image

দশমিনায় সমন্বিত কৃষি খামারে বাড়ছে মিশ্র ফলের চাষ

বুধবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রতিনিধি, দশমিনা (পটুয়াখালী)

পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ফলের বাগান ও সমন্বিত কৃষি খামারের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। উপজেলায় কৃষি বান্ধব যুব উদ্যোক্তারা সমন্বিত কৃষি খামার স্থাপন করে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। এলাকার বেকার যুবকরা এখন কৃষি খামার গড়ে তুলতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের গছানি গ্রামের কাজী আনিছুর রহমান,বহরমপুর ইউনিয়নের দক্ষিন আদমপুর গ্রামের সুলতান আহমেদ সরদার এবং রনগোপালদী ইউনিয়নের রনগোপালদী গ্রামের শাহ আলম জোমাদ্দারের কৃষি খামার উপজেলায় সর্বত্র সাড়া ফেলেছে। কৃষি খামারে পেপে, কূল,পেয়ারা,মাল্টা,কলার বাগান দেখার জন্য বিভিন্ন এলাকার অনেক দর্শনার্থীরা ভিড় করছে।

উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে কৃষি উদ্যোক্তারা আপেল কূল চাষ করে সফলতা অর্জনের পাশাপাশি নতুন ভাবে স্বপ্ন দেখছে। কৃষি উদ্যোক্তারা কূল চাষ করেই খ্যান্ত হয়নি। তারা কৃষি খামারে নানা জাতের শাকসবজি চাষ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে সবুজ বিপ্লব যটিয়েছে। অত্র অঞ্চলে কূল তেমন চাষ কিংবা ফলন ভাল হতো না। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের পরামর্শে উদ্যোক্তারা কূল চাষ করতে উদ্বুদ্ধ হয়। তারা খামারে সারি সারি আপেল কূল গাছে ধোকায় ধোকায় ফুল শোভা পাচ্ছে। চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ভাল ফলন হবে বলে কৃষকরা আশা করছে। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করতে পারবে। জমিতে কূল গাছে ফুল দেখে কৃষকরা রীতিমত আনন্দে আতœহারা হয়ে গেছে। কৃষকরা আবাদি ও অনাবাদি জমিতে শাকসবজিসহ অন্যান্য ফসলের সাথে আপেল কূল চাষ করতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের এসএসিপি-রেইনস প্রকল্পের আওতায় কৃষকরা আপেল কূল চাষ করতে শুরু করেন। কুল চাষ করতে তেমন জমির প্রয়োজন হয় না। স্বল্প জমিতে উন্নত জাতের কূল গাছের চারা রোপন করার পর আগাছা পরিস্কার করলেই হয়। এতে তেমন খরচ হয় না। কৃষি বিভাগের পরামর্শে অনেক কৃষক আপেল কূল চাষ করেছে। চলতি বছর আপেল কূলের ব্যাপক ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

উপজেলার রণগোপালদী ইউনিয়নের সফল কৃষক শাহ আলম জোমাদ্দার খামারে বারোমাসি বিভিন্ন দেশী ও বিদেশী জাতের আম চাষ করে বাজিমাত করেছেন। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের সার্বিক সহযোগিতায় এবং এসএসিপি-রেইনস প্রকল্পের আওতায় তাকে বিভিন্ন জাতের আমের চারাসহ অন্যান্য উপকরন প্রদান করা হয়ে ছিল। বর্তমানে বাগানে আমসহ বিভিন্ন ফলের সমারোহ বিরাজ করছে। আম চাষ করে উপজেলার অনেক বেকার যুবক তাদের সংসারে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের দেখা পেয়েছেন। ফল হিসাবে চাহিদা প্রচুর থাকায় দিন দিন আমের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আম চাষ করে শৌখিন চাষী শাহ আলম বাজিমাত করে সাড়া ফেলেছে। কৃষক শাহ আলম তার বাগানে বিভিন্ন জাতের আম চাষ করেছেন। তার বাগানে দেশী ও বিদেশী প্রজাতির ৩৩ প্রকারের আম ছাড়াও আমরুপালি,বারি-৪ এবং বিদেশী জাতের মধ্যে কিউজাই,ব্যানানা ম্যাগো ও ব্লাকস্টোন অন্যতম। দক্ষিন রণগোপালদী গ্রামের এই সফল চাষি শাহ আলম জোমাদ্দার জানান,৫০ শতাংশ জমিতে ৭০টি চারা রোপন করেছি। বাগানে বারোমাসি আমসহ অন্যান্য ফলের সমারোহ বিরাজ করছে। বাগানের চারদিকে তাকালে শুধু ফল আর ফল। এই বছর প্রায় ২লক্ষ টাকার ফল বিক্রি হবে বলে আশা করছে। তিনি বলেন, এটি এমন একটি ফল যা থেকে অল্প সময়ে অধিক লাভবান হওয়া যায়। তেমন একটা খরচ এবং পরিশ্রম ছাড়াই জমিতে জৈব সার দিলে এর ফলনে লাভ বেশি হয়। এবার তিনি ৫০ শতাংশ জমিতে আমের চাষ করেছেন। আম একটি বিষমুক্ত ফল। অত্র উপজেলায় দিন দিন আমসহ বিভিন্ন ফলের চাষ বাড়ছে। উপকুলের মাটি ফল চাষের জন্য উপযোগী। সকল চাষিদেরকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। অত্র উপজেলায় ফল চাষে বিপ্লব ঘটবে বলে আশা করা যায়। উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ফলের বাগান ও কৃষি খামারের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। উপজেলায় কৃষি বান্ধব উদ্যোক্তা সমন্বিত কৃষি খামার করে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। এলাকার বেকার যুবকরা এখন কৃষি খামার গড়ে তুলতে আগ্রহী হয়ে উঠছে।

উপকূলীয় উপজেলা দশমিনার গ্রামীন জনপদ বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের গছানী গ্রামের কাজী আনিছ যুবকদের আইডল হিসাবে পরিচিতি লাভ করেছে। কৃষি ভিত্তিক বিভিন্ন সভা,সেমিনারে তার বক্তব্য শুনে সকলেই অভিভূত হয়ে যায়। কৃষিতে সফলতা অর্জন করায় জাতীয় পুরস্কারের পাশাপাশি অনেক পুরস্কার ও সম্মান অর্জন করেছেন যা অন্যান্য যুবকদেরকে উৎসাহিত করছে। কাজী কৃষি পার্কটি একটি মডেল খামার হিসাবে বিবেচিত হওয়ায় দেশ-বিদেশে এর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত তার খামারে গবেষক,শিক্ষার্থী ও দশনার্থীদের আনাগোনা বেড়েই চলছে। বর্তমানে তার বাগানে দৃষ্টিনন্দন সারি সারি ছোট বড় চায়না পাকা কমলা শোভা পাচ্ছে। এছাড়া খামারে মিশ্র ফলের মধ্যে দেশী বিদেশী বিভিন্ন প্রজাতির আম, কাঠাল, লিচু পেপে, কূল, পেয়ারা, মাল্টা, কলা চাষ করা হয়। খামারে ভার্মি কম্পোস্ট সার ব্যবহার করায় বিষ মুক্ত ফল উৎপন্ন হচ্ছে। বিষমুক্ত ফলের চাহিদা থাকায় বাজারে ভাল দাম পাওয়া যায়। খামারের এক জমিতে ভাল ফসল পাওয়ায় দ্বিগুন লাভে বিক্রি করতে পারছে।

এই বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. জাফর আহমেদ জানান,উপকুলের মাটি ফল চাষের জন্য উপযোগী। সকল চাষিদেরকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। অত্র উপজেলায় ফল চাষে বিপ্লব ঘটবে বলে আশা করা যায়।

‘সারাদেশ’ : আরও খবর

সম্প্রতি