয়নের জন্য ১৯৮৩ সালে উত্তর মেহেরনামা ইসলামীয়া স্বতন্ত্র মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। ওইসময়ের তৎকালীন সরকার ইবতেদায়ী মাদ্রাসাকে গুরুত্ব দেওয়ায় দেশের অন্যান্য মাদ্রাসার মতো সরকারি স্বীকৃতি ও রেজিষ্টেশনপ্রাপ্ত হয় এ মাদরাসাটি।

১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল প্রলয়ংকারী ঘুণিঝড়ে মাদ্রাসাটি অবকাঠামো সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে অর্থের অভাবে র্দীঘদিন শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ২০১৮ সালে অবহেলিত এলাকা উত্তর মেহেরনামার চৈরভাঙ্গা বলির পাড়া রোড এলাকায় পুনরায় মাদ্রাসার পাঠদান শুরু করে অদ্যবদি শিক্ষা কার্যক্রম চলামান রয়েছে। বর্তমানে মাদরাসায় প্রায় ১৬৫ জন শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত রয়েছে।

মাদরাসার প্রধান শিক্ষক নাসিরউদ্দিন লিখিত অভিযোগে বলেন, পাঠদান কার্যক্রম শুরুর পর সরকারি অনুদান পেতে বিগত সময়ে মাদ্রাসার শিক্ষা অধিদপ্তর এবং ইবতেদায়ী শাখার কর্মকর্তা বেনজির আহমদ এর কাছে অনেকবার আবেদন নিবেদন করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের মাদরাসা সেই থেকে সরকারী অনুদান এবং শিক্ষকদের বেতন ভাতা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তারপরও আমরা দুঃখ কষ্টে মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রেখেছি।

এরইমধ্যে সরকার নতুন করে ইবতেদায়ী মাদরাসাকে জাতীয়করণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলে আমরা মাদরাসার কাগজপত্র নিয়ে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে যোগাযোগ শুরু করি। এতে জানতে পারি আমাদের মাদরাসার এমপিও জালিয়াতি করে অভিযুক্ত অন্য মাদরাসার চার শিক্ষক মিলেমিশে সরকারি অনুদান ও বেতনের টাকা সুকৌশলে আত্মসাত করে চলছেন।

চার মাদরাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন পেকুয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. জাহিদুর রহমান। তিনি বলেন, চার শিক্ষক এক মাদরাসায় চাকুরী করে ২০২৩ সাল থেকে এমপিও জালিয়াতি করে অন্য মাদরাসা থেকে সরকারি বেতন-ভাতা উত্তোলন করে আসছেন। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পাবার পর সদ্য বদলি হওয়া পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মঈনুল হোসেন চৌধুরী তদন্তে জালিয়াতির ঘটনাটি সত্যতা পেয়েছেন। পরে এবিষয়ে তিনি মাদরাসা অধিদপ্তরে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়েছেন।

তিনি বলেন, প্রতিবেদন পাঠানো হলেও গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত অভিযুক্ত চার শিক্ষকের বিরুদ্ধে মাদরাসা অধিদপ্তর কী পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা আমাদের কাছে জানা নেই। এ সংক্রান্ত কোন অফিস আদেশও পাওয়া যায়নি।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

সম্প্রতি