পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌ-রুটে গত নয়দিনে সব মিলিয়ে কয়েক দফায় ৬২ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় পরিবহন শ্রমিক ও সাধারণ যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মাঝ নদীতে ফেরি নোঙর করে থাকার কারণে শিশু ও বয়স্করা বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এদিকে ঘন কুয়াশায় চলাচলের জন্য পতিত ফ্যাসিস্ট সরকারের কোটি টাকা দিয়ে কেনা ফগ লাইট কোন কাজেই আসছে না বলে জানা গেছে। সরকারের কোটি টাকা গচ্ছা গেলেও এ বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই কর্তৃপক্ষের। বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের ধারাবাহিক দুর্নীতির একটি এই নৌ-পথে নৌযানের জণ্য ফগ লাইট কেনার বিষয়।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লোকজনকে রাজধানীতে আসার জন্য দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া এবং শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ফেরিঘাট ব্যবহার করতে হয়। এসব নৌপথে ফেরির মাধ্যমে প্রতিদিন কয়েক হাজার গাড়ি ও মানুষ পারাপার হয়ে থাকে। শীত মৌসুমে ঘন কুয়াশার মধ্যেও যাতে ফেরি চলাচলে ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্য চার বছর আগে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০টি ফেরিতে উন্নত প্রযুক্তির ফগ লাইট লাগানো হয়েছিল। কিন্তু এসব ফগ লাইট এক টাকার কাজেও আসেনি। ফেরি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কোটি কোটি টাকার এসব ফগ লাইটের চেয়ে সাধারণ সার্চলাইট অনেক ভালো এবং যথেষ্ট কাজের। ঘন-কুয়াশায় নৌপথে চলাচলের জন্য পর্যাপ্ত আলো বা উন্নত প্রযুক্তির সুবিধা না থাকায় ঘন কুয়াশা পড়লেই রাতে আট থেকে নয় ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাট সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হঠাৎ করেই অক্টোবর মাসে ঘন কুয়াশার কারণে প্রায় ৮ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। এরপর চলতি মাসের ২১ ডিসেম্বর রাত থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে থাকে। এ কারণে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে মধ্যরাত হতে পরদিন সকাল পযর্ন্ত প্রায় ৮ ঘণ্টা ফেরি বন্ধ ছিল। একই কারণে, ২৪ ডিসেম্বর রাত হতে সকাল ৮টা পযর্ন্ত ৬ ঘণ্টা ও ২৭-৩০ ডিসেম্বর রাত হতে সকাল ৯টা পযর্ন্ত ৮/৯ ঘণ্টা করে এসব নৌপথে ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। এমনকি ৩১ ডিসেম্বর সকাল পর্যন্তও কুয়াশার কারণে ফেরী চলাচল বন্ধ ছিল। সব মিলিয়ে এই দুই নৌপথে কয়েক দফায় ৬২/৬৩ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। অথচ ঘণ কুয়াশায় ফেরী চলাচল অব্যাহত রাখতে পতিত ফ্যাসিস্ট সরকার পাচ কোটি টাকা ব্যায় দেখিয়ে ফগ লাইট কিনেছিল। কেনার পর হতেই যা অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
বিআইডব্লিউটিসির একটি সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের জুন মাসে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে দরপত্রের মাধ্যমে ১০টি ফেরিতে অধিক ক্ষমতা সম্পন্ন ফগ লাইট বসানো হয়েছিল। একেকটি ফগলাইট ৭ হাজার কিলোওয়াটের। এসব লাইট কিনতে একেকটির পেছনে ৫০ লাখ টাকার বেশি ব্যয় ধরা হয়। তখন বলা হয়েছিল লাইটগুলো যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এবং অনেক উন্নতমানের। এসব উন্নতমানের ফগ লাইট নয়টি রো-রো (বড়) এবং একটি কে-টাইপ (ছোট) ফেরিতে লাগানো হয়েছিল। অথচ কয়েক দিন যেতে না যেতেই অধিকাংশই অকেজো হয়ে যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বি আই ডব্লিউটিসির এক কর্মকর্তা বলেন, কয়েক বছর আগে ১০টি ফেরিতে কুয়াশায় ফেরি চলাচল অব্যাহত রাখতে ফগ লাইট স্থাপন করা হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য কয়েক দিন পরই সব ফেরির লাইট নষ্ট হয়ে যায়। বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও এখন পর্যন্ত সমাধান হয়নি। এছাড়া এই লাইট ভারীতো দূরের কথা মাঝারি কুয়াশার মধ্যেও চলাচল করা যায় না। এর চেয়ে পুরনো সার্চ লাইটগুলোই অনেক কার্যকর বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন।
এসব বিষয়ে জানতে বিআইডব্লিউটিসির আরিচা অঞ্চলের ডিজিএম আব্দুস সালাম বলেন, কুয়াশা একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এর মধ্যেই আমাদের অভিজ্ঞ মাষ্টারগন যথাসম্ভব চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন যাত্রী ও পরিবহন সেবার মান অব্যাহত রাখার জন্য। একান্তই বাধ্য না হলে মাষ্টারগন ফেরী বন্ধ করছেন না। তিনি আরও বলেন, ৯টি রো-রো ও এফটি কে-টাইপ ফেরিতে ফগ লাইট লাগানো হয়েছিল।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসির মেরিন ইনজিনিয়ার আব্দুল্লাহ বলেছেন, আমি এখানে একেবারেই নতুন। বিষয়টি নিয়ে আমার তেমন জানা নেই। এগুলোর দাম নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলতে পারবেন না বলে জানান। একই বিষয়ে তিনি আরও বলেন, আমি আমার বসের সাথে এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছি। তিনি আমাকে বললেন যে, সাংবাদিকদের সঠিক উপায়ে পিআরও এর সাথে যোগাযোগ করতে হবে। তাই পিআরওর কাছ থেকে আপনার যা জানা দরকার তা সংগ্রহ করুন। তাই বস আমাকে পরামর্শ দিয়েছেন, অফিসিয়াল ব্যক্তি ছাড়া কারো সঙ্গে নম্বর শেয়ার না করতে।
একই বিষয়ে বিআইডব্লিউটিসির পিআরও মো. নজরুল ইসলাম মিশা বলেছেন, বিগত সময়ে ১০টি ফগ লাইট কেনা হয়েছিল যে বিষয়টি নিয়ে দুদকে মামলা চলমান আছে এবং এই সংক্রান্ত ফাইলটি চীফ পার্সোনাল ম্যানেজারের নিকট রয়েছে বিধায় এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা সম্ভব হচ্ছে না। বিস্তারিত জানতে হলে চেয়ারম্যান স্যারের অনুমোদন নিয়ে ফাইল আনতে কয়েকদিন সময় লাগবে। এ বিষয়ে চীফ পার্সোনাল ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলা সম্বব হয়নি। একই বিষয়ে জানতে দুদকের পিআরও কে কল করলে তিনি কল রিসিভ করেননি।