সান্তাহারে রেললাইনে পাথর সাজানোই তার কাজ
দীর্ঘ দিন ধরে বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার সান্তাহার জংশন ষ্টেশনের পাশে পৌওতা রেলগেট থেকে প্রায় এক থেকে দেড় কিলোমিটার রেলপথের রেললাইনের দুপাশের পাথর সাজানোর কাজ করে যাচ্ছেন অজ্ঞাত এক ব্যক্তি।
রেললাইনের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাথর কুড়িয়ে এনে রেললাইনে সাজিয়ে রাখাই তার কাজ। দীর্ঘ দিন থেকে নিরলস ভাবে এই পাথর সাজিয়ে রাখার মহতি এই কাজ করে যাচ্ছেন ওই ব্যক্তি। অজ্ঞাত এই ব্যক্তির পরিচয় আজও পাওয়া যায়নি। কথা একেবারেই বলেন না তিনি। কোন প্রশ্ন করলে আপন মনে পাথর সাজিয়ে রাখার কাজ চালিয়ে যান তিনি। দীর্ঘ দিন থেকে এই কাজ তার নেশা। রাত যাপন করেন সান্তাহার ষ্টেশনের প্লাটফর্মে বা রেলগেটের পাশে ঘরের বারান্দায়। ষ্টেশনের আশপাশের হোটেল ও মানুষের দেয়া সাহায্যের টাকা দিয়ে চলে খাওয়া দাওয়ার কাজ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এই মানবিক কাজ করে বিনা টাকা-পয়সার বিনিময়ে এই অজ্ঞাত ব্যাক্তি। তার থাকার জন্য কোন বাসস্থান নেই, খাবার ব্যবস্থাও নেই। অন্যর সাহায্য সে চলে। আবার সবার দেওয়া খাবার ও টাকা সে নেয়ও না। স্থানীয় এক দোকানদারের কাছে সে তার ব্যবহার্য কাপড় ও অনান্য সামগ্রি রাখে। আজ পর্যন্ত রেল কর্তৃপক্ষ থেকে কেউ তার সাথে যোগাযোগ করেনি। এলাকার লোকজনের কাছে তিনি ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’। ঐ ব্যক্তি কথা খুব কম বলেন। তবে স্থানীয় অনেক ব্যক্তি তার স্বাস্থ্যহানির আশংকা করছে। কারন ঐ ব্যক্তি খেয়ে না খেয়ে দীর্ঘক্ষণ একটানা পাথর টানার মত শক্ত কাজ করেন। গত দেড় থেকে দুই বছর সে এই পাথর ঠেলার কাজ করছেন। কিছুটা কম কথা বলার ঐ ব্যক্তির কেউ যদি স্বজন হয়ে থাকেন তাহলে সান্তাহার পৌওতা রেলগেটে খোঁজ করার জন্য আহবান জানিয়েছেন ঐ এলাকার বাসিন্দা ও সাংবাদিক মনসুর আলী।
স্থানীয় এক মুদি দোকানদার মো. নান্টু মিয়া জানান, দেড় বছর আগে থেকে ঐ ব্যক্তি আমার বাগানে তার ব্যবহত কাপড় চোপড় রাখেন। রাতে কোন কোন দিন ঘুমায়। তার থাকা,খাওয়া ও ঘুমানোর কোন ঠিক নাই। আমি যতটুকু পাড়ি আপ্যায়ন করি। কিন্তু এই দেড় বছরে তার পরিচয় আমরা বের করতে পারিনি। রেলওয়ের কেউ তার খোঁজও নেয়নি। রাত ১২/১ টা পর্যন্ত ঐ ব্যক্তি পাথর রেললাইনের ট্রাকে তুলে দেয়। সবার দেওয়া টাকাও সে নেয় না। শীত, গ্রীস্ম সব সময় সে ঐ কাজ করে। কোন ব্যক্তির স্বজন সে হয়ে থাকলে আমাদের এখানে এসে খোঁজ নিতে পারবেন।
সান্তাহার জংসন স্টেশনের স্টেশন মাষ্টার খাদিজা বেগম জানান, ঐ ব্যক্তির বিষয়ে ব্যাপারে আমার কোন তথ্য জানা ছিল না, আপনাদের মাধ্যমে প্রথম জানলাম। আর উনার বিষয়ে কেউ যদি খোঁজ নেয় তাহলে তার বর্তমান ঠিকানা জানাবো। সান্তাহার রেলওয়ে থানার ওসি হাবিবুর রহমান বলেন, ওই ব্যক্তির বিষয়ে খোঁজখবর নিব এবং সহযোগিতার চেষ্টা করবো।
‘সারাদেশ’ : আরও খবর
